ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলনা টেস্ট

ক্যাচ মিসে দ্বিতীয় দিনে নিয়ন্ত্রণও হারাল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

ক্যাচ মিসে দ্বিতীয় দিনে নিয়ন্ত্রণও হারাল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ খুলনা থেকে ॥ খুলনা টেস্টের প্রথম দিনে নিয়ন্ত্রণ দুই দলেরই ‘সমানে-সমান’ ছিল। দ্বিতীয় দিনে এসেই একের পর এক ক্যাচ মিসে নিয়ন্ত্রণ হারাল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে মোহাম্মদ হাফিজের ১৩৭ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে ফেলার ইঙ্গিত দিচ্ছে! পাকিস্তান এখনও ১০৫ রানে পিছিয়ে রয়েছে। তবে হাতে যে প্রথম ইনিংসে এখনও ৯ উইকেট আছে, সেটিই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ ক্ষুণœ করে দিয়েছে। সিরিজজুড়েই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে ছিল সব। কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিল। প্রথম টেস্টের প্রথমদিন পর্যন্ত সেই কর্তৃত্ব ছিল। পাকিস্তান যেন কিছুই করতে পারছিল না। দ্বিতীয় দিনে এসেই সব নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে গেল। বাংলাদেশের ৩৩২ রানের জবাবে দিন শেষে ১ উইকেটে ২২৭ রান করে ফেলেছে পাকিস্তান। নিয়ন্ত্রণ এখন পাকিস্তানের হাতে। এমনকি পুরো সিরিজজুড়ে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের ওপর কর্তৃত্বও হারাল বাংলাদেশ! দুটি ক্যাচ মিসের জন্যই সেই কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হলো। অথচ ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ করার পর টি২০’তেও জেতে কর্তৃত্ব বজায় রাখে বাংলাদেশই। টেস্টে পাকিস্তান অনেক অভিজ্ঞ দল। সেই সঙ্গে দলে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারেরও ছড়াছড়ি। তাই ওয়ানডে ও টি২০’র মতোই টেস্টেও সব বাংলাদেশের হাতে থাকবে এমনটি ভাবার কোন কারণ ছিল না। কিন্তু যেই ওয়ানডে ও টি২০’তে একাধিপত্ব দেখায় বাংলাদেশ, তখনই সবার ভেতর আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠে। টেস্টেও পাকিস্তানকে হারানোর বিশ্বাসও জন্মে। ক্রিকেটাররা পাকিস্তানকে ‘হারাতে পারব’ও বলেছেন। কিন্তু মাঠে কোথাও এর প্রমাণ মিলছে। যেখানে পাকিস্তান স্পিনাররা বাংলাদেশের ৭ উইকেট তুলে নিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশ স্পিনাররা কিছুই করতে পারছেন না। আবার যেখানে পাকিস্তান পেসাররাও ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশ পেসাররা একেবারে নীরব! প্রথম দিনে ২৩৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। মুমিনুল হক দিনের শেষ বলে গিয়ে ৮০ রানে আউট না হলে স্কোর বোর্ডে প্রথম দিন শেষে ৩ উইকেট লেখা থাকত। তখন বাংলাদেশের ইনিংসের ভিতও আরও মজবুত থাকত। কিন্তু ৪ উইকেট পড়ার পর আগেরদিন ১৯ রানে অপরাজিত থাকা সাকিব যখন দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই ২৫ রান করে আউট হয়ে গেলেন শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশের ইনিংসে ধস নামা। