ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাফিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১ মে ২০১৫

হাফিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি

স্পোর্টস রিপোর্টার, খুলনা থেকে ॥ এর আগেও দুইবার ডাবল শতক করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯০ রানে ঘরে গিয়েই সাজঘরে ফিরেছেন। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে খুলনা টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেই বাধা টপকে গেছেন। প্রথমবারের মতো ডাবল শতক করে ফেলেছেন। ৩৩২ বলে ২৩ চার ও ৩ ছক্কায় ২২৪ রান করেছেন। তার এ দুর্দান্ত ইনিংসে বাংলাদেশও প্রথম টেস্টে বিপাকেই পড়ে গেল। এ নিয়ে হাফিজ ৮ টেস্ট শতক করলেন। এর মধ্যে প্রথমবার ডাবল শতক করতে পারলেন। হাফিজ, মিসবাহ ও ইউনুসকেই ভয় পাওয়া হচ্ছিল। হাফিজ একাই যা করে দিলেন, বাংলাদেশকে যেন ডুবিয়েও দিলেন। এর আগে দুইবার হাফিজ দেড় শ’ রানের ওপরে করেন, দুইবারই দুই শ’ রানের একেবারে কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১২ সালে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯৬ রানে ও গত বছর নবেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৭ রানে আউট হয়ে যান। এক ইনিংসে দুই শ’ রান করার আক্ষেপ তার থেকেই যায়। এবার সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে নিলেন হাফিজ। ২৮৬ বলে ২১ চার ও ৩ ছক্কায় ২০০ রান পূরণ করার পর ২২৪ রানে গিয়ে শুভগত হোমের বলে মাহমুদুল্লাহর হাতে ধরা পড়েন হাফিজ। শুভগতর ডেলিভারিটি লেগ সাইড দিয়ে যাচ্ছিল। সুইপ করেন হাফিজ। বলটি গ্লাভসে লাগে। লেগ সিøপে যায়। সেখানে থাকা মাহমুদুল্লাহ দুর্দান্তভাবে ক্যাচটি ধরেন। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের ইনিংসকে ‘মোটাতাজা’ করে দেয়া হাফিজের উইকেটেরও অবসান ঘটে। হাফিজ যখন আউট হন তখন পাকিস্তানের স্কোর বোর্ডে ৩৯৮ রান জমা থাকে। এর মধ্যে হাফিজই করেন ২২৪ রান। দ্বিতীয় দিন ব্যাট হাতে নেমেই ১৩৭ রান করে ব্যাট করছিলেন হাফিজ। তৃতীয় দিন সেই ইনিংসটাকে ধীরে ধীরে অনেক বড় করে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত আরও ৮৭ রান যোগ করেন হাফিজ। ২০৫ বলে গিয়ে দেড় শ’ রান করার পর ৮১ বলেই ৫০ রান যোগ করে ২০০ রান করেন হাফিজ। এরপর আউট হওয়ার আগে যে ২২৪ রান করেন, তা বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোরও। এর আগে পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাবল শতক করেছিলেন। ২০০২ সালে চট্টগ্রামে মোহাম্মদ ইউসুফ অপরাজিত ২০৪ ও ২০১১ সালে চট্টগ্রামেই ইউনুস খান অপরাজিত ২০০ রান করেছিলেন। শুধু এক ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোরই নয়, আগেরদিনই শতক করে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ৩ শতক করার রেকর্ডও গড়েন হাফিজ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে হাফিজ এখন সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করা ব্যাটসম্যানও। তৌফিক ওমর এতদিন ৭ ম্যাচে ১০ ইনিংস খেলে ৫৫.৮০ গড়ে ৫৫৮ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। হাফিজ ৬ ম্যাচে ১০ ইনিংস খেলে ৭১.৩৩ গড়ে ৬৪২ রান করে সবার উপরে চলে গেছেন। কী দুর্দান্ত। নিখুঁত ব্যাটিং করেছেন হাফিজ। দ্বিতীয় দিন ১৩ রানে একবার ও তৃতীয় দিন ১৭৩ রানে আরেকবার ‘রিভিউ’য়ের হিসেবে পড়া ছাড়া, আর কোন সমস্যাতেই পড়তে হয়নি হাফিজকে। ১৯৮ রান করার পর সুইপ লেগে ফাইন লেগে বল পাঠিয়ে ২০০ রান পূরণ করে ফেলেন হাফিজ। বাংলাদেশ বোলাররা কিছুই করতে পারেননি। এর মধ্যে সামি, আজহার ও ইউনুসের উইকেটি নিতে পারলেও হাফিজকে কোনভাবেই নড়বড়ে করা যাচ্ছিল। উইকেটে যেন প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। শেষ পর্যন্ত দলকে ৪০০ রানের ওপরে নিয়ে ৪০২ রানে গিয়ে হাফিজ আউট হন। যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেনও বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। অথচ ওয়ানডেতে অন্য হাফিজকেই মিলে ছিল। ওয়ানডে, টি২০ মিলিয়ে চার ম্যাচ খেলেন। রান করেন ৩৪। তিন ওয়ানডেতে যথাক্রমে ৪, ০, ৪ ও একটি টি২০’তে ২৬ রান করেন। টেস্টে এসে পুরো উল্টো চিত্রই দেখা যাচ্ছে। যে হাফিজ ব্যাট হাতে নির্ধারিত ওভারের খেলায় রানই করতে পারলেন না, টেস্টে ব্যাট হাতে নেমেই ডাবল শতক হাঁকিয়ে দিলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় হাফিজের। প্রথম শতকটি ২০০৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষেই করেন। অপরাজিত ১০২ রান করেন। এরপর এক এক করে ৭ শতক করেন হাফিজ। ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৪, ৫ বছর পর ২০১১ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১১৯, একই বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে আবার ১৪৩, ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯৬, গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই টেস্টে অপরাজিত ১০১ ও ১৯৭ রান করেন হাফিজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২২৪ রান করার সঙ্গে টানা তিন টেস্টে শতকও তুলে নেন হাফিজ। সেই সঙ্গে গত বছর নবেম্বরে যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের সেরা ১৯৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন, সেই ইনিংসের চেয়েও খুলনা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৭ রান বেশি করেন। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল শতকের সঙ্গে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসও খেলেন হাফিজ।
×