ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশী সাহায্যের অর্থের হিসাব;###;চালু হয়েছে এইমস ওয়েবসাইট;###;১৭ দাতা সংস্থা এই সফটওয়্যার সিস্টেমে যুক্ত হয়েছে;###;সকল দাতাকে এই সিস্টেমে যুক্ত হতে ইআরডির চিঠি

জবাবদিহিতার আওতায় আসছে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৪ মে ২০১৫

জবাবদিহিতার আওতায় আসছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ পরিবর্তন আসছে বৈদেশিক সহায়তার হিসাব-নিকাশে। আগে সরকারী সহায়তার অংশ ছাড়াও বেসরকারী ও এনজিওদের মাধ্যমে প্রতিবছর বিপুল অর্থ বৈদেশিক সহায়তা এলেও এর কোন খবর জানত না কেউই। এমনকি সরকারের কোন সংস্থার কাছে এ বিষয়ে তথ্য ছিল না। কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) চালু করেছে এইড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এইমস)। ফলে বাংলাদেশে আসা বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ও ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য ও উপাত্তসমূহ এইমস ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে। বিভিন্ন দাতাসংস্থা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা, খাত বা অঞ্চল অনুযায়ী বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পসমূহের প্রতিশ্রুতি ও ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ এইমসের মাধ্যমে জানা যাবে। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ উভয়ই এ সিস্টেমের মাধ্যমে লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক মনে করছে এর ফলে শুধু স্বচ্ছতাই নয়, নিশ্চিত হবে জবাবদিহিতাও। অন্যদিকে, এইমস দেখ-ভাল এবং শক্তিশালী মনিটরিংয়ের জন্য যুক্ত করা হচ্ছে ইআরডির নতুন উইংয়ের সঙ্গে। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এ পদ্ধতির ফলে বৈদেশিক অর্থায়নের যে শুধু স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে তাই নয়, এর মধ্য দিয়ে জবাবদিহিতা, সমন্বয় এবং তথ্য প্রাপ্তি সহজতর হবে। তিনি বলেন, কিছু এইড আছে যেগুলো কোন হিসাবেই আসে না। সেগুলো হলো ডাইরেক্ট প্রজেক্ট এইড (ডিপিএ)। এ সহায়তা সরাসরি প্রকল্পের অধীনে দেয়া হয়ে থাকে। সেগুলোর বিষয়ে কেউ জানতেই পারে না। এখন আর সেটি থাকবে না। তাছাড়া এইমস চালু হওয়ার ফলে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যেও সমন্বয় আসবে। অর্থাৎ কোন ডোনার কোন খাতে কোথায় অর্থায়ন করছে, তা জানা থাকলে ডুপ্লিকেশন হবে না। সবাই এক জায়গা থেকে তথ্য পাবে। অন্যদিকে বর্তমানে এক মাসের ফরেন এইডের হিসাব পেতে দেখা যায় দীর্ঘ সময় লাগে। এই সফটওয়্যার চালু হওয়ায় তথ্যের দ্রুত প্রাপ্তিও নিশ্চিত হবে। সব দিক থেকে বলা যায়, এটি একটি ভাল উদ্যোগ। সূত্র জানায়, ইন্টারন্যাশনাল এইড ট্রান্সপারেন্সি ইনিসিয়েটিভের সদস্য বাংলাদেশ। তাছাড়া এ সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন। বাংলাদেশ ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ এ সংগঠনের সদস্যপদ লাভ করে। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে। সে কারণেই সারাবিশ্বের যে কোন দেশ থেকে যে সহায়তা আসে তার স্বচ্ছতার বিষয়ে তাগিদ দেয়া হচ্ছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতেই এইমস তৈরি করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, দিনে দিনে আমাদের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। তাছাড়া কাজের পরিধিও বাড়ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করতেই একটি নতুন উইং তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কাজের পরিধি বাড়বে এবং ইআরডি অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। আমরা আশাবাদী নতুন এ উইংটি বৈদেশিক অর্থ ব্যবস্থাপনা (এইমস-এর মাধ্যমে ) ও পলিসির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, এইমস চালু হওয়ায় এখন থেকে দাতাদের দেয়া সকল সহায়তার আর্থিক তথ্য থাকবে সরকারের হাতে। এজন্য এ সফটওয়্যার উদ্বোধন করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এইমস চালু হওয়ার ফলে বাংলাদেশে আসা বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ও ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য ও উপাত্তসমূহ এইমস ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে। বিভিন্ন দাতাসংস্থা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা, খাত বা অঞ্চল অনুযায়ী বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পসমূহের প্রতিশ্রুতি ও ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ এইমসের মাধ্যমে জানা যাবে। বাংলাদেশ সরকার ও দাতা সংস্থাসমূহ উভয়ই এ সিস্টেমের মাধ্যমে লাভবান হবে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে বিভিন্ন ধরনের এইমস সফটওয়্যার যেমন ডেভেলপমেন্ট এ্যাসিস্টেন্স এবং ডাটাবেজ (ডিএডি) এবং এইড ম্যানেজমেন্ট প্লাটফরম (এএমপি) ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ হচ্ছে খুবই স্বল্পসংখ্যক দেশগুলোর একটি যারা নিজেরাই তাদের দেশী লোকবলের মাধ্যমে এইমস সফটওয়্যারটি তৈরি করতে পেরেছে। সফটওয়ারটি খুবই সুলভ, টেকসই ও সহজে সংস্কারযোগ্য। