ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওবামা-আবের প্রতিশ্রুতি ॥ এশিয়ায় মার্কিন উপস্থিতি চীনের উপকারে আসছে

সম্পর্কের নতুন যুগ তৈরি হবে

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

সম্পর্কের নতুন যুগ তৈরি হবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জাপানী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দুটি দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেছেন। তারা নিরাপত্তা সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করা এবং এক বাণিজ্য চুক্তির পথে অগ্রগতি অর্জন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। দু’ নেতা ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে মঙ্গলবার এক বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের। চীনের প্রসঙ্গটি ওই আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল। উভয় নেতাই এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেজিংয়ের ভূখ-গত অভিলাষ নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেন। কিন্তু উভয়েই বলেন যে, চীনকে উস্কানি দেয়া যুক্তরাষ্ট্র-জাপান বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক জোরদার করার উদ্দেশ্য নয়। ওবামা বলেন, চীন এশিয়ায় মার্কিন উপস্থিতির কারণে উপকৃতই হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যকার নতুন প্রতিরক্ষা বন্দোবস্তকে বেজিংয়ের প্রতি এক উস্কানি হিসেবে দেখা উচিতÑ এ ধারণা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ওবামা রোজ গার্ডেনে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চীন বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্ব বাণিজ্যে যোগ দিয়ে এক বিরাট অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কাজেই এক শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্র-জাপান জোটকে কোন উস্কানি হিসেবে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি না। তিনি আরও বলেন যে, কোটি কোটি চীনা দারিদ্র্যের নিগড় থেকে বেরিয়ে এসেছে। এটি সম্ভব হতে পারত না, যদি না আমাদের জোটগুলো এক স্থিতিশীল বাণিজ্য ব্যবস্থা ও বিশৃঙ্খলার নিশ্চয়তা বিধান করত। এর একদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি সংশোধনের কথা ঘোষণা করে। এ সংশোধিত চুক্তির আওতায় জাপানের আত্মরক্ষামূলক বাহিনী আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের সুযোগ পাবে। যখন মার্কিন বাহিনী কোন তৃতীয় দেশের হুমকির মুখে পড়বে, তখন জাপান ব্যবস্থা নিতে পারবে। প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ চীন সাগর ও পূর্ব চীন সাগরে সৃষ্ট সার্বভৌমত্বগত বিরোধ থেকে চীন ও অন্যান্য এশীয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-জাপান মৈত্রীর কারণে ওই ইস্যুটির সৃষ্টি হয়নি। আন্তর্জাতিক বিরোধ মীমাংসার স্বাভাবিক পথে না গিয়ে তারা শক্তি প্রদর্শন করছে। আমরা যে কোন দেশকে যা বলতাম চীনকেও তাই বলেছি, এটি ভুল পথ। সংবাদ সম্মেলনে দু’নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে এক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেন। এ চুক্তি প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১২টি দেশের মধ্যে এক ব্যাপকতর চুক্তি স্বাক্ষরের পথ সুগম করবে। যুক্তরাষ্ট্র-জাপান চুক্তি আমেরিকান শ্রমিকদের স্বার্থ জোরালোভাবে রক্ষা করবে বলে ওবামা দাবি করেন। তবে এ চুক্তির পথে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে কঠিন বাধা রয়েছে বলে দু’নেতা স্বীকার করেন। আবে বলেন, চীনকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলা হচ্ছে না। ওবামা বলেন, ১২ জাতি বাণিজ্য চুক্তি মার্কিন অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করবে এবং চীনকে ওই অঞ্চলে আরও প্রাধান্য বিস্তার করা থেকে নিবৃত্ত রাখবে। এ চুক্তিটি ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) নামে পরিচিত। সম্প্রতি ওবামা তার নিজ দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যরা চুক্তিটি আমেরিকান শ্রমিকদের স্বার্থের ক্ষতি করবে বলে যুক্তি দেখানোতে হতাশ ব্যক্ত করেন। ওবামা বলেন, বাণিজ্য নিয়ে আমাদের উভয় দেশেই রাজনীতি কঠিন হতে পারে। তিনি আরও বলেন যে, তিনি ও আবে কোন চুক্তি সম্পাদন শেষ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কিন্তু ওয়াশিংটনে কোন বাণিজ্য বিল পাস করানো কখনও ছেলেখেলা নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর দ্রুত সম্পন্ন করার আশা ব্যক্ত করেন।
×