ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে ॥ গবেষণা সংস্থা

উচ্চতা কমেছে এভারেস্টের

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৪ মে ২০১৫

উচ্চতা কমেছে এভারেস্টের

নেপালে ভূমিকম্পে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট অন্তত এক ইঞ্চি (২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার) নিচু হয়ে গেছে। ২৫ এপ্রিল ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ধারণকৃত স্যাটেলাইট তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটা মনে করছেন ভূবিজ্ঞানীরা। তারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের ফলে বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গটি অন্তত এক ইঞ্চি নিচু হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে রাজধানী কাঠমা-ুর উচ্চতা এক মিটার বেড়েছে। এদিকে ভূমিকম্পে মোরেইন ড্যামড হ্রদ দুর্বল হয়ে গেছে। এর ফলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে বলে অপর একদল বিজ্ঞানী রবিবার জানিয়েছেন। খবর হাফিংটন পোস্ট, সিবিএস নিউজ ও এনডিটিভির। ভূমিকম্পের পর ২৯ এপ্রিল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার চিত্র ধারণ শুরু করে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির স্যান্টিনেল ওয়ান-এ স্যাটেলাইট। এ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এভারেস্টের উচ্চতা কমে যাওয়ার কথা জানান বিজ্ঞানীরা। আর হঠাৎ করে উচ্চতা কমার কারণেই বেসক্যাম্পে ভয়াবহ তুষারধ্বস নেমেছিল বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান। যুক্তরাষ্ট্রের কো-অপারেটিভ ইনস্টিটিউট ফর রিসার্স ইন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের গবেষক এবং কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানের অধাপক রজার বিলহ্যাম বলেছেন, ভূমিকম্পের ফলে চারদিক থেকে প্রচ- চাপ সৃষ্টি হওয়ার ফলেই উচ্চতা কমে যেতে পারে। এই বিজ্ঞানীর অনুমান এভারেস্টের উচ্চতা এক অথবা ২ মিলিমিটার কমেছে। আর নেপালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের অনেক কাছে অবস্থিত অন্নপূর্ণা রেঞ্জ ২০ সেন্টিমিটার থেকে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত উঁচু হয়ে গেছে। জার্মান এরোস্পেস সেন্টারের এ সংক্রান্ত গবেষণায় বলা হয়েছে, অন্নপূর্ণা রেঞ্জ লম্বালম্বিভাবে ৩ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে গেছে। কাঠমান্ডুর আশপাশের ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫০ কিলোমিটার (৬০০০ বর্গকিলোমিটার) প্রস্থের ভূখে র উচ্চতা বেড়ে গেছে। এই উচ্চতা বৃদ্ধি কোন কোন স্থানে এক মিটার (তিন ফুট) পর্যন্ত হয়েছে। ‘সেন্টিনেল-ওয়ান এ’ এ যুক্ত থাকা রাডার ভূপৃষ্ঠের নড়াচড়া শনাক্ত করতে পারে। এটি কক্ষপথ থেকে পৃথিবীর যেসব ছবি তুলেছে, সেগুলো পর্যালোচনা করেছেন নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডের একদল গবেষক। তারা নেপালের গত শনিবারের ভূমিকম্পের আগের ও পরের ছবিগুলো তুলনা করেছেন। এসব ছবির সমন্বয়ে তৈরি একটি রঙিন নকশার মাধ্যমে তাঁরা ভূপৃষ্ঠের নির্দিষ্ট স্থানচ্যুতি তুলে ধরেছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা কমেটেরের গবেষক অধ্যাপক টিম রাইট জানান, আমাদের ইন্টারফেরোগ্রাম অনুযায়ী কাঠমান্ডুর উত্তর-পূর্ব দিকে ৩৪টি পরিবর্তন নজরে আসছে। যার অর্থ স্বাভাবিকের চেয়ে ভূমি অন্ততপক্ষে এক মিটার ওপরে উঠে এসেছে। স্যাটেলাইটের পাঠানো তথ্যে এটিও বোঝা যাচ্ছে, ৭.৮ মাত্রার ভূকম্প এবং কয়েক দফা পরাঘাতের পর এখনও ভূমিকম্পের ঝুঁকিমুক্ত নয় নেপাল। কাঠমা-ুভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্ট্রিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি) রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বরফ গলা ও মৌসুমী বৃষ্টিপাত শুরু হলে আর ভূমিধ্বস ও হিমবাহ হ্রদ থেকে পানি উপচে পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। আইসিআইএমওডির যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান এবং নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীরা এ তথ্য নেপাল সরকার এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোকে জানিয়েছে। আইসিআইএমওডি মূলত ভূমিধ্বস, হিমবাহ এবং নদীর গতিধারা পর্যবেক্ষণের কাজ করে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে কিছু পাহাড়ি ঢাল নড়ে যাওয়ায় আরও ভূমিধস হতে পারে। উদ্ধার তৎপরতা এবং ভবিষ্যত সম্ভাব্য বিপর্যয় নজরদারি করার জন্য বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নিরুপন করা প্রয়োজন।
×