ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুনতাসীর মামুন

আওয়ামী লীগ জিতলে গণতন্ত্র পরাজিত, আর বিএনপি জিতলে গণতন্ত্রের জয় !

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৪ মে ২০১৫

আওয়ামী লীগ জিতলে গণতন্ত্র পরাজিত, আর বিএনপি জিতলে গণতন্ত্রের জয় !

সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি নির্বাচনের পূর্বাপর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লেখক দেখিয়েছেন, দেশ এখন আওয়ামী-বিএনপি। দুই শিবিরে বিভক্ত। একে ঘিরে সুশীল সমাজ এবং মিডিয়ার ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। কেন এরকম হচ্ছে জানতে হলে ৩ মে’র পর আজ পড়ুন... এই মন ঔপনিবেশিকোত্তর দেশ মেনে নিয়েছে, কিন্তু সেই পাকিস্তানী উপনিবেশ বা মন-মানসের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। পারেনি দেখেই বিএনপির সৃষ্টি। পারেনি দেখেই ৪০ ভাগ মানুষ ১৯৭১-এর খুনীদের বা জামায়াত ও তাদের সমর্থক অর্থাৎ বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল ২০০১ সালে, যা এক জাতীয় কলঙ্ক। পৃথিবীর কোন দেশে এমন ঘটনা ঘটেনি। ২০০১ সালে প্রথম আলো বা ডেইলি স্টার কি শিরোনাম করেছিলÑ ১৯৭১-এর খুনীরা ক্ষমতায়, গণতন্ত্র আজ পরাজিত? বা স্রেফ খুনীরা এখন ক্ষমতায়? তখন সমকাল বা উল্লিখিত অন্য পত্রিকাগুলো প্রকাশিত হয়নি। উল্লেখ্য, তখনও জনকণ্ঠ এবং ভোরের কাগজ ঐ ছিনিয়ে নেয়া নির্বাচনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। ২০০১ সালে কী হয়েছিল, ১ মে’র জনকণ্ঠে শাহরিয়ার কবিরের লেখায় তার বিস্তারিত বর্ণনা আছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা-মন্ত্রী থেকে শুরু করে নেতাদের একটি বড় অংশ কিন্তু ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর ভক্ত, জনকণ্ঠ বা ভোরের কাগজের নয়। এমনকি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও নন। তথ্য মন্ত্রণালয় প্রদত্ত আনুকূল্য কারা পান, সেটির হিসেব নিন। আগের তথ্যমন্ত্রীর আমলেও অবস্থা তথৈবচ ছিল। গোলাপী নেশায় প্রধানমন্ত্রীর অনেক পার্শ্বচরও আক্রান্ত না হলে ঐ যে নববর্ষের মতো বিনিময় সভার কথা বললাম, সেখানে শ্যামল দত্ত ঐ প্রসঙ্গ ওঠাতেন না বা অধিকাংশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা সমর্থন করতেন না। ॥ ৩ ॥ মিডিয়ার একটি বড় অংশ যে খালেদার ডিকটাট অনুসরণ করবে, তা নির্বাচনের আগেই বোঝা যাচ্ছিল বা আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। ৯২ দিন বাংলাদেশ অবরোধের পর খালেদা ঘোষণা করলেন, তিনি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাবেন। তার ট্রেডমার্ক গোলাপী শাড়ি পরে সুসজ্জিত হয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন। কোন সাংবাদিকের মুরোদ হলো না তাকে জিজ্ঞেস করার যে, ৯২ দিনে ১০০-এর বেশি শিশু-যুবক-বৃদ্ধ পোড়াবার যে হুকুম দিলেন, তার দায় কে নেবে? ৯২ দিন যে হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হলো তার দায় কে নেবে? না, একটি প্রশ্নও না। এই প্রশ্নও কেউ করলেন না যে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে এই সরকারের অধীনে যে নির্বাচনে যাবেন না বলেছিলেন এবং যে কারণে ৯২ দিন অবরোধ-হরতাল, সেই নির্বাচন কমিশন বা সরকারের অধীনে নির্বাচনে কেন যাচ্ছেন? তাহলে যেসব অভিযোগের ভিত্তিতে এত আন্দোলন [অর্থাৎ সন্ত্রাস] তার যৌক্তিকতা কি ছিল? কেউ এসব প্রশ্ন করেননি। বরং কী উচ্ছ্বাস পত্রপত্রিকা বা টিভির! ৯২ দিনের সন্ত্রাস যেন গণতান্ত্রিক কার্যকলাপ। তাই যদি হয়, তাহলে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যে