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিক-সৌম্য মিলে যে ৬২ রানের জুটি গড়লেন, সেটিই প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি হয়ে থাকল। ৩০৫ রানে ৩৩ রান করা সৌম্য ও ৫ রান যোগ হতেই ৩২ রান করা মুশফিক যখন আউট হলেন, এরপর ২২ রান যোগ হতেই অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশ। আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলার কোন মানেই খুঁজে পাওয়া গেল না। এত ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা মানে হচ্ছে রান বেশি করার ভাবনা থাকা। কিংবা উইকেট আঁকড়ে থাকা। যেটা মনে করা হচ্ছে, ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে বাংলাদেশ খেলছে, ড্র’র ভাবনা মাথায় নিয়েই। কিন্তু কোথায় ব্যাটসম্যানরা কিছু করতে পারলেন। মুমিনুল ৮০ রান করলেন। ইমরুলের ব্যাট থেকে এলো অর্ধশতক। মাহমুদুল্লাহ ৪৯ রান করলেন। আর কোন ব্যাটসম্যানই বড় স্কোর গড়তে পারলেন না। প্রথমদিনে ব্যাটসম্যানরা তাও ৩ উইকেট নেয়া ইয়াসির, ২ উইকেট করে নেয়া বাবর ও হাফিজের বলগুলো রুখে দিতে পেরেছেন। দ্বিতীয় দিনে তো এ স্পিনাররাই বাংলাদেশের ইনিংসে দ্রুত ধস নামাল। যেখানে প্রথম দিনে পুরো দিন খেলে বাংলাদেশ ২৩৬ রান করতে পারল। সেখানে ৬ উইকেটে দ্বিতীয় দিনে ৯৬ রান যোগ করতে পারল বাংলাদেশ। প্রথম সেশন শেষে দ্বিতীয় সেশনের ৩ ওভার খেলতে পারল। বাংলাদেশের ইনিংসই যেন ম্যাচের চিত্র বুঝিয়ে দিচ্ছে। বিপদ যে বাংলাদেশের দিকেই ধেয়ে আসছে, তা বোঝা যাচ্ছে। সেই বিপদ আরও বাড়ল, যখন হাফিজ শতক করে ফেললেন। সেই সঙ্গে আজহারও অর্ধশতক করলেন। দুইজনই আবার অপরাজিত থাকলেন। হাফিজ ১৭৯ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১৩৭ রান করলেন। আর আজহার ১৩৬ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৬৫ রান করলেন। ৫০ রানে দিনে পাকিস্তানের তাইজুলের ঘূর্ণিতে এক উইকেটটি (সামি আসলাম-২০ রান) পড়ার পর গড়লেন বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ ১৭৭ রানের জুটিও। অথচ এ জুটিটি এত বড় হয়ই না। জুটিটি ২৩ রানের সময় ভেঙ্গে যেত। দলের ৭৩ রানের সময় আজহার যখন ১১ রানে ছিলেন, এমন সময় সাকিবের বলটি বাউন্স করে পিচের অফসাইডে যেতে থাকে। এমন মুহূর্তে আজহারের ব্যাটের ছোঁয়াও লাগে। কিন্তু মুশফিক ক্যাচটি ধরতে পারেননি। মুশফিকের গ্লাভসে লেগে বলটি প্রথম সিøপে থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কাছে যায়। মাহমুদুল্লাহ’ও ধরতে পারেননি। আজহার এরপর খুব সাবধানে খেলতে থাকেন। আর হাফিজ সুযোগ পেলেই বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। দিন শেষে ২২৭ রানই করে ফেলে পাকিস্তান। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জন্য যেখানে রান তোলা কঠিন হয়েছে, সেখানে হাফিজ ও আজহার মিলে দ্রুতই রান তুলে ফেলেছেন। বাংলাদেশ যেখানে ৪৪.২ ওভারে গিয়ে ১০০ রান করেছে, পাকিস্তান সেখানে ২৭.৩ ওভারে এ রান তুলেছে। যখন পাকিস্তানের স্কোর বোর্ডে ১২৬ রান যুক্ত হয়, তখন আজহারের স্কোর বোর্ডে থাকে ২৮ রান। আবারও আজহারকে আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করেন মুশফিক। অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা মোহাম্মদ শহীদের বলে আজহারের ব্যাটে লেগে উইকেটের পেছনে যাওয়া ক্যাচটি ধরতে পারেননি মুশফিক। এ দুটি ক্যাচ মিসই বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এ ক্যাচ ফেলার জন্য বাংলাদেশ ম্যাচেও যেন পিছিয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রণও হারিয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ দলে দুঃসংবাদও যেন ভর করেছে। যেই দ্বিতীয় ক্যাচ মিস করেন মুশফিক, ইনজুরিতেও পড়েন। ডান হাতের অনামিকায় ব্যথা পান। এক্সরে করে অবশ্য কোন চিড় ধরা পড়েনি। তবে ব্যথা আছে। তাই ব্যথা নাশক ওষুধও খেতে হবে। যদি ব্যথা কমে তাহলে মাঠে নামতে পারবেন মুশফিক। নয় তো নামতে পারবেন না। আর যদি মাঠে না নামেন মুশফিক, তাহলে তো দল আরও বিপাকে পড়ে যাবে। এমনিতে নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়েছে। ম্যাচও তো তখন যাবে।
×