ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাতি দিয়েই নাছিরকে অভিবাদন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

হাতি দিয়েই নাছিরকে অভিবাদন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আচরণ বিধিতে ভোটের প্রচারে জীবিত প্রাণী ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পছন্দের এ প্রতীকটি পেয়েও ভোটের আগে রাস্তায় হাতি নামাতে পারেননি আ জ ম নাছির। তবে নির্বাচনে বিজয়ের পর বুধবার নতুন মেয়রকে অভিবাদন জানানো হলো বিশাল আকৃতির এক হাতি দিয়ে। আর এ আয়োজনটি হয় সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপির উদ্যোগে। ফুলের মালা পরানো এ হাতি রাস্তায় নামার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় জমে যায় শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের। নগরীর মোমিন রোডে অবস্থিত প্রিয়া কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আয়োজিত হয় এই সংবর্ধনার। এ সময় হাতি শুঁড় দিয়ে জয়ের মালা পরিয়ে দেয় নবনির্বাচিত নগর পিতাকে। আর আ জ ম নাছিরও নিজের গলার মালা তুলে দেন হাতির শুঁড়ে। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে প্রবল উচ্ছ্বাস দেখা যায়। সংবর্ধনার জবাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নতুন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আমি এ নগরীর আদিবাসী। নগরীর উন্নয়নে ৪১টি ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করব। তারপর সরকারের সহযোগিতায় এগুলো সমাধানে পদক্ষেপ নেব। তিনি বলেন, নগর পিতা নয়, নগরীর সেবক হিসেবে উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করতে চাই। জনগণ আমাকে ভালবেসে যে রায় দিয়েছে তার উন্নয়নের মাধ্যমে অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। আ জ ম নাছির আরও বলেন, চট্টগ্রাম প্রাচ্যের রানী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়, সমুদ্র কী নেই এখানে। শুধু অভাব রয়েছে সদিচ্ছার। নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কর্মদিবসের প্রথম দিন থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা নিয়ে সকল সমস্যা বিলুপ্ত করতে সচেষ্ট হব। প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রাম নোংরা নগরীতে পরিণত হয়েছে। যেখানে সেখানে ডাস্টবিন। সাধারণ মানুষকে নাকে রুমাল চেপে হাঁটতে হয়। জলাবদ্ধতামুক্ত একটি স্বাস্থ্যকর ও আধুনিক বাণিজ্যিক নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে নব নির্বাচিত মেয়র বলেন, আপনারা ভোট দিয়েছেন। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার দেয়া সকল প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটাররা স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। হাতি হলো উন্নয়ন ও যোগ্য নেতৃত্বের প্রতীক। আগের দিনে রাজা-বাদশারা হাতিতে চলাফেরা করতেন। আ জ ম নাছির হলেন ‘চট্টগ্রামের রাজা’। তাই তাঁকে হাতি দিয়ে সংবর্ধনা দেয়া হলো। ভোটের দিনে বিএনপির নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, এটি তাদের পূর্বপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের আগের কিছু অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। এতেই বোঝা যায় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারচুপি ও অনিয়মের যেসব অভিযোগ বিএনপির পক্ষ থেকে আনা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। নগরীর মোমিন রোডে প্রিয়া কমিউনিটি সেন্টারে নির্বাচনী কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সংবর্ধনা প্রদান করা হয় নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে। এ সময় কমিউনিটি সেন্টারের অভ্যন্তরে ও বাইরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ভিড় সড়ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে হাতি আসায় উৎসবে যুক্ত হয় বাড়তি মাত্রা। সেখানে আ জ ম নাছিরের নামে স্লোগান হয়। তবে বিজয় মিছিল বলতে যা বোঝায় তা ছিল না। শিশু-কিশোরদের আকর্ষণ ছিল হাতি। এর আগে সকালে আ জ ম নাছিরের বাস ভবনেও পরিলক্ষিত হয় কর্মী সমর্থকদের ভিড়। গণমাধ্যম কর্মীরাও ছুটে যান নতুন মেয়রের প্রতিক্রিয়া জানতে। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। আবারও বলেন যে, চট্টগ্রামকে একটি মেগাসিটি ও সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কর্পোরেশনের কর্মকা- সুচারুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে তার ‘জিরো টলারেন্স’ থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জানিয়ে দেন যে, চট্টগ্রাম নগরী হবে একটি পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক শহর। এর জন্য তিনি নগরবাসীরও সহযোগিতা এবং আন্তরিকতা কামনা করেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় নাছির ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বুধবার বিকেলে দেখা করতে যান সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর চশমা হিলের বাসায়। মহিউদ্দিন চৌধুরী নতুন মেয়রকে বরণ করে নেন। বর্তমান ও সাবেক মেয়র কিছুক্ষণ একান্তে কথা বলেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় আ জ ম নাছির তার কর্মকা- পরিচালনায় এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীও সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করবেন বলে আশ্বাস দেন। আ জ ম নাছিরের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ। সেখানেও সাধারণ মানুষের ভিড় জমে যায়।
×