ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী আরও চার বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৩ মে ২০১৫

প্রধানমন্ত্রী আরও চার বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার ৩১৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি বিদ্যুতকেন্দ্র, একটি ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং একটি উপকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন। বিকেল পাঁচটায় নিজ কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলাপ্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংযুক্ত হবেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বোতাম টিপে সরকারের ছয় উন্নয়ন কর্মকা-ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো হচ্ছে নরসিংদীর ঘোড়াশালের ১০৮ মেগাওয়াট, নারায়ণগঞ্জের গগনগরের ১০২ মেগাওয়াট এবং মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি ও নাটোরে ৫২ মেগাওয়াট করে দুটি কেন্দ্র। ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, নাটোর এবং মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করেছে। এরমধ্যে ঘোড়াশাল ১০৮ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি গ্যাস চালিত। সাম্প্রতিক সময়ে আইপিপিগুলোর মধ্যে সব থেকে কম মূল্যে বিদ্যুত সরবরাহ করছে রিজেন্ট-১০৮ মেগাওয়াটের এই কেন্দ্রটি। কেন্দ্রটির সঙ্গে পিডিবির ক্রয় চুক্তিতে বলা হয়েছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে মাত্র এক টাকা ৯১ পয়সা। বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রকল্প পরিচালক মোঃ ইমরুল চৌধুরী শনিবার জানান, কেন্দ্রটি পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুত উৎপাদন করছে। সরকারের চাহিদামতই তারা বিদ্যুত দিচ্ছে। অন্য তিনটির মধ্যে নাটোরের ৫২ মেগাওয়াট ও নারায়ণগঞ্জের গগনগরের ১০২ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করেছে ফিনল্যান্ডের কোম্পানি ওয়ার্টসিলা এবং মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টির ৫২ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করেছে সিনহা পিপলস এনার্জি লিমিটেড। এ নিয়ে গত ৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্যাপটিভসহ সাড়ে নয় হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র নির্মাণ করা হলো। সব মিলিয়ে স্থাপিত ক্ষমতার পরিমাণ ১৩ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াট। এছাড়া মেঘনাঘাট-আমিনবাজার ৪০০ কেভি সঞ্চালন এবং লালবাগের ১৩২/৩৩ ও ১১ কেভির একটি উপকেন্দ্রও উদ্বোধন করা হবে একই সময়। পাওয়ারগ্রিড কোম্পানি পিজিসিবি সঞ্চালন লাইন এবং উপকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। ঢাকা জেলা প্রশাসন এ উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্স এর আয়োজন করেছে। সম্প্রতি বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছেন। এরা গড়ে প্রতি মাসে ৩৭২ কিলোওয়াট বিদ্যুত ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সকল মানুষকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা। এজন্য সরকার বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড উৎপাদন ছিল সাত হাজার ৫৭১ মেগাওয়াট। এ যাবতকালের সব থেকে বেশি বিদ্যুত উৎপাদনের দিন দেশে লোডশেডিং হয়নি। এখন চাহিদার সবটুকু বিদ্যুত উৎপাদন করতে আমরা সক্ষম। তবে বিতরণ লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু কিছু বিপত্তি ঘটছে। সরকার বিতরণ লাইন সম্প্রসারণে কাজ করছে। যেসব স্থানে দিন ও রাতে বিদ্যুত চলে যাচ্ছে তা লোডশেডিংজনিত কারণে নয়। বিদ্যুত বিভাগের ২০ থেকে ২৫ বছরের পুরনো লাইনে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি থাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১৬টি প্রকল্পে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এগুলো শেষ হলে দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে বর্তমান পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলেও সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানানো হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল জানান, জেলায় প্রথমবারের মতো কোন বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। জেলায় নিজস্ব এই বিদ্যুত কেন্দ্রটি ঘিরে উৎসবের আমেজ বইছে। জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান জানান, মুন্সীগঞ্জ ১১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। আর এই কেন্দ্র চালু হওয়ায় স্থানীয় চাহিদায় সহায়তার পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডেও যুক্ত হবে। এখানকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই বিদ্যুত কেন্দ্র। তিনি জানান, দেশের ১৫ শতাংশ আলু উৎপাদন হয় মুন্সীগঞ্জে। এখানে বিদ্যুত চালিত ৬৮টি হিমাগার রয়েছে। এই বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হওয়ায় কৃষি ক্ষেত্রের সম্ভাবনাও বাড়বে। মুন্সীগঞ্জের কহিনুর হিমাগারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার সাহা জানান, বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে জেনারেটর চালাতে হবে না এবং আলুর গুণগতমানও ভাল থাকবে। তাই এই নতুন বিদ্যুত কেন্দ্রেটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিবে। সিনহা পিপলস এনার্জি লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন জানান, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত নতুন ইঞ্জিন ও জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৩২ কোটি টাকা। জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক উৎপাদন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। ফার্নেস ওয়েলের মূল্য বৃদ্ধির হার ব্যতীত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হয়েছে ছয় টাকা ৯১ পয়সা।
×