ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মূর্তিমান আতঙ্কের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১ মে ২০১৫

মূর্তিমান আতঙ্কের মৃত্যু

বর্তমান বিশ্বের মূর্তিমান আতঙ্ক ও বিপজ্জনক ব্যক্তি ইসলামিক স্টেট (আইএস) প্রধান আবুবক্কর আল বাগদাদী নিহত হয়েছেন। বিষয়টি সত্যি হলে, তা অবশ্যই এক ধরনের স্বস্তির কারণ হতে পারে বিশ্বজুড়ে। অবশ্য তার অবর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ জঙ্গী সংগঠনটির কার্যক্রম থেমে যাবে, তা নয়। তবে কিছুটা হলেও হোঁচট খাবে। যেমন আল কায়দাপ্রধান ওসামা বিন লাদেনের নিহত হওয়ার পরও থেমে যায়নি জঙ্গী সংগঠনটির কার্যকলাপ। মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের হামলায় গুরুতর আহত হন বাগদাদী। তবে সেবার তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন সহকর্মী নিহত হয়। বাগদাদী গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। চল্লিশ বছর বয়সী বাগদাদীর মাথার বিনিময়ে ১ কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। জানা যায়, চলতি সপ্তাহে আইএস নেতাদের একটি বৈঠক লক্ষ্য করে মার্কিন যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া বোমায় সংগঠনটির প্রধান ও স্বঘোষিত খলিফা বাগদাদীসহ ১৩ জন নিহত হন। সিরিয়ার সীমান্তবর্তী ইরাকী শহর আল কাইজে ঘটনাটি ঘটে। বাগদাদীর নেতৃত্বে আইএস গত বছরের জুন-জুলাই মাসে ইরাক ও সিরিয়া লেবাননের সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে সেখানে আধিপত্য বিস্তার করে। জঙ্গী সংগঠনটি এই অঞ্চলজুড়ে খিলাফত পদ্ধতির ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। বাগদাদী নিজেকে অধিকৃত অঞ্চলের ‘খলিফা’ হিসেবে ঘোষণা করেন। আইএস বাগদাদের শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করে নেয়। সিরিয়ার সরকারবিরোধী লড়াইয়েও সংগঠনটি প্রভাব বিস্তার করছে। আইএস নেতা বাগদাদী ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযান শুরুর পরপরই জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত হয়ে পড়েন। ২০১০ সালে আল কায়দার ইরাক শাখার নেতৃত্বে আসেন। পরে আল কায়দা থেকে বেরিয়ে এসে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করে ইসলামিক স্টেট অব দ্য ইরাক এ্যান্ড দ্য সিরিয়া বা আইএসআইএস। পরে সংক্ষিপ্ত হয়ে দাঁড়ায় আইএস আর দখলকৃত অঞ্চলে চালু করে খিলাফত শাসন, যার পরিধি বাড়াতে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের প্রসার ঘটানো হয়। নতুন হলেও গত দু’বছরে আইএস তাদের তৎপরতায় পুরো বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদের আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে। এশিয়া, আফ্রিকাজুড়ে পশ্চিমা বিশ্বে নব্য নামে তাদের জঙ্গী তৎপরতা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করেছে ও প্রাণহানির সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে। বাগদাদীর মৃত্যু হলেই আইএসের তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে; তা নয়। তারা পরবর্তী নেতৃত্ব নির্ধারণ করে পুনরায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যাবে। কিন্তু জঙ্গীবাদের শেকড় নির্মূল করা না গেলে ব্যক্তি বা নেতৃত্বের বিনাশে তাদের তেমন বিপর্যয় ঘটবে না। তাই বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে জঙ্গীবাদ নির্মূলে। আইএস, আল কায়েদা, তালেবান বা বাংলাদেশের জেএমবি, হিযবুত তাহ্রীর বা আনসারউল্লাহ বাংলা টিম যাই হোক- তাদের নির্মূল করা জরুরী। জঙ্গীবাদের বিনাশই বিশ্ববাসীর কাম্য।
×