অনিয়ম হয়েছে [ব্যালটে সিল দেয়া, মারপিট, হৈ-হল্লা], তা গণতান্ত্রিক বলে বিবেচিত হবে না কেন? মৃত পুত্রের জন্য একফোঁটা চোখের পানি ফেলে আবারও সেই গোলাপী শাড়ি পরে যখন তিনি মার্কেটে গেলেন বিরাট গাড়ির বহর নিয়ে, তখনও কী উচ্ছ্বাস মিডিয়ার। তিনি লিফলেট বিলি করছেন, মুখে মধুর হাসি। একদঙ্গল সাংবাদিক পিছে পিছে। কেউ জিজ্ঞেস করেননি, এই গরিব দোকানদারগুলোর পেটে লাথি মেরে যে এতদিন নিজে ভোগ করলেন, তার জবাব কি? এদের কাছে ভোট চাইছেন কিভাবে, যেখানে ৯২ দিন যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন এদের বিরুদ্ধে? কোন বাপের বেটা ছিল না সেখানে, যার মুরোদ ছিল সে প্রশ্ন করার। সামান্য সময়ের এই স্টান্টবাজির পর তার গাড়িতে ঢিল পাটকেল ছোড়া হয়, লাঠি দিয়ে কাঁচ ভাঙ্গা হয়। একই রুটিন ছিল তিনদিন। এই তিনদিন সংবাদপত্র ও টিভিতে ব্যাপকভাবে তা প্রচারিত হয় গণতন্ত্রের ওপর হামলা হিসেবে। ৯২ দিনের হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ এভাবে আড়াল করে দেয়া হয়! খালেদারা বার বার দাবি করেন সামরিক বাহিনী নামাবার। প্রৌঢ় নির্বাচন কমিশনাররা গোলাপী নেশায় একবার তাতে রাজিও হয়ে গেলেন। পরে খোঁয়াড়ি কেটে গেলে সে আদেশ সংশোধন করেন। সবাই জানল ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্তদের সংগঠন। তারা গণতন্ত্রের নায়িকাকে হত্যা করতে উদ্যত। আর শেখ হাসিনার হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। শেখ হাসিনা জানালেন, খালেদার রক্ষীরা গুলি ছুড়েছিলেন, তাই পাল্টা আক্রমণ। আরও পরে জানালেন, গাড়ি বহরে মানুষ চাপা পড়েছে, এটি নির্বাচনী কানুনের বরখেলাপ। কে শোনে কার কথা। এরপর শেখ হাসিনা বাধ্য হলেন সংবাদ সম্মেলন করে ঐসব ঘটনার ছবি দেখাতে। পরদিন সেই সংবাদ গুরুত্ব পেল না এবং কোন পত্রিকা, আবারও বলছি কোন পত্রিকা সেই সব ছবি ছাপেনি। খালেদার রক্ষীরা গুলি ছুড়েছে ও তার গাড়ির নিচে মানুষ চাপা পড়েছেÑ এই ছবিগুলো দৈনিক জনকণ্ঠ ছোট আকারে শেষ পৃষ্ঠায় ছেপেছে। যেন বাধ্য হয়েছে, তবুও ছেপেছে, আর দৈনিক কালের কণ্ঠ একটি ছবি ছেপেছে ভেতরের পাতায় ছোট আকারে। মতিউর রহমান ও মাহফুজ আনাম সাংবাদিক হিসেবে এখন অগ্রণী। ভারসাম্যপূর্ণ সংবাদের খাতিরে এইসব ছবি ছাপা উচিত ছিল কিনা, সে প্রশ্ন রইল। ফোনে জিজ্ঞেস করা যেত, কিন্তু তারা আমাদের ফোন ধরবেন না ব্যস্ত বলে। গোলাম সারওয়ারকে সেদিন দেখলাম শেখ হাসিনার পাশে বসে আছেন। সরকার তাকে সবচেয়ে আপনজন মনে করে, তিনিও কিন্তু সে ছবি ছাপেননি। ছেপেছেন তোয়াব খান ও স্বদেশ রায়, যারা গণভবনে হয়ত কালেভদ্রে আমন্ত্রণ পান ২০০ লোকের সঙ্গে। এ ছবিগুলো ভালভাবে ছাপা হলে নাগরিকরা জানতেন, খালেদা জিয়া কিভাবে নির্বাচনবিধি ভাঙছেন। কিভাবে তার রক্ষীরা গুলি ছুড়ছে। কিভাবে বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের কারণে গাড়ির চাকার নিচে মানুষ আহত হচ্ছে। এ গেল একদিক। অন্যদিক পর্যালোচনা করা যাক। এই ছবিগুলো কি সরকার পক্ষের কেউ তুলে ধরেছিলেন? প্রধানমন্ত্রীর অধীনে একটি তথ্য মন্ত্রণালয় আছে, যার প্রধান জনাব হাসানুল হক ইনু। সেই তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারের কথা ও ইমেজ তুলে ধরার জন্য কয়েক হাজার কর্মচারী-কর্মকর্তা আছেন। তারা এটা প্রচার করলেন না কেন? প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা, তথ্য সচিব এবং তাদের অধীনস্থ ডজনখানেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। তাদের প্রধান এবং একমাত্র কাজ ছিল, এই ছবি মিডিয়ার সর্বত্র সরবরাহ করা, তাদের অনুরোধ করা সেটি ছাপার জন্য, প্রকৃত কাহিনী তুলে ধরার জন্য বা যারা