ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩ মে ২০১৫

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ। মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধি ও নির্বাণ লাভের স্মৃতিবিজড়িত দিন। আড়াই হাজার বছরের বেশি সময় আগে গৌতম বুদ্ধ এ দিনে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সত্য অনুসন্ধানে সিংহাসনের মায়া ছেড়ে গৃহত্যাগ করেছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাজধানীসহ সারাদেশে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে আলোকসজ্জা, পবিত্র গ্রন্থ ত্রিপিটক থেকে পাঠ, উপাসনা ভঙ্গ এবং কঠিন চিবর দান, আলোচনা সভাসহ থাকছে নানা আয়োজন। বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ সালের এ দিনে নেপালের কপিলাবস্তুতে সিদ্ধার্থ নামে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। ভারতের বিহার রাজ্যের গয়ায় ৩৫ বছর বয়সে তিনি নির্বাণ লাভ করেন। এবং খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ সালে ৮০ বছর বয়সে তিনি কুলিনগরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ অনুসন্ধিৎসু গবেষণার মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাচীন সভ্যতা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে পরিচিতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় তুলে ধরতে বিদগ্ধ গবেষক, প-িত ও বৌদ্ধ চিন্তাবিদদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত হলো শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা। বৈশাখী পূর্ণিমার শুভ জন্মতিথিতে তিনি প্রজ্ঞাময় মহামতি গৌতম বুদ্ধের অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি একটি সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় আজীবন সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করে গেছেন। ‘অহিংস পরম ধর্ম’ মহামতি গৌতম বুদ্ধের এই বাণী আজও সমাজের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকের এই অশান্ত ও অসহিষ্ণু বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয়রোধ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিত্তের মধ্যে বড় হয়েও তিনি উপলব্ধি করেছিলেন ‘ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’। তাঁর এই মর্মবাণী মানব আত্মাকে পরিশুদ্ধ এবং শান্তিময় করে তুলতে পারে। গড়ে তুলতে পারে একটি অহিংস মানবিক সমাজ। তিনি বলেন, ‘আবহমান কাল থেকে এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে বৌদ্ধদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা ও কৃষ্টি গভীরভাবে মিশে আছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দেশের সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ ধর্ম ও আচার অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে। এটা বাংলাদেশের সম্প্রীতির এক অনুপম ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের চর্চা ও বুদ্ধের মহান আদর্শকে অন্তরে ধারণ করে বৌদ্ধ সম্প্রদায় দেশের উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা পালনে তাদের কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এ প্রত্যাশা করি। শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে মঙ্গলময় হোক সবার জীবন। রাষ্ট্রপতি শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে নেয়া সকল কর্মসূচীর সফলতা কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেছেন, হিংসার উন্মত্ত পাশবিক শক্তি দমন করতে গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন, শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভয়, লোভ, লালসাকে অতিক্রম করে গৌতম বুদ্ধ সারাজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, মৈত্রী ও করুণার বাণী প্রচার করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ মুক্ত পরিবেশে নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘেœ প্রতিপালন করে থাকেন। হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আমরা বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বুদ্ধের অসহিংস, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী এবং তাঁর জীবনাদর্শ ধারণ ও লালন করে আমরা এদেশকে একটি মানবিক শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হব বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কর্মসূচী ॥ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আজ রবিবার রাজধানীর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে দিনব্যাপী কর্মসূচী পালন করছে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ। ধারাবাহিক কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, শান্তি শোভাযাত্রা, প্রদীপ পূজা ও শীল গ্রহণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বুদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, হিন্দু বুদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
×