ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপির বর্জন ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৩ মে ২০১৫

ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপির বর্জন ॥ নাসিম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগের পাঁচটি নির্বাচনে হার থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার পরিকল্পিত ও ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে ভোট বর্জন করে। তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিল, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কিন্তু এ ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হয়েছে, মানুষ ভোট দিয়েছে। এর আগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারে নেমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘিœত করার ষড়যন্ত্র করেও সফল হননি। শনিবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক শেষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তবে বৈঠকে তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে জোটের প্রার্থীদের অবমূল্যায়ন ও সমর্থন না দেয়ায় প্রকাশ্য ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শরিক দলের নেতারা। মতভেদের কারণে শনিবারের বৈঠকে যোগ দেয়নি অন্যতম শরিক জাসদের কোন প্রতিনিধি। সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচনে একক প্রার্থী সমর্থন প্রশ্নে আগে থেকেই আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল জাসদসহ কয়েকটি শরিক দলের নেতারা। কয়েকজন যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতা কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের সমর্থন পায়নি তারা। একটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীর মধ্যে ভোট কাটাকাটির সুযোগে সেখানে বিএনপি প্রার্থী জিতে গেছেন। এ বিষয়টি উল্লেখ করে শনিবারের বৈঠকেও শরিক দলের নেতারা ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা উত্তরের একটি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে তাদের প্রার্থী ভাল অবস্থানে থাকলেও ১৪ দলের সমর্থন পাননি। ফলে আওয়ামী লীগ ও আমাদের পার্টির প্রার্থীর মধ্যে ভোট কাটাকাটি হয়েছে, জিতেছে বিএনপির প্রার্থী। এভাবে এককভাবে চললে তো হবে না। ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক ১৪ দলের আগের বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ জানান। তিনি বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ১৪ দলীয় ঐক্যকে বিস্তৃত ও শক্তিশালী করতে হবে। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ নাসিম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘসহ বিদেশী কূটনীতিকরা যা বলছেন তা তাদের ‘রুটিন ওয়ার্ক’ আখ্যায়িত করে বলেন, বিএনপির নির্বাচন বর্জনে কূটনীতিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আগের পাঁচটি সিটি নির্বাচনে হার থেকে শিক্ষা নিয়ে, ভুল সংশোধন করে পরিকল্পিতভাবে মাঠে নামায় এবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর জয় হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই ২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এ নির্বাচনেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে আমরা বিজয়ী হব। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই আমরা এখন কাজ করছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে তিন মাস ধরে বিএনপি দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। এর জবাব জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে দিয়েছে। খালেদা জিয়া ভুল থেকে কখনই শিক্ষা নেন না। এ জন্য আজ তাঁর এই দূরবস্থা। ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের কোমরে কতটা জোর আছে তা দেখা হবে’ মর্মে সম্প্রতি বিএনপি নেতা হান্নান শাহ’র বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারের কোমরে কত জোর আছে তা সবাই জানে। ওদের (বিএনপির) কোমর কত জোর আছে সেটাই আমরা দেখতে চাই। তাদের কোমর সোজা করতে বলুন। আমাদের কোমর সোজা আছে। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারির সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলে সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, গণতন্ত্রী পার্টির নূরুর রহমান সেলিম, শাহাদত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, আওয়ামী লীগের মুকুল বোস, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বদিউজ্জামান ভুইয়া ডাবলু, আফজাল হোসেন, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ। বৈঠকের শুরুতেই ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ সদ্য সমাপ্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচিত তিন মেয়রকে অভিনন্দন জানান। নির্বাচন দেখিয়েছে বাংলার মাটিতে মানুষ হত্যার রাজনীতির স্থান নেই ॥ স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, হানাহানি ও রক্তপাতহীন এ নির্বাচন বিশ্বে দেশে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের মডেল হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে বিতর্কিত ও ভ-ুল করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে যৌক্তিক ইস্যু ছাড়াই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে বিএনপি প্রমাণ করেছে নির্বাচন বর্জন তাদের পূর্বপরিকল্পিত। তাদের সকল ষড়যন্ত্র জনগণ ভ-ুল করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সিটি নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে বাংলার মাটিতে মানুষ হত্যাকারী বোমাবাজির রাজনীতির কোন স্থান নেই। শনিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ সার্কিট হাউসে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাসিম এ কথা বলেন। আগামী ৮ মে জেলার শাহজাদপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সফল করার লক্ষ্যে এ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ফলপ্রসূ এবং উৎসবমুখর করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী ওয়াদা ছিল শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। ৮ মে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজাদপুরে আসছেন। মন্ত্রী বলেন, এটি হবে সিরাজগঞ্জের জন্য গৌরবের এবং ঐতিহাসিক ঘটনা। এর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং সিরাজগঞ্জ তথা বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হবে। বিশ্বভারতী ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে সিরাজগঞ্জে প্রস্তাবিত এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হবে।
×