ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তান ২৫ রানে এগিয়ে

ম্যাচ বাঁচাতে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১ মে ২০১৫

ম্যাচ বাঁচাতে পারবে বাংলাদেশ?

মিথুন আশরাফ, খুলনা থেকে ॥ কী অসাধারণ ডেলিভারি তাইজুল ইসলামের। ইউনুস খান কিছু বুঝে ওঠার আগেই বোল্ড হয়ে গেলেন। তৃতীয় দিনে এ একটি বিষয় একটু আলোচনার খোরাক জোগাল। এছাড়া পুরো দিনটিই তো পাকিস্তান নিজেদের করে নিল। রানের পাহাড়ে চাপা পড়ল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৩৩২ রান করল। এরপর মোহাম্মদ হাফিজের ২২৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ৫ উইকেটে ৫৩৭ রান করে পাকিস্তান। ২০৫ রানে এগিয়েও গেল। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, ম্যাচ বাঁচানোই বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তৃতীয় দিন শেষে তাই প্রশ্নও উঠে গেছে, ম্যাচ বাঁচাতে পারবে বাংলাদেশ? এরপরও আশা থাকে। যদি পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা বিশেষ কিছু ঘটিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু কে ঘটাবেন তা? খুলনা টেস্টে ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে তার সুফল মিলল কোথায়। দ্বিতীয় ইনিংসে যখন খেলতে নামবে বাংলাদেশ, তখন থাকবে চতুর্থদিন। স্পিনারদের বিষ উইকেটে আরও ছড়াবে। যেখানে প্রথম ইনিংসেই ইয়াসির, বাবর, হাফিজদের বলগুলো বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কাছে খেলা অসাধ্য মনে হয়েছে। সেখানে চতুর্থ কিংবা পঞ্চম দিনে সেই বোলারদের বলগুলো তামিম, সাকিব, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকরা অনায়াসে খেলতে পারবেন, তা ভাবা কঠিন। এরপরও প্রত্যাশা শেষ পর্যন্ত থাকে। সেই প্রত্যাশা আবার পাকিস্তানই দেখাচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, কিভাবে? পাকিস্তান যে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করল, প্রতি উইকেটেই ৫০ রানের বেশি জুটি হলো। দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন হাফিজ। ৩৩২ বলে ২৩ চার ও ২ ছক্কায় ২২৪ রান করলেন। প্রথম ডাবল শতক করলেন। তার এ ইনিংসের সঙ্গে আজহার আলীর ৮৩, মিসবাহ উল হকের ৫৯, ইউনুস খানের ৩৩ রানে পাকিস্তান বড় স্কোরই গড়ল। এখনও ব্যাট করছেন ৫১ রান করা আসাদ শফিক ও সরফরাজ আহমেদ। আজ চতুর্থদিনে পাকিস্তান নিশ্চয়ই স্কোরকে আরও বাড়িয়ে নেবে। লিড ৩০০ রানের নিচে রাখবে না। তাই যদি হয়, তাহলে পাকিস্তানকে প্রথম সেশনটি খেলতে হবে। এক সেশন গেলে, বাকি থাকবে চতুর্থদিনের দুটি সেশন। তামিম, ইমরুল, মুমিনুল মিলে কী দুই সেশন অতিক্রম করার ক্ষমতা রাখেন না? রাখেন। তা যদি করা যায় তাহলে চতুর্থদিনও শেষ হয়ে যাবে। এখন একটি বিষয় আছে, পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে কত রান করল, সেই দিকে কোনভাবেই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের নজর দেয়া চলবে না। একটিই লক্ষ্য থাকতে হবে। শুধুই উইকেট আঁকড়ে থাকতে হবে। এভাবে তিন ব্যাটসম্যান যদি চতুর্থদিন শেষ করে দিতে পারেন, তাহলে পঞ্চম দিনে গিয়ে সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, সৌম্য, শুভগত মিলে নিশ্চয়ই পঞ্চম দিনের প্রথম সেশন খেলতে পারবেন। এমনও হতে পারে দ্বিতীয় সেশনও অতিক্রম করতে পারে বাংলাদেশ। তখন ম্যাচ ড্র হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো থাকবে। ম্যাচ বাঁচানোর ক্ষেত্রে এর বিকল্প পথও বাংলাদেশের সামনে খোলা নেই। আজ চতুর্থদিনে পাকিস্তান কী করল, সেই দিকে কোন নজরই দিতে পারবেন না ব্যাটসম্যানরা। অবশ্য একটি সমস্যা আছে। মুশফিক যে দ্বিতীয় দিন ডান হাতের অনামিকায় ব্যথা পেয়েছেন, তা পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। সেই ব্যথা নিয়ে যদি মুশফিক ব্যাট করেনও সেক্ষেত্রে কতটা সার্ভিস দিতে পারবেন, সেটি চিন্তার বিষয়। তবুও আশা রাখতেই হয়। পাকিস্তান হয়ত অনেক রান করে ফেলেছে। কিন্তু এত রানও হয়ে যায়নি। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে যদি ছন্দপতনের মধ্যেও ৩৩২ রান করতে পারে, তাহলে অনেক দিন পর টেস্টে খেলতে নেমে যে প্রথম ইনিংসের ধস হয়েছে, দ্বিতীয় ইনিংসে তা শুধরে নিলে ৫০০ রানও করা সম্ভব। এখন বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তান স্পিনারদের সামনে কী কুলিয়ে উঠতে পারবে বাংলাদেশ? আট ব্যাটসম্যান আর আট বোলার নিয়ে প্রথম ইনিংসে কিছুই করতে পারল না বাংলাদেশ। শুধু তাইজুল ইসলাম ৩ উইকেট ও শুভগত হোম ২ উইকেট নিতে পারল। ড্র’র জন্য যে খেলার কথা আকাশে-বাতাসে ভাসছে। আরেকজন স্পিনার হলে যে ভাল হতো, তাও সবার নজরে পড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশ দল যে সেই ৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমেছে, ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে হারানোর পর টি২০তেও জয় পেয়েছে, এরপর টেস্টে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে না হারার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলার চেষ্টা করেছে, সেই বিষয়েও নজর দেয়া দরকার। যদি ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলার লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে সফল হয়ে যায় বাংলাদেশ, তাহলেই তো বাংলাদেশ দলকে নিয়ে আবার মাতামাতিও কম হবে না। সেই মাতামাতি সবাই করতে চায়। কিন্তু পাকিস্তান যে বড় স্কোর গড়েছে, সেখানেই যেন বিপদের শঙ্কা হচ্ছে। যদি দ্বিতীয় ইনিংসেও তাসের ঘরের মতো বাংলাদেশের ইনিংস চুরমার হয়ে যায়, তাহলে এমনও হতে পারে ইনিংস হারও হয়ে যেতে পারে! এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত প্রথম টেস্ট থেকে ড্র বের করে আনতে পারে কিনা। অবশ্য তৃতীয় দিন শেষে শুভগত হোম যা বললেন তার সারমর্ম দাঁড়ায়, ‘আমাদের অনেক ব্যাটসম্যান আছে। ম্যাচ বাঁচানোই এখন প্রধান ও একমাত্র লক্ষ্য।’ তাই যেন হয়। এখন ব্যাটসম্যানদের ওপরই সব দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব যথাযথ পালন করলে, এখন পর্যন্ত যে ১৭৫ ইনিংস খেলে চারবার ৫০০ রানের বেশি স্কোর বোর্ডে জমা করতে পেরেছে বাংলাদেশ, তা করতে পারলে ম্যাচ বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। পারবে বাংলাদেশ তা করতে? আজ চতুর্থদিনেই তা বোঝা যাবে।
×