ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টেন্ডুলকরের পাশে মুমিনুল

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

টেন্ডুলকরের পাশে মুমিনুল

স্পোর্টস রিপোর্টার, খুলনা থেকে ॥ কথা ও কাজের মিল কিভাবে রাখতে হয়, তা যেন ‘হাড়ে-হাড়ে’ বুঝিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশ মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। যাকে বলা হয়, ‘মিস্টার কনসিসটেন্ট’। এক এক করে টানা ১০ ম্যাচে অর্ধশতক করে ফেলেছেন এ ব্যাটসম্যান! ভারতের লিজেন্ড ব্যাটসম্যান শচিন টেন্ডুলকরের পাশেও অবস্থান করছেন! আরেকটি ম্যাচে যে কোন এক ইনিংসে অর্ধশতক হলে টেন্ডুলকরকেও পেছনে ফেলবেন মুমিনুল! ‘আমি ছোটখাটো মানুষ, তাই ভারি ব্যাট নিয়ে ব্যাটিং করতে পারি না। হালকা ব্যাটেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এ ব্যাট দিয়েই খুব ইচ্ছা করে বিশ্বের বড় বড় ব্যাটসম্যানের মতো লম্বা লম্বা ইনিংস খেলি...।’-বলেছিলেন মুমিনুল হক। সেই বলা কথার সঙ্গে পুরোপুরি মিল রেখেই চলেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে যে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই ৮০ রান করেছেন মুমিনুল, ৫০ রান পূরণ করতেই টানা ১০ ম্যাচে শতক করার রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন। যে রেকর্ডটি বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে এখন মুমিনুলেরই আছে। আর কারও নেই। মুমিনুল টেস্টে যে আগে ১২টি ম্যাচ খেলেছেন। শুধুই ঝলক দেখিয়েছেন। ব্যাট হাতে সবসময়ই দলের নির্ভরতা হয়ে হাজির হয়েছেন। এবারও তাই হলেন। বয়স মাত্র ২৩ বছর। বাড়ি কক্সবাজারে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে যে খুলনায় খেলা হয়েছিল, সেই টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে অর্ধশতক করে এক হাজার রানের মালিক হয়েছিলেন মুমিনুল। মাত্র ১১ ম্যাচ খেলেই মুমিনুল এ অর্জন নিজের করে নিয়েছিলেন। এবার টানা ১০ ম্যাচে ১০টি অর্ধশতক করার রেকর্ড গড়েছেন। শচিন টেন্ডুলকর ও ইংল্যান্ডের জন এডরিচের পাশেই অবস্থান করছেন মুমিনুল। মুমিনুলের ওপরে এখন টানা ১১ ম্যাচে অর্ধশতক করা ভারতের বীরেন্দর শেবাগ, গৌতম গম্ভীর, ভিভ রিচার্ডস ও ১২ ম্যাচে টানা অর্ধশতক করা দক্ষিণ আফ্রিকার এবিডি ভিলিয়ার্স আছেন। শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্টে ১২তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে এক হাজারী ক্লাবের সদস্য হয়েছিলেন মুমিনুল হক। মুমিনুল হক মাত্র ১১ টেস্টে ২১ ইনিংস খেলেই এ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। সঙ্গে দ্রুততম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে এ রেকর্ড গড়েছিলেন। ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার ও ব্রায়ান লারার রেকর্ডের পাশে নিজের নাম লিখিয়েছিলেন মুমিনুল। এই ২ কিংবদন্তি টেস্টে ১ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে ২১ ইনিংস খেলেছিলেন। এ ছাড়া টেস্ট ক্যারিয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামার আগে ৪টি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফসেঞ্চুরি ছিল মুমিনুলের। মঙ্গলবার প্রথমদিনেই ১টি অর্ধশতক বেড়ে গেল। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে পরের টেস্টেই শতকও হাঁকিয়েছেন মুমিনুল। সাফল্যের স্বর্গ যেন রচিত হচ্ছে এক এক করে। দুই বছরের মাথাতে শুধুই রান আর রান করে যাচ্ছেন মুমিনুল। দুই বছরের মধ্যে মাত্র ১৩ টেস্টে তার সাফল্য আকাশছোঁয়া, সহযাত্রী ক্রিকেটারদের কাছে ঈর্ষণীয়ও বটে। এ সময়ের মধ্যে মুমিনুল সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে যত ওপরে উঠেছেন ততদূর যেতে পারেননি বাংলাদেশের কেউই। মুমিনুলই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি ১২ টেস্টে চার-চারটি সেঞ্চুরির মালিক। এটাতো গেল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে তুলনা। আরও বড় সাফল্য রয়েছে তার, যা বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের তো নয়ই, ক্রিকেটবিশ্বের প্রায় ৯৯ ভাগেরই নেই। মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যানের আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভারটন উইক্স, ভারতের সুনীল গাভাস্কার ও অস্ট্রেলিয়ার মার্ক টেইলরই শুধু এতকাল ওই দুর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন। সেটা হলো ১২ টেস্টে ১১ বার হাফ সেঞ্চুরি বা তার ওপর রান। ক্যারিয়ারের প্রথম ভাগের প্রায় অর্ধেক সময় হাফ সেঞ্চুরি না হয় সেঞ্চুরি ইনিংস। ভাবা যায়! এবার সেই পালকে আরেকটি অর্ধশতকও যুক্ত হল। এবং মুমিনুল টানা ১০ ম্যাচে অর্ধশতক করার রেকর্ডও গড়লেন। সেই সঙ্গে ভারতের লিজেন্ড ক্রিকেটার শচিন টেন্ডুলকরের সঙ্গেও এখন মুমিনুলের অবস্থান। মুমিনুলের সামনে আরেকটি রেকর্ডের হাতছানি দিচ্ছে। এখন দেশের মাটিতে ৮ ম্যাচ খেলে ৯৪৮ রান করেছেন। আর ৫২ রান হলেই দেশের মাটিতে ১০০০ রান হবে মুমিনুলের।
×