ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুলনা টেস্টে পাকিস্তানের স্পিন ভেল্কি

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

খুলনা টেস্টে পাকিস্তানের স্পিন ভেল্কি

স্পোর্টস রিপোর্টার খুলনা থেকে ॥ প্রথম দিনে যেমন, দ্বিতীয় দিনেও তেমনই হচ্ছে। খুলনা টেস্টে স্পিন ভেল্কি চলছেই। দুই দিনে সবমিলিয়ে ১১ উইকেট পড়ল। ৮ উইকেটই নিলেন স্পিনাররা। সাত উইকেট আবার পাকিস্তান স্পিনাররাই নিলেন। খুলনা টেস্টে বলতে গেলে দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত পাকিস্তানের স্পিন ভেল্কিই দেখা গেছে। সেখানে বাংলাদেশ স্পিনারদের পাত্তাই মিলছে না। প্রথমদিনে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে যে ২৩৬ রান তুলেছিল, ৩ উইকেটই স্পিনারদের দখলে ছিল। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ যে প্রথম ইনিংসে ১০ উইকেট হারিয়ে ৩৩২ রান করল, স্পিনাররা ৭ উইকেট তুলে নিলেন। এরপর দ্বিতীয় দিনে পাকিস্তান যখন ব্যাটিং করতে নামল, একই অবস্থা দেখা গেল। দ্বিতীয় দিন শেষে পাকিস্তান করল ২২৭ রান, পড়ল অবশ্য ১ উইকেট। সেই উইকেটটিই বাংলাদেশের এক স্পিনার নিলেন। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের অফ স্পিনার মোহাম্মদ হাফিজ ২ ও বামহাতি স্পিনার জুলফিকার বাবর সমানসংখ্যক উইকেট শিকার করলেন। লেগব্রেকার ইয়াসির শাহ নিলেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। বাকি ৩ উইকেট নিলেন পেসার ওয়াহাব রিয়াজ। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে তাইজুল এক উইকেট নিতে পেরেছেন। প্রথমদিনে বাংলাদেশ দুর্দান্ত ব্যাটিং করে। দিনের শেষ বলে গিয়ে স্পিনার জুলফিকার বাবর যদি মুমিনুল হকের উইকেটটি তুলে না নিতেন, তাহলে দিনটি বাংলাদেশেরই হতো। বাবর শেষ মুহূর্তে ভেল্কি দেখালেন। সেই ভেল্কিতে বাংলাদেশও যেন খানিক ডুবল। শুধু কী ডুবল, খুলনা টেস্টের গতি যেভাবে পাকিস্তানের দিকে এগিয়ে চলেছে, এখনই ভয় পাওয়ার মতো যথেষ্ট কারণও থাকছে। প্রথম দিন ইয়াসির শুরুতেই তামিমকে আউট করে দিয়েছিলেন। এর আগেই অবশ্য প্রথম উইকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৫২ রানের জুটি হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকেই দুর্দান্ত বোলিং করতে থাকেন ইয়াসির। প্রথম দিন ১৮ ওভার বল করে ১ মেডেনসহ রান দিয়েছিলেন একটু বেশিই, ৫৮ রান। তবে ১ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দিন তো তার স্পিন বিষেই যেন ডুবল বাংলাদেশ। আরও ২ উইকেট তুলে নেন ইয়াসির। মুশফিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে আউট করেন। আরেকটি উইকেট পান তাইজুল ইসলামের। বোলিং এ্যাকশন শুধরে প্রথম উইকেট তুলে নিয়েছেন হাফিজ। ইমরুল কায়েসকে আউট করেছেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেটেরও পতন ঘটান। এরপর তো দুর্দান্ত বোলিংই করতে থাকেন হাফিজ। যদিও প্রথমদিনে আর কোন উইকেট তুলে নিতে পারেননি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের রানও তুলতে দেননি। ১৫ ওভারে ৫ মেডেনসহ রান দিয়েছিলেন ৩৮। আবার ১ উইকেটও তুলে নিয়েছিলেন। সেই উইকেটটি আবার গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। দ্বিতীয় দিনে এসে হাফিজ দুর্দান্ত খেলতে থাকা সৌম্য সরকারকে আউট করে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত ১৮ ওভারে ২ মেডেনসহ ৪৭ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। আরেক স্পিনার তো দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেটই নিয়ে নেন। প্রথম দিনের শেষ বলে মুমিনুলকে আউট করার সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই সাকিবের উইকেটটি তুলে বাংলাদেশ ইনিংসে ধস নামানো শুরু করেন জুলফিকার বাবর। সেই যে বাংলাদেশের উইকেট পড়া শুরু হয়, এরপর এক এক করে উইকেট পড়তে থাকে। যে বাংলাদেশ প্রথমদিনে এত সুন্দর খেলে, সেই বাংলাদেশের ইনিংসে দ্বিতীয় দিন ছন্দপতন হয়ে যায়। সেই ছন্দপতনের শুরু করেন প্রথমদিনে ২১.৫ ওভার বল করে ৩ মেডেনসহ ৫৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নেয়া বাবর। দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ ইনিংস শেষে দেখা যায় ৩২ ওভারে ৩ মেডেনসহ ৯৯ রান দিয়েছেন বাবর। নিয়েছেন মোট ২ উইকেট। অথচ ইয়াসির, হাফিজ, বাবরদের বোলিংয়ে কাত হয়ে গেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের স্পিনাররাই বাজিমাত করেছে। অবশ্য বাংলাদেশ স্পিনাররাও শুরুতেই ঝলক দেখায়। বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশ স্পিনারদের দক্ষতা দেখেই যেখানে অভ্যস্ত দর্শকরা, সেখানে প্রথম টেস্টে যেন পাকিস্তান স্পিনাররাই কর্তৃত্ব করে যাচ্ছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের পড়া ১০ উইকেটের মধ্যে ৭ উইকেট পাকিস্তান স্পিনাররাই তুলে নিলেন। পাকিস্তানের স্পিন ভেল্কি দেখা গেল। আজ তৃতীয় দিন যদি বাংলাদেশ স্পিনারদের ভেল্কি দেখা যায় তাহলে ভাল। না হলে বিপদই ঘনিয়ে আসতে পারে।
×