ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সবার উপরে তামিম

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৩ মে ২০১৫

ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সবার উপরে তামিম

স্পোর্টস রিপোর্টার, খুলনা থেকে ॥ দুরুদুরু বুক। কাঁপছে পুরো শরীর। শিহরণ জাগাচ্ছে শরীরের প্রতিটি পশমে। আর মাত্র ৫ রান বাকি। বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবালের ডাবল সেঞ্চুরি উদযাপন করতে পুরো জাতি অপেক্ষায়। হঠাৎ এমন সময়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দিলেন তামিম! ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেললেন। সে কী আনন্দ। পুরো খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম যেন ‘তামিম, তামিম’ রবে কেঁপে উঠল। প্রথমবারের মতো দেশের মাটিতে দেশের মানুষ যে দেশের কোন ক্রিকেটারের ডাবল শতক দেখতে পেলেন। দুই বছর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে মুশফিকুর রহীমের করা প্রথম ডাবল (২০০ রান) শতকের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম ডাবল শতক করলেন। শেষপর্যন্ত যখন ২৭৮ বলে ১৭ চার ও ৭ ছক্কায় ২০৬ রান করে আউট হলেন তামিম, ততক্ষণে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রানও হয়ে গেল তামিমের। এখন সবার উপরে আছেন তামিম। টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েও বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করলেন তিনি। শুধু কী এক ইনিংসে সবচেয়ে বড় ইনিংসটিই তামিমের দখলে, টেস্টে সবচেয়ে বেশি শতকও এখন তামিমের দখলে। এর আগে মোহাম্মদ আশরাফুল সর্বাধিক ৬টি শতক করেছিলেন। তামিম চতুর্থ দিনেই আশরাফুলকে পেছনে ফেলে ক্যারিয়ারের সপ্তম শতক তুলে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে টানা তিন টেস্টে শতকও হাঁকিয়েছেন। বিশ্ব ক্রিকেটে এর আগে গ্যারি সোবার্স, সুনীল গাভাস্কার, ব্রায়ান লারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, রিকি পন্টিং, মোহাম্মদ ইউসুফ, বীরেন্দর শেবাগ, কুমার সাঙ্গাকারা, জ্যাক ক্যালিস, ইউনুস খান, মোহাম্মদ হাফিজসহ ৫০ জনেরও বেশি টেস্টে টানা তিন ম্যাচে শতক করেন। সেই তালিকায় তামিমও যুক্ত হয়ে গেলেন। তবে বাংলাদেশের হয়ে টানা দুই টেস্টে শতক করা মুমিনুল হক, খুলনা টেস্টে শতক করে টানা দুই ম্যাচে শতক করার গৌরব অর্জন করা ইমরুল কায়েসকে পেছনে ফেলে তামিম এখন টানা সেঞ্চুরি করার দিক দিয়েও সবার উপরেই আছেন। তামিম শেষপর্যন্ত পারবেন ডাবল শতকের মাইলফলকে পৌঁছতে? যখন তামিম ১৯০ রানের ঘরে তখন প্রতিটি বলেই যেন এ প্রশ্ন উঠেছে। জুনায়েদ খান বল ছুড়লেন। ১৯৫ রানের সময় তামিম একধাপ এগিয়ে গিয়ে এমন এক শটই খেললেন, জুনায়েদের মাথার উপর দিয়ে সরাসরি বল গিয়ে বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমের সামনে বাউন্ডারি অতিক্রম করল। সঙ্গে সঙ্গে তামিম এক হাতে ব্যাট, আরেক হাতে হেলমেট উঁচিয়ে ধরলেন। ডাবল শতক হয়ে গেল তামিমের। খুলনা স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রত্যেকেই দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকলেন। খুলনা টেস্ট বাঁচানোর মহানায়ককে সবাই যেন ‘স্যালুট’ও দিতে চাইলেন। শেষপর্যন্ত যখন তামিম ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলে ২০৬ রান করে স্টেডিয়াম থেকে সাজঘরে ফিরছেন তখনও পুরো স্টেডিয়ামের দর্শক দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকলেন। চতুর্থ দিন যখন ১৩৮ রান করে সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন, তখন এর আগে ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে করা ক্যারিয়ার সেরা ১৫১ রান করা বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল জানিয়ে দিয়েছেন, সদ্যপ্রয়াত ফুফুকে শতক উৎসর্গ করেছেন। খুলনা টেস্টের পঞ্চম দিনে ডাবল শতকই করে ফেলেছেন তামিম! খুলনা টেস্টে বাংলাদেশ ব্যাকফুটেই ছিল। পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানে এগিয়ে যাওয়ায় ম্যাচ বাঁচানো নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। যদি বাংলাদেশ ইনিংসে ছন্দপতন ঘটে। তাহলেই সব আশা শেষ হয়ে যাবে। ড্র করার আশাও শেষ হবে। কিন্তু শুরু থেকেই তামিম এত মারমুখী হয়ে খেলেন যে দলের আত্মবিশ্বাসই বেড়ে যায়। দ্রুত ৬৩ বলে যে ৫০ রান করে তামিম, তাতে ৭টি চারের মার ছিল। সেখান থেকে ১২৩ বলে শতক করে ফেলেন তামিম। এ শতক করতে ১১টি চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকান। এগিয়ে যেতে চতুর্থ দিন শেষে ১৫০ রান করতে তামিমের ১২ রানের দরকার ছিল। ২০২ বলে ১৫০ রানও করে ফেলেন তামিম। ইমরুলকে সঙ্গে নিয়ে তামিম এগিয়েই যেতে থাকেন। দু’জন মিলে ৩০০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। একটা সময় ১৫০ রান করে ইমরুল আউট হলেও তামিম উইকেট আঁকড়ে থাকেন। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। সুযোগ পেলেই ছক্কা-বাউন্ডারি হাঁকাতেও থাকেন। এরকম করতে করতে একটা সময় গিয়ে সেই সুখের সময়টি এসে পড়ে। ২৬৪ বলে গিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েই তামিম ২০০ রান পূর্ণ করেন। ১৭টি চার ও ৭টি ছক্কা হাঁকিয়ে তামিম ডাবল শতক করেন। তার এ ইনিংসে দলও ম্যাচ হার থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্টে হারেনি বাংলাদেশ। ড্র’ও করেছে। অসাধারণ এক ইনিংস খেলে সবার উপরেও উঠে গেছেন তামিম।
×