পত্রিকায় লেখালেখি করেন, তাদের আসল খবরটা জানাবার ব্যবস্থা করা। করেননি। হতে পারে, তারাও গোলাপী নেশায় আচ্ছন্ন। হয়তবা তাদের সঙ্গেও হেজাবিদের একটা যোগাযোগ আছে। যোগাযোগ রাখা হয়েছে, যদি শেখ হাসিনা না থাকেন। হয়তবা তারা যোগ্য নন এইসব পদের। হয়ত বা তারা এসব কেয়ারই করেন না ধান্ধাবাজি ছাড়া। আমার এসব লেখায় কিছু হবে না শত্রু বৃদ্ধি ছাড়া। তারা তাদের জায়গায়ই থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীও তাদের কাছে এ বিষয়ে কৈফিয়তও চাইবেন না, তা জানি। কিন্তু এতে যে তার বড় ধরনের ক্ষতি হলো, তার কাফফারা কে দেবে? সেটি দেবেন শাহরিয়ার কবির, স্বদেশ রায় বা শ্যামল দত্ত। তারা আছেনই তো সে জন্য। এইবার আসা যাক নির্বাচন প্রসঙ্গে। এই নির্বাচনকে কি একক বা ইউনিক কোন বা নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করব, নাকি ইতিহাসের পরম্পরায় বিচার করব? বাংলাদেশে রাজনীতির মূল সঙ্কটই হচ্ছে স্বচ্ছ নির্বাচন। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর থেকে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে হৈ হট্টগোল হচ্ছেই। ভারত নির্বাচনী একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পেরেছে, যা সবাই মেনে নিয়েছে। তারপরও নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই, হৈ-হাঙ্গামা, খুন হওয়া বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই বলে কি ভারতের সম্পূর্ণ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে? বাতিল বা বর্জনের প্রশ্ন আসে? গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের পৌর নির্বাচনে হৈ-হাঙ্গামা-খুন সবই হয়েছে। সেই নির্বাচন কি বাতিল হয়েছে, না তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হচ্ছে? শ্রীলঙ্কায়? পাকিস্তানে? বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে ১৯৭৫ সালের পর থেকে কেউ একমত হননি। কোন রাজনৈতিক দলই ঐকমত্যে পৌঁছায়নি। তারপরও বলব, নির্বাচন কমিশন মেনে নেয়াটা সংস্কৃতির অন্তর্গত হচ্ছে। সুযোগ্য নির্বাচন কমিশনাররা এক সময় এলে হয়ত এর প্রতি আস্থা বাড়বে। আরেকটি ইতিবাচক বিষয় হলো, এত হৈ-হাঙ্গামার পরও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়াটাও মেনে নেয়া হচ্ছে বা স্বাভাবিক পন্থা বলে স্বীকৃত হচ্ছে। জিয়াউর রহমান বিএনপির জনক। রক্তাক্ত প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দখলের পর ৩০ মে ১৯৭৭ সালে আইয়ুবী কায়দায় তিনি রেফারেনডাম করেছিলেন। ভোটারদের কাছে জিজ্ঞাস্য ছিল, জিয়া যে নীতি ও পরিকল্পনা নিয়েছেন, তাতে তাদের আস্থা আছে কিনা? রেজিস্ট্রিকৃত ভোটারদের মধ্যে ৮৮.০৫% ভাগ ভোট প্রদান করে এবং ৯৮.৮৮ ভাগ ভোট হ্যাঁ-সূচক হয়। এত ভোট পাওয়ায় শোনা যায়, জিয়া নিজে বিব্রত হয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পারেননি, আমলারা এত উৎসাহ ভরে ভোটের কারচুপি করবে। কারচুপি করার অলিখিত নির্দেশ ছিল, কিন্তু এতটা কারচুপি করার নয়। বাংলাদেশে নির্বাচনে কারচুপি সেই থেকে শুরু হলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার সময় ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে রেজিস্ট্রিকৃত ভোটারদের মধ্যে ভোট প্রদান করে ৫৫.৬২%, ১৯৭০ সালে ৫৫.০৯%। ক্ষমতা বৈধকরণে জেনারেল জিয়া ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। সেনাপ্রধান থেকেই তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেন, যা আর্মি এ্যাক্ট বা নির্বাচনী আইন অনুযায়ী বিধেয় নয়। কারফিউ বলবৎ ছিল রাত ১১.