ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াত-শিবির জঙ্গী গোষ্ঠী মাঠে না নামায় বিএনপির ভোট বর্জন

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১ মে ২০১৫

জামায়াত-শিবির জঙ্গী গোষ্ঠী মাঠে না নামায় বিএনপির ভোট বর্জন

শংকর কুমার দে ॥ তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শুরু হওয়ার মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যেই বিএনপির নির্বাচন বর্জন করার নেপথ্য কাহিনী নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ে ভোট কেন্দ্রে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর ছক কষেছিল জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীগোষ্ঠী। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের কারণে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যরা মাঠে না নামায় পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারাসহ বড় ধরনের নাশকতার নীলনক্সা বাস্তবায়ন সম্ভবপর হয়নি। এ কারণে নির্বাচন-উত্তর কোন সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেনি। নির্বাচন চলাকালীন যে কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম, কারচুপি, সংঘর্ষ ঘটেছে, তা আওয়ামী লীগের একাধিক কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরোধের কারণে ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা সূত্র জানান, বিএনপি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেয়া, অনিয়ম, কারচুপি, সংঘর্ষ ঘটনার যেসব অভিযোগ করেছে সেই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনের দিন বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্রে বিএনপির নির্বাচনী এজেন্টই যায়নি, বের করে দিবে কিভাবে? তবে যেসব ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম, কারচুপি ও সংঘর্ষ হয়েছে তা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ঘটেছে। তিন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থীদের পক্ষের এজেন্ট, ভোটার, সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ তো দূরের কথা বের করে দেয়ার মতো কোন ঘটনার খবর পায়নি গোয়েন্দা সংস্থা। ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯২টি ওয়ার্ডে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ১৯৮২টি। এর মধ্যে ১৪২৯টি ভোট কেন্দ্র ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এতগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ঘোষণা করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরও মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম, কারচুপি, সংঘর্ষ ও বাড়াবাড়ি হয়েছে, যা অতীতের যে কোন নির্বাচনের চেয়ে ভাল পরিবেশ বজায় ছিল বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদার, সিসি ক্যামেরা বসানো, কন্ট্রোল রুম স্থাপনসহ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ কথাও উঠে এসেছে যে বিএনপির সঙ্গে কথা না রাখেনি জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা। জামায়াত-শিবির ও জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো বেঈমানি করায় নির্বাচন বর্জনের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে দ্রুত সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য প্রদান বিশেষ করে চট্টগ্রামের বিএনপি প্রার্থী মঞ্জুরুল আলমের রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। চট্টগ্রামের বিএনপির মেয়র প্রার্থী মঞ্জুরুল আলম স্বেচ্ছায় নির্বাচন বর্জন করতে চাননি, বিএনপির চট্টগ্রামস্থ কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বার্তায় তিনি নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হয়েছেন। আর এ কারণেই ক্ষোভে, দুঃখে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিএনপি প্রার্থী মঞ্জুরুল আলম। নির্বাচনের পরে যখন ফলাফলে তার বাক্সে লাখ লাখ ভোট পড়ার ঘটনা দেখে তিনি হতাশায় আফসোস সুরে কথা বলেছেন। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে নির্বাচন-উত্তর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ বিএনপি সরকারের আমলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মোঃ হানিফ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিজয় মিছিলে গুলি করে ৭ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ৪ ওয়ার্ড কমিশনার খুন হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র পদসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণই করতে পারেননি। বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীরা নির্বাচিত তো হয়েছেনই, এমনকি সন্ত্রাসী প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের এক বছর না যেতেই বিএনপি-জামায়াত সমর্থক নির্বাচিত ৪ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর খুন হন। বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোটের আমলেও ঢাকাসহ তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হওয়ার ঘটনায় গণমাধ্যমের সমালোচনার ঝড় উঠেছিল তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ মেয়র পদে কোন প্রার্থী না দিলেও বিএনপি ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তাদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার ঘটনার নিজির রয়েছে। রাজশাহীতে বাম জোটের মেয়রপ্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশাকে রাজশাহীর একটি কেন্দ্রে আটক করে লাঞ্ছিত করে বিএনপির সমর্থকরা। সেনা সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে। ঢাকায় বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকা সত্ত্বেও ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে ইসলামী আন্দেলনের সমর্থকদের ঢাকায় ব্যাপকভাবে মারধর ও লাঞ্ছিত করে বিএনপির কর্মীরা। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হন বিএনপির প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকা। ওই সময় নির্বাচন কমিশনার দাবি করেছিলেন- ঢাকায় প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আর এবার ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশের ওপরে। তারপরও নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না করে গড়পড়তা অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়টিও তাদের পূর্বপরিকল্পিত নীলনক্সাই। নির্বাচন-উত্তর কোন ধরনের সহিংস সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
×