ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পিছিয়ে পড়েও নাটকীয় জয় মোহামেডানের

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

পিছিয়ে পড়েও নাটকীয় জয় মোহামেডানের

রুমেল খান ॥ মোহামেডানের অন্ধভক্ত ‘আতা ভাই’কে স্টেডিয়াম পাড়ার সবাই চেনে। মোহামেডানের ম্যাচগুলো নিজ দল যদি খারাপ খেলে বা গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে, তাহলে কোন কথা নেইÑ আতা ভাই তোতা পাখির মতো বুলির পরিবর্তে ‘গালি’র নহর বইয়ে দেন। বুধবার ‘মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড বনাম বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ম্যাচে এমনই মারমুখী ভূমিকায় দেখা গেল বর্ষীয়ান আতা ভাইকে। তবে ম্যাচ শেষে আতা ভাইকে দেখা গেল দারুণ খোশমেজাজে। কারণ মোহামেডান যে জিতেছে নাটকীয়ভাবে, ৩-২ গোলে। যে দল ম্যাচের প্রথমার্ধে ০-২ গোলে পিছিয়ে, সে দলের এমন জয়কে নাটকীয় না বলে আর উপায় কী? ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’ খ্যাত মোহামেডানের গিনির ফরোয়ার্ড ইসমাইল বাঙ্গুরা করেন জোড়া গোল। অপর গোল করেন মিডফিল্ডার ইব্রাহীম। মুক্তির পক্ষে এক করে গোল করেন মিডফিল্ডার মোহাম্মদ বিপ্লব ও ফরোয়ার্ড এনামুল হক। ৬ ম্যাচে এটা মোহামেডানের চতুর্থ জয়, পয়েন্ট ১২। অবস্থান পঞ্চম থেকে তৃতীয়। একধাপ পেছনে ঠেলে দিল মুক্তিযোদ্ধাকে। যদিও তাদের পয়েন্টও মোহামেডানের মতো সমান ১২। তবে গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় মোহামেডানই তাদের ওপরে। ৬ ম্যাচে এটা মুক্তির দ্বিতীয় হার। এক ম্যাচ আগেই তারা অপ্রত্যাশিতভাবে ২-৫ গোলে হেরেছিল ব্রাদার্সের কাছে। সেই হারের ধাক্কা যে সামলাতে পারেনি, সেটা বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত লীগ ম্যাচের খেলা দেখেই বোঝা গেছে। দুই গোলে এগিয়ে থেকেও এভাবে ম্যাচ হারার কারণ নিয়ে কোচ আবু ইউসুফকে যে বিস্তর খাটতে হবে, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। ম্যাচের ৪০ মিনিটে মুক্তি অধিনায়ক এনামুলের পাস থেকে সতীর্থ মিডফিল্ডার বিপ্লব বল নিয়ে ঢুকে পড়েন মোহামেডানের বক্সে। গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল এগিয়ে আসলে তাকে কাটিয়ে বল জালে ঠেলে দেন বিপ্লব (১-০)। এর দুই মিনিট পর বাঁপ্রান্ত থেকে সেনেগালের ফরোয়ার্ড কামারা সার্বা বল দেন বক্সে দাঁড়িয়ে থাকা সতীর্থ এনামুল হককে। চমৎকার শটে বল জালে পাঠান মুক্তির অধিনায়ক (২-০)। এটা লীগে তার ষষ্ঠ গোল, যা ব্রাদার্সের অগাস্টিন ওয়ালসনের সঙ্গে সর্বোচ্চ। তবে দেশীয়দের মধ্যে এনামুলই সবচেয়ে বেশি গোল করে এগিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে বাঁপ্রান্ত থেকে মোহামেডানের মিডফিল্ডার জুয়েল রানা সতীর্থকে উদ্দেশ্য করে বল দিলে বক্সে দাঁড়িয়ে থাকা মিডফিল্ডার মোবারক হোসেন ভুঁইয়াকে বল দিলেও তিনি সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। ৫৭ মিনিটে মোহামেডানের বক্সে হ্যান্ডবল হওয়াতে (মুক্তির ডিফেন্ডার আশরাফুল করিমের হ্যান্ডবল) রেফারি ভারত চন্দ্র গৌড় পেনাল্টির নির্দেশ দিলে ইসমাইল বাঙ্গুরা ব্যবধান কিছুটা কমান (১-২)। ৮০ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে ফরোয়ার্ড তৌহিদুল আলম সবুজের মাইনাস রিসিভ করে ডান পায়ের আলতো টোকায় জালে পাঠিয়ে দলকে সমতায় ফেরান মোহামেডানের বদলি মিডফিল্ডার ইব্রাহিম (২-২)। পরের মিনিটেই ইসমাইল বাঙ্গুরাকে নিজেদের বক্সে ফাউল করেন আশরাফুল করিম। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দিলে পেনাল্টি শটে ব্যবধান বাড়ান বাঙ্গুরা (৩-২)। আর আনন্দ বাড়ে মোহামেডান সমর্থকদের। গত লীগে মোহামেডান-মুক্তির প্রথম লেগের ম্যাচ ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে। ফিরতি লেগে মুক্তিযোদ্ধাকে ১-০ গোলে হারায় মোহামেডান। তৃতীয় লেগে ৩-২ গোলে জেতে মুক্তিযোদ্ধা। ম্যাচ চলাকালে আতা ভাই যেভাবে মোহামেডানের খেলোয়াড়দের চেঁচিয়ে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, তাতে অনেকেই মজা করে বলছিলেন, ‘মোহামেডানের কোচ জোসির জায়গায় আতা ভাইকেই কোচ করলে ভাল হয়!’
×