ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পের নিজস্ব বিদ্যুত উৎপাদনে আর গ্যাস সংযোগ নয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১ মে ২০১৫

শিল্পের নিজস্ব বিদ্যুত উৎপাদনে আর গ্যাস সংযোগ নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবাসিকের পর এবার শিল্পের নিজস্ব বিদ্যুত উৎপাদনে (ক্যাপটিভ পাওয়ার) গ্যাস সংযোগ না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সরকার। ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেসে’ বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে দেশে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোনে শিল্প কল-কারখানা করার জন্য উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পরিকল্পিত শিল্প জোন ব্যতিরেকে নতুন কারখানায় গ্যাস সংযোগ নিরুৎসাহিত করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর গত ৯ এপ্রিল জানানো হয় আবাসিকে নতুন গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে এলপিজিকে জনপ্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে এলপিজিতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করতেও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। যদিও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা এখনই জারি করা হচ্ছে না। গ্যাসের নতুন লাইন সম্প্রসারণ করা হবে না। তবে বিদ্যমান বিতরণ লাইনের গ্রাহকরা সংযোগ পাবেন। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও গত ২১ দিনে কোন বিতরণ কোম্পানিকে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়নি জ্বালানি বিভাগ। ক্যাপটিভ পাওয়ারে অন্তত ৩০ ভাগ গ্যাস অপচয় হয়। পাওয়ারসেলের এ সংক্রান্ত একটি গবেষণায় বিষয়টি উঠে আসে। ওই গবেষণার সুপারিশে শিল্পের নিজস্ব বিদ্যুত উৎপাদন ব্যবস্থায় গ্যাস সংযোগকে নিরুৎসাহিত করা হয়। কিন্তু এমন অনেক শিল্প কারখানা রয়েছে যেখানে উৎপাদন পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ প্রয়োজন রয়েছে। না হলে উৎপাদন বিঘিœত হয়। সরকার এখনও যেহেতু শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত দিতে পারছে না তাই ক্যাপটিভে উৎপাদন বন্ধ করা যাচ্ছে না। দিন দিন বিদ্যুতের অবস্থা ভাল হওয়ায় নতুন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে বলে মনে করছে জ্বালানি বিভাগ। জ্বালানি সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি নতুন করে ক্যাপটিভে আর কোন গ্যাস দেব না। এখন বিদ্যুত উৎপাদনের অবস্থা বেশ ভাল। আমরা বিদ্যুত বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছি শিল্পের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য। তারা বিষয়টি দেখছে। আমরা চিন্তা করছি একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়ার। এরপর এখন যারা ক্যাপটিভে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছেন তাও বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে এর আগে শিল্প-কারখানা যাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ পায় সে ব্যবস্থা করা হবে। মিট দ্য প্রেসে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, এলএনজি আনা হলে আমাদের গ্যাসের দাম বেড়ে প্রতি ইউনিটের দর হবে চার থেকে পাঁচ ডলার। আমরা এই মূল্যবান সম্পদকে উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার করতে চাই। রাজধানীর বিদ্যুত ভবনে অনুষ্ঠিত এফইআরবির চেয়ারম্যান মোল্লা আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় এসময় জ্বালানি সচিব আবু বকর সিদ্দিক, বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলামসহ বিদ্যুত জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। স্বল্প মেয়াদী অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনাগুলো অনেক খানি পিছিয়ে গেছে। সময় লাগছে। তবে আমরা কাজ করছি। সুফল পেতে একটু সময় লাগবে। তিনি বলেন, নবায়ন যোগ্য জ্বালানি প্রসারে সরকার কাজ করছে। বিশেষ করে সৌর বিদ্যুতের অনেক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ছোট ছোট প্রকল্প ছাড়াও ১০০ মেগাওয়াটের সৌর প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের মধ্যে শুরু হবে। এক্ষেত্রে ভূমির প্রাপ্যতাকে বড় বাধা বলে মনে করেন নসরুল হামিদ। মন্ত্রী জানান, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সর্বোত্তম ব্যবহারের উপায় খুঁজে বের করতে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এখানে একটি নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ক্ষেত্রটির কয়লা উত্তোলন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার বৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি জানান কয়লা নীতি চূড়ান্ত করার বিষয়ে কাজ চলছে। চূড়ান্ত হলেই সরকার কয়লা তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ভবিষ্যতে কয়লা দিয়েই বেশিরভাগ বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। এজন্য সরকার যৌথ উদ্যোগে কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, যৌথ উদ্যোগের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর সমঝোতা স্মারকে সভরেন্ট গ্যারান্টি বাংলাদেশের দেয়ার কথা ছিল। এ কারণেই আমরা এসব ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এ সময় বিদ্যুত সচিব বলেন, যৌথ উদ্যোগে করা কেন্দ্রগুলো দুই দেশের হলেও প্রকল্পটি আমাদের দেশে হচ্ছে। এই প্রকল্পের স্থাপনা আমাদের দেশে হওয়ায় আমরা ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এমন নয় যে অন্য দেশে প্রকল্প হচ্ছে আর আমরা তার ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা দিচ্ছি। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক উদ্যোক্তাই অর্থ সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সোয়া লাখের মতো প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। তিন বছরের মধ্যে এ ক্ষেত্রে একটা সফলতা আসবে বলে মনে করেন তিনি। এরপরই মূলত দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহর জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
×