ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রীষ্মে ফুটেছে সোনালু

ফুলে ভরা মঞ্জরি লতা থোকা থোকা সুন্দরে আটকে যায় চোখ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

ফুলে ভরা মঞ্জরি লতা থোকা থোকা সুন্দরে আটকে যায় চোখ

মোরসালিন মিজান ॥ পাতা যত, তারও বেশি ফুল! দারুণ রঙিন ফুলে ভরে উঠেছে গাছ। সবুজ পাতার সামান্যই চোখে পড়ে। দৃষ্টির পুরোটাজুড়ে আছে ফুলের সৌন্দর্য! সোনারং ফুল দেখে নিজের অজান্তেই মন গেয়ে ওঠেÑ এ কী সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে...। হ্যাঁ, সোনালু ফুলের কথা হচ্ছে। গ্রীষ্মের এই ফুল খুব চেনা। বৈশাখে ফোটে। এখন সেই সময়। একটু খেয়াল করলে যে কারও চোখে পড়বে। আর যারা প্রকৃতিপ্রেমী, ফুলপ্রিয় যাদের, অনেক আগে থেকে উপভোগ করছেন এই সৌন্দর্য। সোনালু ফুলের গাছ সাধারণ গাছের মতো উঁচু। ডালপালা চারপাশে ছড়ানো থাকে। আরও অনেক গাছের মতোই দৃশ্যমান হয় এটি। তবে ফুল ফুটলে বহুদূর থেকে চেনা যায়। কাছ থেকে দেখলে পাপড়ির রং প্রায়শই কাঁচা হলুদ দেখায়। ঘন ফুলে ভর্তি গাছ দেখে মনে হয়Ñ কেউ বুঝি হলুদ রঙের কৌটা উপুড় করে দিয়েছে! গ্রীষ্মের প্রখর রোদ ফুলের গায়ে পড়লে রংটি সোনালী মনে হয়। সোনালু ফুল সারাদেশেই কম বেশি হয়। রাজধানী ঢাকায়ও চোখে পড়ে। শহাবাগে জাতীয় জাদুঘর চত্বরে আছে দুটি গাছ। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা গাছ দুটি পুরো এলাকার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বুধবার ভর দুপুরে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, ফুলে ভরা মঞ্জরি লতার মতো ওপর থেকে নিচের দিকে ঝুলে আছে সোনালু। দুপুরে মৃদু বাতাস বইছিল যখন, থোকা থোকা ফুল সুন্দরভাবে দুলছিল। দেখে মন ভাল হয়ে যায়। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ গায়ে মাখা ফুলের পাপড়ি চিকচিক করছিল। পাতার আড়ালে থাকা পাপড়িগুলোর অতো চিক চিক নেই। তবে রংটা গাঢ় দেখায়। দুটোর দুই রকম সুন্দর। উদ্ভিদবিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মা জানান, সোনালুর ইংরেজি নাম ‘গোল্ডেন শাওয়ার।’ গাছের ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসা সোনালু ফুলের মঞ্জরিকে একসঙ্গে শাওয়ারের জলধারার মতোই দেখায়। এ কারণে গোল্ডেন শাওয়ার নামকরণ। অবশ্য বৈজ্ঞানিক নামের বেলায় এর ফল প্রাধান্য পেয়েছে। সে অনুযায়ী নামটিÑ কেসায়্যা ফিস্টুলা। এটি গ্রীক ভাষা থেকে নেয়া। ফিস্টুলা শব্দের অর্থ বাঁশি। বাঁশির মতো লম্বা ফলের জন্য এমন নামকরণ। সোনালু গাছ ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর বাকল পুরো এবং মসৃণ। ফাল্গুনে ব্যাপকহারে পাতা ঝরে। চৈত্রে পাতাহীন শুকনো কাঠির মতো গাছ হয়। প্রাণহীন দেখায়। সোনালু ফুলের পাঁচটি পাপড়ি। দশটি পুংকেশর। ভেতরে সবুজ রঙের তিনটি গর্ভকেশর দৃশ্যমান। এগুলো অর্ধচন্দ্র আকৃতির। সোনালু বাংলাদেশে এসেছে পূর্ব ভারত থেকে। ফলের আকার আকৃতি আমলে নিয়ে সোনালুকে ‘বানরলাঠি’ বলেও ডাকা হয়! সোনালুর ফল ও গাছের পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এ কারণেও একে ‘বানরলাঠি’ বলা হয়ে থাকে। সোনালুর ফলগুলো এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ব্যাস দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ফল কাঁচা অবস্থায় দেখতে সবুজ হয়। পাকলে কালচে লাল। সোনালুর কিছু ওষুধিগুণও বিদ্যমান। ছাল, পাতা ও ফলের মজ্জা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সার ও ভাইরাস প্রতিরোধে কাজে আসে। এছাড়া ডিপথেরিয়া গ-মালা, কুষ্ঠরোগের ক্ষত চিকিৎসায় কার্যকর। ফলের মজ্জা কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যায় উপকারী। তবে সোনালুর সুন্দর আর সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। চিরচেনা সবুজ প্রকৃতিকে এ ফুল রঙিন করে। সোনারং হয়ে ওঠে প্রকৃতি।
×