ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ জামালের প্রতিশোধের লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১ মে ২০১৫

শেখ জামালের প্রতিশোধের লড়াই

রুমেল খান ॥ শেখ জামাল এবার মৌসুম সূচক ফেডারেশন কাপ জিতেছে। দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই জাতীয় দল এবং যুবদলের হয়ে খেলায় পুরো দল নিয়ে বেশি দিন অনুশীলন করতে পারেনি কোচ মারুফুল হকের অধীনে। ফলে প্রস্তুতি তেমনটি হয়নি। তারপরও কোচ মারুফুল দলকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো করেই গড়ে তুলেছেন। তারই প্রমাণ ‘মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবল আসরে তাদের টানা ছয় ম্যাচে জয়। সর্বোচ্চ ১৮ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে গত লীগের চ্যাম্পিয়নরা। শিখরে থেকেই শনিবার (শুক্রবার মে দিবস উপলক্ষে খেলা বন্ধ) তারা মাঠে নামবে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা অনুষ্ঠিত হবে বিকেল সোয়া ৪টায়। প্রতিপক্ষ ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড। চলমান লীগে যাদের অবস্থান ১১ দলের মধ্যে পঞ্চম। মজার বিষয়- গতবার ব্রাদার্স লীগ শেষ করেছিল পঞ্চম হয়েই! আরও মজার বিষয় আছে। গত লীগে জামাল যে অপরাজিত লীগ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি, এর জন্য দায়ী ব্রাদার্স! জামাল সেবার তাদের ২৭ ম্যাচের (লীগ অনুষ্ঠিত হয়েছিল তিন লেগে) ১৯টিতে জিতেছিল, ড্র করেছিল ৭টিতে, আর হেরেছিল একমাত্র গোপীবাগের এই ব্রাদার্সের কাছেই! বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০১৪ সালের ১৯ জুনের তৃতীয় লেগের ওই ম্যাচে রুবেলের গোলে (১-০) ব্রাদার্সের কাছে মাথা নত করেছিল ‘বেঙ্গল ইয়োলোস’ খ্যাত জামাল। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় লেগের দুই ম্যাচে জিতেছিল জামালই। একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত ৮ জানুয়ারি ২০১৪ সালে প্রথম পর্বের ম্যাচে জামাল জেতে ৪-১ গোলে। হ্যাটট্রিক করেছিলেন এমেকা ডার্লিংটন। ২২ এপ্রিল ২০১৪ সালে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে জামালকে জিততে বিস্তর ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ৩-২। গত মৌসুমে ফেডারেশন কাপ ও প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন, ভারতের আইফএ শিল্ডে রানার্সআপ এবং ভুটানের কিংস কাপে চ্যাম্পিয়ন (২০১১ সালে নেপালের সাফাল পোখারা গোল্ডকাপ জেতার পর এটা তাদের বিদেশ থেকে জেতা দ্বিতীয় সাফল্য) সব মিলিয়ে ৩টিতে চ্যাম্পিয়ন ও ১টিতে রানার্সআপ নিঃসন্দেহে নজরকাড়া সাফল্য। চলমান মৌসুমে ঘরে তুলেছে ফেডারেশন কাপের শিরোপা। অনেকেই বলছেন, এবার শেখ জামাল পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বরে থাকলেও তারা নিজেদের সুনাম অনুযায়ী খেলছে না। প্রতি ম্যাচেই বিপক্ষ দল তাদের জালে আগে বল পাঠাচ্ছে। প্রথমার্ধে জঘন্য খেলছে তারা। তবে অভিজ্ঞতা ও ম্যাচ টেম্পারমেন্টকে কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে বা ম্যাচের শেষদিকে গিয়ে তারা গোল করে জয় কুড়িয়ে নিচ্ছে। এবারের লীগে জামাল তাদের ছয় ম্যাচে হারিয়েছে ফরাশগঞ্জকে ৪-১, রহমতগঞ্জকে ২-১, ফেনী সকার ক্লাবকে ২-০, চট্টগ্রাম আবাহনীকে ৪-০, টিম বিজেএমসিকে ২-১ এবং শেখ রাসেলকে ১-০ গোলে। ৬ ম্যাচে তারা করেছে ১৫ গোল, যা দলীয় সর্বাধিক। এই গোলগুলো করেছেন দলের পাঁচ ফুটবলার। তারা হলেনÑ এমেকা ডার্লিংটন (৫), ওয়েডসন এ্যানসেলমে (৫), ল্যান্ডিং ডার্বোয়ে (৩), কেষ্ট কুমার (১) ও মামুনুল ইসলাম (১)। শেষের জন ভুগছেন এ্যাঙ্কেল ইনজুরিতে। ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে তার খেলা নিয়ে রয়েছে সংশয়। নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড এমেকা ছিলেন গত লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা (২৪)। তাকে টপকে সেবার শীর্ষ গোলদাতা হয়েছিলেন আরেক ফরোয়ার্ড হাইতির ওয়েডসন (২৬)। তবে এবার এই দুজন কিন্তু চলমান লীগে দ্বিতীয় সর্বাধিক গোলদাতা। তাদের টপকে এক নম্বরে যিনি আছেন, তিনি ওয়েডসনেরই স্বদেশী ব্রাদার্সের অগাস্টিন ওয়ালসন। ওয়ালনের গোলসংখ্যা ৬। যার চারটিই করেছেন এক ম্যাচে! মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ম্যাচে তার করা ওই হ্যাটট্রিক এই লীগে আবার এখন পর্যন্ত একমাত্র হ্যাটট্রিক। ভারতীয় কোচ সৈয়দ নইমুদ্দিন যেন ব্রাদার্সের ঘরের কোচই। এর আগেও একাধিক দফায় দলটিকে কোচিং করিয়েছেন। তবে প্রত্যাশিত সাফল্য এনে দিতে পারেননি। তবে এবার ব্রাদার্স বেশ ভাল খেলছে বলে মনে করছেন ফুটবলপ্রেমীরা। ৬ ম্যাচে ৩ জয়, ১ ড্র ও ২ হারে তাদের পয়েন্ট ১০। অবস্থান পঞ্চম। ১০ গোলের বিপরীতে হজম করেছে ৬। ওয়ালসনের ৬ গোল বাদে বাকি গোলগুলো করেছেন স্যামুয়েল এ্যাডামস (২), কাওসার রাব্বী (১) ও শরীফুল ইসলাম (১)। চলমান লীগে ব্রাদার্সের জয়গুলো হচ্ছে ফরাশগঞ্জ (৩-১), ঢাকা মোহামেডান (১-০) ও মুক্তিযোদ্ধার (৫-২) বিরুদ্ধে। ড্র করেছে বিজেএমসির সঙ্গে (০-০)। আর হেরেছে শেখ রাসেল (১-২) এবং ঢাকা আবাহনীর (০-১) কাছে। শনিবারের ম্যাচে জামাল কি পারবে ব্রাদার্র্সকে হারিয়ে গত লীগের হারের প্রতিশোধ নিতে? শনিবার একই ভেন্যুতে লীগের ৩২ এবং দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি বনাম বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ম্যাচটি।
×