ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বোকো হারামের নৃশংসতা

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৪ মে ২০১৫

বোকো হারামের নৃশংসতা

ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড, নারী ও বালিকা অপহরণ, যৌন সহিংসতা, শিশুদের মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে যোদ্ধা বানানো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসসহ আত্মঘাতী বোমা হামলার মতো যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে নাইজিরিয়াতে। তেল ও খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ আফ্রিকা মহাদেশের এই দেশটির উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে কথিত ‘শরিয়া আইনের শাসন’ চালু করেছে বোকো হারাম। যার অর্থ পশ্চিমা শিক্ষা নিষিদ্ধ। আফ্রিকার বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী জঙ্গী সংগঠন এটি। এরা ইতোমধ্যে বিশ্বের মূর্তিমান আতঙ্ক ইসলামিক স্টেট বা আইএস নামক শীর্ষ জঙ্গী সংগঠনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে। এদের নৃশংস জঙ্গী কর্মকা- প্রতিবেশী দেশ নাইজার, শাদ, ক্যামেরুনে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় ত্রিশ লাখ আফ্রিকান অধিবাসী এখন বোকো হারামের নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা, সহিংসতা, নাশকতার শিকার। এদের হাতে নাইজিরিয়াতে ২০১২ সাল হতে অদ্যাবধি ১৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বোকো হারামের জঙ্গী নেতাদের দাবি, অপহৃত বালিকারা যোদ্ধাদের স্বেচ্ছায় বিয়ে করে থাকে। কিন্তু বাস্তবে এরা সব সেনাদেরই ভোগ্যা। কোন অঞ্চল দখলকালেই জঙ্গীরা সেখানকার নারী ও বালিকাদের আলাদাভাবে জড়ো করে। তাদের বাড়ি বা কারাগারে প্রথমে রাখা হয়। পরে বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পে তাদের বিলিবণ্টন করা হয়। বালিকাদের গুলি ও বোমা ব্যবহার এবং গ্রামে হামলার কলাকৌশল প্রশিক্ষণ দিয়ে অপারেশনে পাঠানো হয়। আবার এদের দলগতভাবে ধর্ষণও করা হয়। এর মধ্যে ১০ বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। অনেকে গর্ভবতী হয়ে পড়ছে। ওদের খপ্পর হতে পালিয়ে আসা মেয়েদের অনেকে এমন বর্ণনাই দিয়েছেন। আধুনিক বিজ্ঞান ও শিক্ষার ঘোর বিরোধী বোকো হারাম ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মোহাম্মদ ইউসুফ। দেশটির খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক হামলা চালানো হয়। ২০১২ সালে ৬২০ জন, ২০১১ সালে ৪৫০ জন নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটায়। তেল ও খনিজ ক্ষেত্রগুলো তাদের প্রায় দখলে। আল কায়দা এবং আইএসের আদর্শ ও নীতি এরা অনুসরণ করে। ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল বোকো হারাম জঙ্গীরা দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এক স্কুলের ২৭৬ ছাত্রীকে অপহরণ করে। ঘটনাটি সারা বিশ্বে তোলপাড় তোলে। ব্যাপক প্রতিক্রিয়াও হয়। এদের মধ্যে ৫৭ জন পালাতে সক্ষম হয়। বাকি আটকদের জঙ্গী যোদ্ধাদের সঙ্গে বিয়ে দেয়া ও পাচার করা হয় বলে বোকো নেতারা দাবি করে। এদের উদ্ধার বা খোঁজ আজও মেলেনি। নাইজিরিয়ার সামরিক বাহিনী কদিন আগে বোকো হারামের বিরুদ্ধে অভিযানে সংরক্ষিত এক বনাঞ্চলে বোকোর কুখ্যাত ঘাঁটি থেকে ২শ’ বালিকা ও ৯৩ নারীকে উদ্ধার করেছে। জঙ্গীদের ৩টি ক্যাম্প ধ্বংসও করে। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রও উদ্ধার করেছে। বোকো হারাম নামক জঙ্গী সংগঠনটির লক্ষ্য বালিকা ও নারীদের অপহরণ এবং মানুষ হত্যা ও অনাচারের রাজত্ব কায়েম করা। এই জঙ্গীদের ও তাদের চেতনাধারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর সংঘবদ্ধ হওয়া জরুরী।
×