ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বার্গম্যানের সাজায় ১২ বিবৃতিদাতার রিট নিষ্পত্তি হাইকোর্টে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

বার্গম্যানের সাজায় ১২ বিবৃতিদাতার রিট নিষ্পত্তি হাইকোর্টে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর দুটি ধারায় আদালত অবমাননা বিষয়ক বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিদাতা ১২ নাগরিকের দায়ের করা একটি রিটের নিষ্পত্তি করে দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট দ্বৈত বেঞ্চ বুধবার কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে রিটটির নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত যে কেউ ইচ্ছা করলে আপীল বিভাগে আপীল করতে পারবেন। শুনানিতে অংশ নেন আবেদনকারীদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী আখতার ইমাম ও রাশনা ইমাম এবং রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতে অন্য মামলায় হাইকোর্টে আদালত অবমাননার আপীল করার বিধান থাকলেও ট্রাইব্যূনালে রায়ের পর উচ্চ আদালতে এই প্রথম আপীল করার আদেশ দেয়া হলো। আবেদনকারীদের আইনজীবী রাশনা ইমাম আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়ে আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছে। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল আইনে কেউ দ-িত হলে তিনি সংবিধানের ১০৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদালতে যেতে পারবেন।” ব্লগে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ লেখার মাধ্যমে বিচারাধীন বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর দায়ে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে গত বছর ২ ডিসেম্বর সাজা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ৫০ জন নাগরিকের একটি বিবৃতি একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। ওই বিবৃতি ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রতি কটাক্ষ’ মনে হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল বিবৃতিদাতাদের আচরণের ব্যাখ্যা চায়। তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১১(৪) এবং ২১ মিলিয়ে পড়লে দেখা যায়, মানবতাবিরোধীদের আপীলের অধিকার দেয়া হলেও যারা আদালত অবমাননায় সাজা পেয়েছেন তাদের আপীলের অধিকার দেয়া হয়নি। এটি সংবিধানের ২৬, ২৭, ৩১ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ পরিপন্থী। এসব যুক্তিতে আবেদনটি করা হয়।” ট্রাইব্যুনাল আইনের ১১(৪) ধারায় আদালত অবমাননার দায়ে দ- এবং ২১ ধারায় আপীলের অধিকারের বিষয়ে বলা রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে অবমাননার এ মামলা স্থগিতের পাশাপাশি ট্রাইব্যুনাল আইনের ওই দুটি ধারায় অবমাননাকারীদের আপীলের অধিকার নিশ্চিত না করা ‘কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না’- তা জানতে রুল চেয়েছিলেন ১২ আবেদনকারী। ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ জানিয়ে ৫০ বিবৃতিদাতার মধ্যে ২৬ জন নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান। আর একজন আগেই বিবৃতি থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। বাকি ২৩ জনের বিরুদ্ধে গত ১ এপ্রিল অবমাননার রুল জারি করে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এদের মধ্যে ১২ বিবৃতিদাতা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের দুটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত সপ্তাহে হাইকোর্টে এই রিট আবেদন নিয়ে আসেন। এরা হলেন- শিরিন পারভীন আক্তার, আফসান চৌধুরী, আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন, শহীদুল আলম, আনুশেহ আনাদিল, রফিকুর আবরার, ফরিদা আক্তার, লুবনা মরিয়ম, মাসুদ খান, রেহনুমা আহমেদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও জিয়াউর রহমান। গত রবি ও সোমবার আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আকতার ইমাম। সঙ্গে ছিলেন রাশনা ইমাম ও রেশাদ ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্র্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাকে সহায়তা করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম।
×