৩০ থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত। সরকারী খরচে জিয়া নির্বাচনী প্রচারণা চালান। ১৯৭৫ সালে তাকে সহায়তাকারী জেনারেল ওসমানীর সম্বল ছিল একটি পুরনো জিপ। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছে করে সম্পূর্ণ ভোটার তালিকার দাম এমন রেখেছিল যে, ওসমানীর পক্ষে সম্পূর্ণ ভোটার তালিকা সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। ৫৩.৫৪ ভাগ রেজিস্টার্ড ভোটারের মধ্যে ৭৬.৩৩ ভাগ ভোট পেয়ে বিজয়ী হলেন। গণতন্ত্রের মৃত শবে এভাবে জিয়া ঝকমকে উর্দি পরাতে সম্ভব হলেন। ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচন হলো। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত জিয়া সামরিক আইন বলবৎ রাখলেন। ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ২০০০-এর বেশি প্রার্থী। ভোট পড়ে রেজেস্ট্রিকৃত ভোটের ৫০.৯৪ ভাগ। বিএনপি পায় ৪১.১৩ ভাগ এবং ২০৭টি আসন। বিরোধী দল কারচুপির অভিযোগ তোলে। কৌতূহলের বিষয় এই যে, যেসব সামরিক অফিসার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা নির্বাচনে জয়লাভ করেন। অন্যদিকে, বিরোধী দলের হয়ে যারা দাঁড়িয়েছিলেন, তারা পরাজিত হন। যেমন, আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান। তাকে প্রথমে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। পরে দেখা গেল তিনি পরাজিত। জিয়াউর রহমান যা করেছিলেন, তা’হলোÑ ১.সমাজে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং বিপক্ষের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করা এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করা। পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। ২.জাতীয়তাকে দ্বিখ-িত করা, যার ভিত্তি ছিল ৩০ লাখেরও বেশি শহীদ ও ৬ লাখেরও বেশি নির্যাতিত নারী। জাতিকে দুটি বিবদমান পক্ষে রূপান্তরিত করা, যার ফল এখনও আমরা ভোগ করছি। ৩. রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রধান মেরুকরণ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধিতা এবং শেষোক্ত রাজনীতির ধারাকে শক্তিশালী করা। বাংলাদেশের রাজনীতির এখন মূলত দুটি ধারা। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধিতাকারী, অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত ও এক পয়সা দু’পয়সার ডান ও বাম দলগুলো। এই ধারাকে জিয়া শক্তিশালী করেছিলেন বিভিন্ন আনুকূল্য দিয়ে। ম্যাসকারেনহাস লিখেছিলেন, ঐ সময় অভূতপূর্ব দুর্নীতি হয়েছে, যা সমাজের তন্তু বিনাশ করেছে। আজকের সংবাদপত্র বা মিডিয়ার মালিকদের উত্থান সেই সময়। ম্যাসকারেনহাস লিখেছিলেনÑ ‘পড়ৎৎঁঢ়ঃরড়হ ড়ভ ধ শরহফ যরঃযবৎঃড় ঁহযবধৎফ ড়ভ রহ ইধহমষধফবংয ধঃব ফববঢ়ষু ধহফ রৎৎবাবৎংরনষু রহঃড় ঃযব ংড়পরধষ ভধনৎরপ ধহফ বাবৎুযিবৎব ঃযবৎব ধিং ধ ঢ়ধষঢ়ধনষব ঁহফবৎপঁৎৎবহঃ ড়ভ ারড়ষবহপব.’ ৪. সিভিল সমাজের বিপরীতে সামরিক সমাজকে শক্তিশালী ও আধিপত্যকারী শক্তি হিসেবে বিকশিত করার প্রক্রিয়া গ্রহণ, এই ধারা এখনও বলবৎ। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের যা ক্ষতি করেছেন, তা আর কেউ করেননি। বাংলাদেশের যা কিছু অশুভ তার প্রতীক জিয়াউর রহমান ও গোলাম আযম। কোন সাংবাদিক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়ভাজন উপদেষ্টা/মন্ত্রী/সম্পাদক/লাইসেন্স পাওয়া টিভি মালিকরা বা উল্লিখিত সম্পাদকরা কি এসব বিষয় কখনও তুলে ধরেছেন যে, বিএনপি ও জামায়াত অশুভ রাজনীতির প্রতীক? পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগকে যেভাবে শত্রু বিবেচনা করা হয়েছিল, জিয়াউর রহমানও সেই একই কাজ করলেন অর্থাৎ ১৯৪৭-এর সঙ্গে ১৯৭৫ কে যোগ করলেন। (সমাপ্ত)
×