ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুজাহিদের আপীলের শুনানি শুরু

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

মুজাহিদের আপীলের শুনানি শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলবদর কমান্ডার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপীল আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে। পরবর্তী দিন সোমবার নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আলী আহসান মুজাহিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়েছেন এ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সকাল পৌনে ১০টায় শুনানির শুরুতে আদালত মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগগুলো এবং কোন অভিযোগে কী দ- হয়েছে তা জানতে চান। জবাবে এস এম শাজাহান বলেন, পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল দ- দিয়েছে। এরপর আদালতের নির্দেশে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি। প্রথম দিনের শুনানি শেষে আদালত আগামী সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে দেন। এদিকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপীল মামলাও শুনানির জন্যে একই বেঞ্চের বুধবারের কার্যতালিকায় ৫ নম্বরে ছিল। তবে সে পর্যন্ত যাওয়ার আগেই আদালতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় শুনানি হয়নি। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল মামলা দু’টির শুনানির দিন ধার্য ছিল। আসামিপক্ষের পৃথক সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন শুনানি দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেন আপিল বিভাগ। আইনজীবীর ‘অসুস্থতা’ দেখিয়ে মুজাহিদের পক্ষে ছয় সপ্তাহ এবং ‘প্রস্তুতি নেই’ কারণ দেখিয়ে সাকা চৌধুরীর পক্ষে ওই দিন আট সপ্তাহের সময়ের আবেদন জানানো হয়। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসানের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ, দেশত্যাগে বাধ্য করা ও অগ্নিসংযোগের দায়ে সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। সাত অভিযোগের পাঁচটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। মধ্যে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর হত্যা-নিযার্তনের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মুজাহিদের মৃত্যুদ- কার্যকর করার আদেশ প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল। সাতটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগের দায় থেকে মুজাহিদকে খালাস দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাকে ৩নং অভিযোগে ৫ বছর ও ৫নং অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেছে। ৬ ও ৭নং অভিযোগে মুজাহিদকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। ১নং অভিযোগটি ৬নং অভিযোগের সঙ্গে একীভূত করায় ১নং অভিযোগে পৃথক কোন দ- দেয়া হয়নি। মুজাহিদ এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট আপীল করেন। অন্যদিকে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর মৃত্যুদ- প্রদান করেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন জোর করে ধর্মান্তরিত করাসহ ২৩ অভিযোগের মধ্যে ৯টি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে চারটি চার্জে হত্যা ও গণহত্যার দায়ে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছর করে ১০ বছর কারাদ-। ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো অপরাধে জড়িত থাকা এবং এর পরিকল্পনা করার দায়ে ২০ বছর করে ৬০ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। আর প্রমাণিত অপহরণ ও নির্যাতনসংক্রান্ত অভিযোগে আনা হয়েছে, ১৭ নম্বর অভিযোগে নিজাম উদ্দিন আহম্মেদকে অপহরণ ও নির্যাতন, ১৮ নম্বর অভিযোগে সালেহউদ্দিন আহমেদকে অপহরণ ও নির্যাতন। আর এ দুই অভিযোগে সাকাকে দেয়া হয়েছে ৫ বছরের সশস্ত্র কারাদ-। ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে তাঁকে দেয়া হয়েছে ২০ বছরের কারাদ-। মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে সাকা ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর সুপ্রীমকোর্টে আপিল করেন।
×