ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিজার্ভের অর্থপূর্ণ বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৪ মে ২০১৫

রিজার্ভের অর্থপূর্ণ বিনিয়োগ

ঠিক পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন (এক হাজার কোটি) ডলারের উপরে আট মাস ধরে টানা অবস্থান করছিল। এরকম অর্থনৈতিক দৃঢ়তায় প্রয়োজনে রিজার্ভ ভেঙ্গে বিনিয়োগ করার কথাটি উচ্চারণ করেছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর আতিউর রহমান। এ লক্ষ্যে ‘সভরেন ওয়েলথ ফান্ড’ বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছিল। পূর্ববর্তী গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে বলেছিলেন, রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগের জন্য রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ থেকে ২৮ বিলিয়ন ডলার হওয়াই যুক্তিযুক্ত। হিসাবটি আমাদের অর্থনীতিকে ভারতের অর্থনীতির দশ ভাগের এক ভাগ ধরে নিয়ে করা হয়েছিল। এখন অবশ্য আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে গেছে। পূর্বেকার অবস্থা থেকে নিঃসন্দেহে জোরালো। এ পর্যায়ে পুনরায় ওই রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ তহবিল গঠনের কথা তুলেছেন একই গবর্নর। প্রস্তাবিত ওই তহবিল অবকাঠামো খাতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিনিয়োগ করা হলে অর্থনীতিতে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। স্মরণ করা যেতে পারে ২০১১ সালে আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে এই সার্বভৌম তহবিল গঠনের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থা ভাল বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। ‘সভরেন ওয়েলথ ফান্ড’-এর ধারণা ও প্রয়োগ শতাব্দী প্রাচীন হলেও একাডেমিক দিক দিয়ে এই টার্মটি প্রথম ব্যবহার করা হয় মাত্র বছরদশেক আগে। দি সেন্ট্রাল ব্যাংকিং জার্নালে এ্যান্ড্রু রোজানভ ‘হু হোল্ডস দ্য ওয়েলথ অব নেশন্স’ শীর্ষক প্রবন্ধে এটির উল্লেখ করেন। অবশ্য তারও অর্ধদশক আগে থেকে বিশ্বে এই তহবিলের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এখন পর্যন্ত সার্বভৌম তহবিল গঠন করতে না পারলেও বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অর্ধশত দেশে এ ধরনের তহবিল রয়েছে। তবে চীনের তহবিলই সবচেয়ে বড়; যার আকার প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এ তহবিলের জন্যই চীন এখন বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অন্যতম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তহবিল আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের; যার পরিমাণ ১ লাখ ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। অন্য দেশগুলোর মধ্যে নরওয়ে, সৌদি আরব, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, হংকং, কানাডা, রাশিয়া, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের সার্বভৌম তহবিল রয়েছে। বলা দরকার এ ধরনের তহবিলের সামষ্টিক বা বাজেটীয় গুরুত্ব থাকে। এ তহবিল থেকে স্টক, ভূমি, মূল্যবান ধাতুর মতো খাঁটি ও আর্থিক সম্পদে বিনিয়োগ করা হয়। বেসরকারী পুঁজি তহবিলের মতো বিকল্প বিনিয়োগেও এ তহবিল ব্যবহার হয়। সেক্ষেত্রে বন্ড ছাড়তে হয়। ২০১২ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সার্বভৌম বন্ড ছাড়ার একটি উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার, যা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে বহির্বিশ্বে এ ধরনের অর্থপূর্ণ বিনিয়োগের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। সিঙ্গাপুরে জিআইসি ও তেমাসেক নামে দুটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল মাত্র এক বছরে রাষ্ট্রীয় সমর্থনপুষ্ট প্রতিষ্ঠান দেশটির প্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ ও ই-কমার্স খাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমরা মনে করি সার্বভৌম তহবিল থেকে আগামীতে সার্বভৌম বন্ড ছেড়েও অবকাঠামোগত বিনিয়োগের সমান্তরালে উৎপাদনশীল খাতে তাৎপর্যপূর্ণ বিনিয়োগ সম্ভব। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে চাহিদা সৃষ্টিকারী দেশীয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য উৎপাদন খাতে এ ধরনের বিনিয়োগ জাতীয় অর্থনীতির জন্য সুসংবাদ বয়ে আনতে পারে। এখন প্রয়োজন কেবল নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
×