ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মহান মে দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১ মে ২০১৫

মহান মে দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ মহান মে দিবস। মেহনতি, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দিন। এদিন প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে ঝরেছিল শ্রমিকের রক্ত। তাদের রক্তের বিনিময়েই আজ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার। আর মুক্তি মিলেছে দীর্ঘ শোষণ আর বঞ্চনার। তাই তো আজকের এই দিন শ্রমিকের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। দিনটির তাৎপর্য স্মরণ করে সারাবিশ্বেই যথাযথ মর্যাদায় পালিত হবে মহান মে দিবস। বাংলাদেশের মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের কাছেও এদিনের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই দেশেও দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য সরকারী বেসরকারীভাবে বিস্তারিত কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামও শ্রমের মর্যাদা তুলে ধরতে গিয়ে তাঁর ‘কুলি ও মজুর’ কবিতায় উল্লেখ করেছেন ‘হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়, পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়, তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি, তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি; তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান।’ শ্রমিকের মুখে আজ সেই গানই উচ্চারিত হবে যা তাদের শোষণ আর বঞ্চনা থেকে মুক্তি দেবে। কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংহতি করবে আজ। গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে যারা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে তাদের অধিকারকে কেউ যাতে অবমূল্যায়ন করতে না পারে সে জন্য ঐক্যবদ্ধ শপথ নেবে তারা। এদিকে মহান মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকসমূহে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ ছাড়াও সরকারী বেসরকারী রেডিও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে। এ উপলক্ষে দেশের সব সংবাদপত্র আজ বন্ধ থাকবে। সারাবিশ্বে যথাযথ মর্যাদায় মহান মে দিবস পালিত হলেও এ দিন এমনি আসেনি। দিনটি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে এক রক্তভেজা ইতিহাস। মে দিবস এলেই মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শ্রমিকের ন্যায্য দাবিকে গলা টিপে হত্যা করা যায় না তা প্রমাণ করে দেয়। শ্রমিকের আন্দোলনের কারণে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার স্বীকৃতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই শ্রমিকের এ দাবিকে আইনে পরিণত করেছে। তবে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে মে দিবস গুরুত্বে সঙ্গে পালন করা হলেও বেশিরভাগ শ্রমিক এর তাৎপর্য সম্পর্কে আজও জানে না। অনেক দিনমজুর, গৃহশ্রমিক জানে না মে দিবস কি। কোন পেক্ষপটে দিন এসেছে। ফলে তাদের অধিকার সম্পর্কে তারা এখনও রয়েছে অন্ধকারে। মে মাসের প্রথম দিনটি বিশ্বের অনেক দেশেই আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এদিনটি মে দিবস নামে পরিচিত। কিছু দেশে মে দিবসকে লেবার ডে বা শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিনটি সরকারীভাবে ছুটির দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ৮ ঘণ্টা শ্রমদিনের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকের ওপর গুলি চালানো হলে ১১ জন শহীদ হয়। হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মে দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে। আন্তর্জাতিকভাবে মে দিবস প্রতিষ্ঠার আগে শ্রমিকদের দিন রাত অমানবিক পরিশ্রম করতে হতো। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা আর সপ্তাহে ৬ দিন। বিপরীতে মজুরি মিলত নগণ্য, শ্রমিকরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করত। ক্ষেত্রবিশেষে তা দাসবৃত্তির পর্যায়েও পড়ত। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। তাদের এ দাবি কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেয় ১৮৮৬ সালের ১ মে। কিন্তু কারখানা মালিকরা এ দাবি মেনে নেয়নি। ৪ মে ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগোর হে মার্কেট নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকরা মিছিলের উদ্দেশে একত্রে জড়ো হয়। ১৮৭২ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল শ্রমিক শোভাযাত্রার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়েই এটি করা হয়েছিল। আগস্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে এক পুলিশ নিহত হয়। পুলিশ বাহিনী তৎক্ষণাৎ শ্রমিকদের ওপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা সংঘাতে রূপ নেয়। এতে ১১ শ্রমিক শহীদ হয়। পুলিশ হত্যা মামলায় আগস্ট স্পীজসহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ নবেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসির মঞ্চে আরোহণের পূর্বে আগস্ট স্পীজ বলেছিলেন, আমাদের এই নিঃশব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে। ২৬ জুন, ১৮৯৩ ইলিনয়ের গবর্নর অভিযুক্ত আটজনকেই নিরপরাধ বলে ঘোষণা দেন। এ আন্দোলনের ফলেই শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবি স্বীকৃতি পায়। এর পর থেকেই মে দিবস প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবি আদায়ের দিন হিসেবে। এদিকে মহান মে দিবস উপলক্ষে দেয় এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ বলেছেন, মহান মে দিবসের সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। আট ঘণ্টার কর্মদিবস, মজুরি বৃদ্ধি, কাজের উন্নততর পরিবেশসহ শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত মে দিবসের তাৎপর্য এখনও বিশ্বে সমভাবে প্রযোজ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরও নিবেদিত হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা জাতির পিতার স্বপ্নে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সক্ষম হব। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে বলেন, দেশে কোন শ্রেণী পেশার মানুষের অধিকার আজ আর নিশ্চিত নয়। এই অবস্থার অবসানে সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা জরুরী। সেই সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অংশ নেয়ার জন্য মহান মে দিবসে দেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। কর্মসূচী ॥ মহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক, শ্রমিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে সমাবেশ র‌্যালি, শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা। রাষ্ট্রীয়ভাবেও মে দিবস উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সকাল ৭টায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কাকরাইলস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামন্যে এক শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থি থাকবেন দলের চেয়ারম্যান হুসেই মুহম্মদ এরশাদ।
×