ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুসম্পন্ন তিন সিটি নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

সুসম্পন্ন তিন সিটি নির্বাচন

নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্য দিয়ে অবশেষে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বড় ধরনের কোন সহিংসতা ছাড়াই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশকে বিঘœ করার কোন অপচেষ্টাই কাজে দেয়নি। নির্বাচনে মেয়র পদে মুক্তিযুদ্ধের পরীক্ষিত শক্তির জয় সূচিত হয়েছে। এই জয় তিন সিটি এলাকার জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের পথ সুগম হয়েছে। যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের প্রতি অভিনন্দন। নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সার্বিক পদক্ষেপও নেয়। ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়। নির্বাচনে ‘কারচুপি’র যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্তসাপেক্ষ এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার সেসব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার নিশ্চয়তাও দিয়েছেন। অতি উৎসাহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের কার্যকলাপ সত্ত্বেও নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরাও বলেছেন। নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও তার অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছিল। তাদের ভূমিকা নিয়ে তেমন প্রশ্ন ওঠেনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনটি নির্দলীয় হলেও বাস্তবে তা ছিল রাজনৈতিক। নির্বাচনে দলগুলোর প্রতি জনসমর্থনের প্রতিফলন ঘটেছে। ভোটও হয়েছে রাজনৈতিকভাবেই। সুষ্ঠু ও অবাধে ভোটগ্রহণ চলাকালে এবং প্রায় ত্রিশ শতাংশ ভোটার যখন ভোটদান সম্পন্ন করেছেন, তখন নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে, মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সকাল নয়টায় বিএনপি-জামায়াত জোট দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনের নির্দেশ দেয়। প্রার্থীরা তাতে রাজি হয়নি প্রথমে। পরে বাধ্য হয়। আর যে কারণে একজন প্রার্থী রাজনীতি হতে অবসর নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মেয়র পদ বর্জন করলেও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের বর্জন করতে বলা হয়নি। দ্বিমুখী এই নীতির নেপথ্যে একটাই লক্ষ্য, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি। তাদের বর্জন ঘোষণার পরেও ভোট পড়েছে প্রার্থীদের পক্ষে। কাউন্সিলরদের ভোটার আকর্ষণের প্রচেষ্টার কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে হৈচৈ ও কিছুটা হাঙ্গামা হলেও ব্যাপক সহিংসতা হয়নি অতীতের মতো। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য নির্বাচনী প্রচারকালেই সহিংসতা ও অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গাড়িবহর নিয়ে রাজপথে নামা হয়েছিল। ক্ষুব্ধ জনগণের প্রতিরোধকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতির অজুহাতে একদিন হরতালের ডাক দেয়া হয়। তাদের সে চেষ্টা সফল না হওয়ায় তারা হঠাৎ নির্বাচন বর্জনের পরিকল্পনা নেয়। বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খানের টেলি সংলাপ ও মওদুদ আহমদ প্রমুখ নেতার ভাষ্যেই স্পষ্ট যে, সকালেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জনস্রোতের সামনে কারচুপি ভেসে যায়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন। সেবার বিস্তর কারচুপি সত্ত্বেও সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। মিডিয়া ক্যুর চেষ্টাকালে তখন সাধারণ নির্বাচকম-লী জনগণ ভোট গণনাকেন্দ্র পাহারা দিয়ে তাদের কাক্সিক্ষত প্রার্থীর বিজয় ঘোষণা করিয়ে তবেই ঘরে ফিরে গেছেন। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে; এ ধরনের জনস্রোত বিএনপি-জামায়াত সৃষ্টি করতে কী পেরেছে? তাদের কাছে যখন নির্বাচন কমিশন থেকে নাম চাওয়া হয়েছে কোন কোন পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্র হতে বের করে দেয়া হয়েছে। তারা সে নাম সরবরাহ করতে পারেনি। প্রকৃত সত্য হলো, তারা বিভিন্ন কেন্দ্রে এজেন্ট দিতেই পারেনি কিংবা আগ্রহ দেখায়নি। যাদের দিয়েছিল, দলীয় নেতারা তাদের নিষেধ করেন দায়িত্ব পালন করতে। নির্বাচনের তিনদিন আগেই প্রকাশ হয়েছে যে, তাদের পোলিং এজেন্ট থাকছে না। তারা হয়ত মনে করেন, জনগণ দীর্ঘ তিন মাসের বাস পোড়ানো, মানুষ পুড়িয়ে কয়লা করে দেয়া, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে পুড়িয়ে মারা, লাখ লাখ শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা প্রভৃতি গণস্বার্থবিরোধী কর্মকা-কে জনগণ ভুলে গেছে। তাদের সমর্থক অনেক ভোটার হতাশায় ভোট দিতে যাননি। উ™£ান্ত ও ভীত হয়ে নির্বাচন বর্জনও তাদের জন্য কাল হয়েছে। তিন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত জোট সিরিয়াস ছিল না। বরং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির কৌশল নিয়েছিল, যা মাঠে মারা গেছে। নির্বাচনে স্পষ্ট হয়েছে, জনগণ দেশে শান্তি, স্বস্তি ও উন্নয়ন চায়। অরাজকতা, ধ্বংস, সহিংসতা নয়।
×