ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চলচ্চিত্রের বাংলা নামকরণ বিষয়ক প্রজ্ঞাপন

সরকারী নির্দেশনা মানছেন না নির্মাতারা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৪ মে ২০১৫

সরকারী নির্দেশনা মানছেন না নির্মাতারা

সাজু আহমেদ ॥ সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত এবং আরিফিন শুভ ও মাহিয়া মাহি অভিনীত ‘ওয়ার্নিং’ চলচ্চিত্রটি গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি সেন্সরবোর্ড কর্তৃক ছাড়পত্র পেয়েছে অনন্য মামুন পরিচালিত এবং আনিসুর রহমান মিলন, মৌসুমী হামিদ ও ববি অভিনীত চলচ্চিত্র ‘ব্ল্যাকমেইল’। পাশাপাশি ইংরেজী নামে আরও একাধিক চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায়। এ অবস্থায় ইংরেজী নামে বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং মুক্তি দেয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা সত্বেও চলচ্চিত্রটিকে ছাড়পত্র দেয়া নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চলছে সমালোচনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার কারণে নির্মাতারা একের পর এক সরকারী নির্দেশ অমান্য করে ইংরেজী নামে বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং মুক্তি দিচ্ছে। সেন্সরবোর্ডও এ ক্ষেত্রে বিষয়টিকে চরম অবহেলা করছে বলে অভিযোগ করছেন চলচ্চিত্র দর্শক এবং বোদ্ধারা। অতি সত্বরই এ ধরণের অবস্থার অবসান চান তারা। জানা যায়, দেশের সর্বস্তরের বাংলাভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারী উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্প্রতি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চলচ্চিত্রের নামকরণের জন্য বাংলা ভাষাকে বাধ্যতামূলক করে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় চলচ্চিত্রের ইংরেজী নাম ব্যবহার করে চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ প্রজ্ঞাপনের পরেও সংশ্লিষ্টরা বিষয়টির তোয়াক্কা না করে একের পর এক ইংরেজী নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যাচ্ছেন। আবার সেন্সরবোর্ডও অবলীলায় তার ছাড়পত্র দিচ্ছে। সরকারী প্রজ্ঞাপন সত্ত্বেও এ বিধিনিষেধ চলচ্চিত্র নির্মাতারা লঙ্ঘন করেই চলেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছর আগস্টে বাংলা চলচ্চিত্র ইংরেজী নামকরণ নিরুৎসাহিত করতে তথ্য মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা জারি করে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমানে ঢালাওভাবে বাংলা চলচ্চিত্রে ইংরেজী নাম ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি হুমকিস্বরূপ। তাই বাংলা চলচ্চিত্রের নামের ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। অন্যদিকে সেন্সরবোর্ড নীতিমালা (এসআরও ১৯৮৫-এর ধারা ১-এর উপধারা) অনুযায়ী বাংলাদেশ বা এর জনগণের সমসাময়িক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রথা ও পোশাকের পরিপন্থী কোন বিষয় চলচ্চিত্রে থাকতে পারবে না। তারপরও দীর্ঘ দিন ধরে এই নীতিমালা নির্মাতারা উপেক্ষা করে চলেছেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি এবং সেন্সর নীতিমালা উপেক্ষা করেই নতুন বছরেও ইংরেজী নামকরণ নির্মিত বেশ কিছু চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এমনকি সিনিয়র পরিচালক এবং পরিচালক সমিতির নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান সর্বশেষ সম্প্রতি অবলা নারী ‘ওয়াও বেবি ওয়াও’ নামের একটি চলচ্চিত্রের শূটিং শুরু করেছেন। তেমনি শূটিং শুরু করেছে লড়াকু অভিনেতা রুবেল পরিচালিত ‘মিশন সিক্স’ নামের চলচ্চিত্রের কাজ। তাদের মত চলচ্চিত্র পরিচালকরাও যদি সরকারী এই প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি উপেক্ষা করেন তাহলে আর কে এই সরকারী বিধিনিষেধ মেনে চলবে। এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের। এ প্রসঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু তথ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তা সংশ্লিষ্টদের মানতে হবে। মানা না হলে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, প্রজ্ঞাপন জারির কিছুদিন পরপরই মুক্তি পায় অনিমেষ আইচ পরিচালিক ‘জিড়ো ডিগ্রী’, ইস্পাহানি আরিফ জাহান পরিচালিত ‘গু-া দ্যা টেরোরিস্ট’সহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র। এছাড়া চলতি বছর ইংরেজী নামে যে সব চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে যাচ্ছে তার মধ্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকির ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’, শামীম আহমেদ রনির ‘মেন্টাল’, ‘আশিকুর রহমানের ‘গ্যাং স্টার রিটার্ন’ ও ‘মিশন আমেরিকা’, তন্ময় তানসেনের ‘রান আউট’, ‘আলভী আহমেদের ‘ইউটার্ন’, সাইফ চন্দনের ‘টার্গেট’, অপূর্ব রানার ‘ইনোসেন্ট লাভ’, ইফতেখার আহমেদ ফাহমির ‘টু বি কন্টিনিউ’, ইফতেখার চৌধুরীর ‘এ্যাকশন জেসমিন’ এবং ‘ওয়ান ওয়ে’সহ আরও কিছু চলচ্চিত্র। এছাড়া সায়মন তারেক পরিচালিত ‘রোড নাম্বার সেভেন’ ‘ক্রাইম রোড’ নামের দুটি চলচ্চিত্রের শূটিং চলছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম চলচ্চিত্রের ইংরেজী নাম বাতিল করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রসঙ্গত, এদেশের টগবগে কয়েকজন তরুণ ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর অনৈতিক ও অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তাদের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য। সেই ভাষা আন্দোলনের রেশ ধরে স্বাধীনতাকামী উৎসাহী সর্বস্তরের জনতার তীব্র আন্দোলন আর সংগ্রামের মুখে, ৩০ লাখ মানুষের রক্ত আর দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের জন্ম হয়। সেই সময়ের আমাদের দেশের সেই তরুণদের ভাষার জন্য ত্যাগের মর্যাদা দিতে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে বর্তমানের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃতাধীন সরকারের সহযোগিতায় বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক করার আন্দোলনের গতি একটি ভিন্ন মাত্রা পায়। সর্বস্তরে মাতৃভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিশেষ তৎপর রয়েছে সরকার। এ জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে দুঃখের বিষয় সেই আন্দোলন সম্প্রতি যেন স্তিমিত হয়ে পড়েছে। মানা হচ্ছে না সরকারী কোন বিধি নিষেধ। বিলবোর্ড, বিভিন্ন অফিস আদালত, বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে দেদারছে ইংরেজী ভাষার যথেচ্ছ ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব উদ্যোগ মোটেও কাজে আসছে না সংশ্লিষ্টদের চরম উদাসীনতা আর অবজ্ঞা মূলক মনোভাবের কারণে। এই অবস্থার অবসান হওয়া উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
×