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ স্ট্রেনদেনিং ক্যাপাসিটি ফর এইড এ্যাফেকটিভনেস ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের এ সফটওয়্যারটি তৈরি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার স্বার্থে ইন্টারন্যাশনাল এইড ট্রান্সপারেন্সি ইনিটিয়েটিভের কোডিং অনুসরণ করে এ সফটওয়্যারটি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দাতা সংস্থাসমূহ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময় করেই এ সফটওয়্যারটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এইমস উদ্বোধনের সময় বলেছিলেন, আমাদের সঞ্চয় ও প্রবাসী আয় বাড়লেও কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ বাড়েনি। রাজস্ব ঘাটতিও রয়েছে অনেকটাই। এজন্য মধ্য আয়ের দেশে যেতে হলে বিদেশী বিনিয়োগসহ অন্যান্য বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। এ সফটওয়্যারটি বৈদেশিক সহায়তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, এইমস এ তথ্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশে কর্মরত যে কোন দ্বিপাক্ষিক বা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাকে এইমসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সে লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত ১৭ দাতা সংস্থা এইমসে রেজিস্ট্র্রেশন করেছে। বাকিদের এইমসের সঙ্গে যুক্ত হতে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সংস্থাটি আশা করছে দ্রুত সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ এ সিস্টেমের আওতায় আসবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), ইউএনডিপি, ইউএসএইড, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ডিএফআইডি এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। ইতোমধ্যেই এইমস এ তথ্য সরবরাহ শুরু হয়েছে। ইআরডি আশা করছে বাকি উন্নয়ন সহযোগীরা অবিলম্বে এইমসে তথ্য প্রদানের কাজ শুরু করবে। ইআরডি বলছে, এইমস চালু হলে বৈদেশিক সহযোগিতার সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিশেষত বৈদেশিক সহায়তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং এর স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তাছাড়া আগামীতে দেশের জাতীয় বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহে এটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন সহযোগিতার প্রক্রিয়াকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে। সূত্র জানায়, এইমসের শক্তিশালী মনিটরিং এবং এটি দেখ-ভাল করতে তৈরি হতে যাওয়া ইআরডির নতুন উইংয়ে যুক্ত করা হচ্ছে এর কার্যক্রম। এ বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বর্তমানে বৈশ্বিক ক্ষেত্রে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে এসব মোকাবেলার জন্য আমাদের সক্ষম হতে হবে। সেজন্য নতুন একটি উইং খোলা হচ্ছে। নতুন উইং খোলার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত নতুন উইংয়ের নাম দেয়া হয়েছে পলিসি এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এ্যাফেকটিভনেস উইং। এটি তৈরি করা হবে বর্তমানে এইড এ্যাফেকটিভনেস ইউনিট এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকটি উইংয়ের কিছুকিছু অংশ নিয়ে। এটি খোলা হলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মোট উইংয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে দশটিতে, যা বর্তমানে রয়েছে ৯ উইং। ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যেতে হলে প্রচুর বৈদেশিক বিনিয়োগ দরকার। এক্ষেত্রে শুধু সফট লোন (সহজ শর্তের ঋণ) দিয়ে হবে না। দিনে দিনে সহজ শর্তের ঋণের বাইরে বাংলাদেশের অনমনীয় ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ছে। তাছাড়া চীন ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা ধরনের ঋণের বিষয়ে অফার আসছে। এসব দিক বিবেচনা করা, বিভিন্ন নীতিমালা ও ফ্রেমওয়ার্ক তৈরিসহ কাজের পরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। যা এখনকার যে অবস্থা আছে তা দিয়ে ভালভাবে করা যাচ্ছে না। ফলে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যই নতুন উইংয়ের প্রয়োজন। এসব দিক বিবেচনা করেই এ উইং করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে যে এইড এ্যাফেকটিভনেস ইউনিট আছে তা এতদিন ধরে চলছে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু যখন প্রকল্প শেষ হবে তখন কিভাবে এটির কার্যক্রম চলবে। তাছাড়া এখন নতুন নতুন কার্র্যক্রম বাড়ছে। এমডিজি শেষ হয়ে এসডিজি আসছে, নতুন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে এসব কিছু মিলে নতুন উইংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি ইইপি (ইকোনমিক পলিসি) অংশটিও দেখবে নতুন উইং।
×