ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে ঝড়, বজ্র ও শিলাবৃষ্টি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৪ মে ২০১৫

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে ঝড়, বজ্র ও শিলাবৃষ্টি

সমুদ্র হক ॥ আবহাওয়ার স্বাভাবিক আচরণের ব্যত্যয় ঘটেছে। কেউ বলছেন, এটা জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। কারও মতে, সব কিছুর জন্য জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ী করা ঠিক নয়। গত ৩০ বছরের আবহাওয়ার গড় করে যে ফল বের হয় তা জলবায়ুর পরিবর্তন। এর বাইরে যা পরিবর্তন তা প্রকৃতির আবহাওয়াজনিত। সেই হিসাবে গত ক’বছর ধরেই প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর তা আরও বেশি। এই সময়টায় বৈশাখের মধ্যভাগ পার হয়ে যাওয়ার পরও গ্রীষ্মের সেই আবহাওয়া নেই। প্রকৃতি কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে রক্তিম আভা ছড়িয়েছে। তবে অতি গরমে হাপিত্যেশ নেই। উল্টো প্রায় প্রতিদিনই উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় ভোর হয় কুয়াশার আবরণে। সকালে মৃদু বৃষ্টি যেন মৃদু তুষারকণা। দুপুর গড়িয়ে রোদ ওঠে তবে তেজ নেই। হঠাৎ রোদ কিছুক্ষণের জন্য অতি মাত্রায় তাপ বিকিরণ করে উধাও। বর্তমানের হাইরাইজ ভবনের নীল রঙে কাঁচের (থাই গ্লাস হিসেবে অধিক পরিচিত) প্রতিচ্ছায়া রাস্তার ওপর পড়লে মনে হবে কি পরিমাণ তাপ বিকিরণ হচ্ছে। পরিবশেবিদরা এ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। বৈশাখে গ্রীষ্মকালীন তাপেরও একটা পরিবর্তন এসেছে। রাতের প্রথমার্ধে কিছুটা তাপ অনুভূত হয় তবে মধ্য রাতের পর তা মিলিয়ে যায়। শহরের বাসাবাড়িতে বৈদ্যুতিক পাখা যে হারে ঘূর্ণনের কথা তা ঘুরছে না। এতে অবশ্য মধ্যবিত্তের বিদ্যুতের সাশ্রয় হচ্ছে। গ্রীষ্মের আকাশে প্রতিদিন যে হারে মেঘ জমছে সেই হারে বৃষ্টি নেই। গত মাসে (এপ্রিল) ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় জলবায়ু বিষয়ক এক সেমিনারে যোগদানকারী বাংলাদেশের একজন পরিবেশবিদ মিডিয়া কর্মী জানালেন, জলবায়ুর গবেষকগণ এখন আকাশের মেঘমালা নিয়ে বেশি চিন্তিত। এ থেকে দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের নানা বিষয় বের হয়ে আসছে। যা আগামী পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত শঙ্কা ও ঝুঁকিপূর্ণ। কোন্ দুর্যোগ কোথা থেকে উৎপত্তি হবে তা তাৎক্ষণিক খুঁজে পাওয়ার যাবে না। বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার তারতম্য এবং সমুদ্রের গভীরের উচ্চ ও নি¤œচাপের বলয়ে যে সঙ্কেত দেয়া হয় তার পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। এই সঙ্কেতকে টু দ্য পয়েন্টে মেনে চললে দুর্যোগের কবল থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে বাস্তবতা হলো সর্বোচ্চ বিপদ সঙ্কেত (১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত) না হলে অন্য কোন সঙ্কেতকে (ইংরেজীতে সিগনাল) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমলে আনতে চায় না লোকজন। একজন জলবায়ু বিজ্ঞানী জানালেন, বর্তমানে বজ্রঝড় ও বিরূপ ঝড়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। একই হারে বেড়েছে বজ্রপাতের সংখ্যা। একবিংশ শতকের শুরু থেকে বজ্রপাতের হার এতটাই বেড়ে গেছে যা বিগত শতকগুলোর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এর অন্যতম কারণ হলো, পাহাড় বনায়নসহ নানা কারণে আকাশে মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে বেশি। মেঘমালার বৈশিষ্ট্য হলো বৃষ্টি ঝরানো। অর্থাৎ যত মেঘ তত বৃষ্টি। তৈরি হওয়া মেঘমালা যখন বৃষ্টি ঝরাতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তখনই স্বাভাবিক আচরণে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। একটা পর্যায়ে শিলাপাতের হার ও বজ্রপাত দুই-ই বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানের শিলাপাত লক্ষ্য করলে দেখা যায় রাতে শিলাপাত হচ্ছে বেশি। এই শিলের আকার অনেক বড়। একটা সময় ছোট ছোট শিলাপাত হয়ে রাস্তাঘাট যেভাবে ভরে থাকত বর্তমানে তা থাকে না। ভারি শিলাপাত বৃষ্টিকে কমিয়ে দেয়। আবার স্বল্প সময়ের ভারি বর্ষণের সঙ্গে যে ঝড় বইতে থাকেÑ তার বেগও অনেক বেশি। একজন আবহাওয়াবিদ জানালেন, এই ঝড়ের মতিগতি ঠিক থাকে না। নির্দিষ্ট বেগে ঝড় শুরু না হয়ে মাঝপথে কিছুক্ষণের জন্য হঠাৎ বেড়ে গিয়ে সব কিছুই এলোমেলো করে দেয়। অল্প সময়ের এই ঝড় না ঘূর্ণিঝড় না টর্নেডো। প্রকৃতির ঝড়ের নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছে। এই ঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে বেশি। ঝড়ের সঙ্গেই শুরু হয় বজ্রপাত। প্রকৃতির দুর্যোগের কোন মাত্রা কখন কিভাবে আঘাত করবে তা নিয়ে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা চিন্তিত। কিছুদিন আগে দক্ষিণ চীন সাগরে সৃষ্ট টাইফুন (আমাদের দেশের সাইক্লোনের মতো) অস্ট্রেলিয়ায় আঘাত করে ভয়াবহ ক্ষতি করেছে। এতকাল বিজ্ঞানীরা বলাবলি করেছেন আমেরিকায় সাধারণত টাইফুন বা সাইক্লোন হয় না। বছর তিনেক আগে সেই দেশে জলোচ্ছ্বাসে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ভয়াবহ ক্ষতি করেছে। ভারত মহাসাগরে ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের থাবা হালে এত বেশি হচ্ছে যা দুর্যোগের শঙ্কাকে দ্রুত কাছে টেনে আনছে। বর্তমানে আবহাওয়া বিভাগের সিগনাল ঘনঘন আসছে। একটা সময় আবহাওয়া বিভাগ ১০ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দিলে উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে ভীতিকর একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। বর্তমানে শুধু উপকূলীয় এলাকা নয়, মহাবিপদ সঙ্কেতে দেশের প্রতিটি এলাকার মানুষ শঙ্কিত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বর্তমানে বজ্রপাতের পরিমাণ ও ঝড়ের পরিবর্তিত অবস্থা যে হালে শুরু হয়েছে তা কখন কোন দুর্যোগ বয়ে আনে এ নিয়ে শঙ্কিত মানুষ।
×