ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জের দুই সহোদর রাজাকারের বিরুদ্ধে আজ তদন্ত রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

হবিগঞ্জের দুই সহোদর রাজাকারের বিরুদ্ধে আজ তদন্ত রিপোর্ট

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হবিগঞ্জের দুই সহোদর রাজাকার কমান্ডার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আজ বুধবার রিপোর্ট প্রকাশ করবে তদন্ত সংস্থা। এ দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘসময় তদন্ত করে হত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও বিতাড়নসহ মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হচ্ছে। আজ সকাল ১১টায় ধানম-ির তদন্ত সংস্থার সেফ হোমে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বড়মিয়া ও ছোট মিয়ার অপরাধগুলো তুলে ধরবেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ। অন্যদিকে হবিগঞ্জের আরেক রাজাকার লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধেও তদন্ত এগিয়ে যাচ্ছে। সত্বর তদন্ত শেষে এরও রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। দুই সহোদরের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি হত্যা, একটি ধর্ষণ, একটি অপহরণ, আটক ও একটি অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর। ৩০ এপ্রিল প্রসিকিউশনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন ধার্য রয়েছে। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে তারা ওই দিন ফরমাল চার্জ জমা দেয়ার জন্য সময় চাইবেন। ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল এ দুই জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পরই হবিগঞ্জ পুলিশ দুই জনকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাদেরকে ১২ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ২৪ ঘণ্টা পর তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল এক নির্দেশে তাদেরকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন। ১১ মার্চ রাজাকার কমান্ডার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়াকে সেফ হোমে নিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সেফ হোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এ দুই আসামির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। মামলার ক্ষেত্রে যা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, তুরিন আফরোজ, তাপস কান্তি বল ও রেজিয়া সুলতানা চমন সোমবার ৯ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান। ২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কগনিজেন্স-৪ এর বিচারক রাজীব কুমার বিশ্বাসের আদালতে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলা (নং- ২৭০/০৯) দায়ের করেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে বানিয়াচং থানা পুলিশকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি আদালত থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। গত বছরের ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়কারী সানাউল হকের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত দল হবিগঞ্জে আসেন। পরে তারা এ বিষয়ে তদন্ত করে বড় মিয়া ও আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের সত্যতা পান। রাজাকার লিয়াকত আলী ॥ হবিগঞ্জের আরেক রাজাকার কমান্ডার লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর সহযোগিতায় হবিগঞ্জ ও বি-বাড়ীয়া জেলাধীন ওই এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ মুক্তিপ্রেমিক নিরীহ লোকজনকে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে অংশ নেন, লিয়াকত আলী। এরই প্রেক্ষিতে লিয়াকতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে জনৈক হরিদাস রায় একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে লিয়াকতের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে আরও তদন্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
×