ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন রাস্তা না করে পুরনো রাস্তা সংস্কার করা হবে

বাজেটের আকার আগামী তিন বছরে দ্বিগুণ হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

বাজেটের আকার আগামী তিন বছরে দ্বিগুণ হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ২০১৮ সালে জাতীয় বাজেটের আকার হবে ৫ লাখ কোটি টাকা। তিনি বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে বাজেটের আকার বেড়ে দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার হবে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বুধবার সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছরে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২.০ শতাংশের বেশি। আগের চেয়ে এই প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। ২০১৮ সালে জাতীয় বাজেটের আকার ৫ লাখ কোটি টাকা হলে এটি হবে আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি। দেশে নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ নিয়ে অর্থমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশে নতুন করে আর কোন রাস্তা নির্মাণ করা হবে না। খামাখা অসংখ্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এজন্য সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এদেশে আর নতুন কোন রাস্তা হবে না। শুধু পুরনো রাস্তা সংস্কার করা হবে, শক্তিশালী করা হবে। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের মন্দাভাব বিরাজ করছে। কিন্তু আগামী দুই বছর বিশ্ব অর্থনীতি ভাল যাবে বলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে পূর্বাভাস ব্যক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আগামী দুই বছর বাজেট প্রণয়ন করা হবে।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত ছয় বছর ধরে বাজেটে অবকাঠামো ও পরিবহন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এবারও তা অব্যাহত থাকবে। তবে এর সঙ্গে মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ইত্যাদি খাতকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।’ চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের কাছাকাছি হবে উল্লেখ করে মুহিত বলেন, ‘গত জানুয়ারি মাস থেকে বিএনপির নেতৃত্বে যে টানা অবরোধ-হরতাল হয়েছে এ নিয়ে আমি বিভিন্ন সময় নেতিবাচক মন্তব্য করেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে আমার এ্যাসেসমেন্ট হচ্ছে, এক মাসের বেশি ক্ষতি হয়নি এবং অর্থনীতি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আশা করছি, এটা আমরা উদ্ধার করতে পারব।’ প্রাক-বাজেট আলোচনায় ইআরএফ সদস্যরা অবকাঠামো উন্নয়ন, বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো, শিল্পায়নে জমির স্বল্পতা, পিপিপি কার্যকর করা, বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন ও পরিবেশ সমুন্নত রাখা, পর্যায়ক্রমে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন, কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়ে আনা, ব্যাংকিং খাত সংস্কার, আয়কর রিটার্ন দাখিল আরও সহজ করা, কালো টাকার বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সেইসঙ্গে এসব বিষয়ে বাজেটে সরকারের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদানের সুপারিশ করেন। সাংবাদিকদের এসব সুপারিশের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কর্পোরেট ট্যাক্সের ক্ষেত্রে এবারের বাজেটে বড় একটা সুবিধা দেয়া হয়েছিল। তবে এটা যৌক্তিক বলে আমার কাছে মনে হয় না। আবার পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হলেই ট্যাক্সের বোঝা কমে যাবে এটাও তেমন ভাল নয়। কর্পোরেট ট্যাক্সের বিষয়টি রিভিউ করা হবে।’ এছাড়া সারচার্জের বিষয়টিও রিভিউ করা হবে বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘সম্পদ ট্যাক্স যেটা আছে, সেটা তেমন কার্যকর হচ্ছে না। এটাকে পরিবর্তন করে এবার বাজেটে প্রপার্টি ট্যাক্স চালু করা হতে পারে।’ অন্যান্য বিষয়ে মুহিত বলেন, বর্তমান সরকার অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ২৬ বছরে অভ্যন্তরীণ সম্পদের বৃদ্ধির পরিমাণ হচ্ছে জিডিপির ৩ শতাংশ। আর বর্তমান সরকারের ৬ বছরে এটা বেড়েছে ২ শতাংশেরও বেশি। আলোচনায় অর্থমন্ত্রী ছাড়াও সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, ইআরএফ সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাদল, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান, সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেনসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×