ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হামলা ভাংচুর ॥ ঢাকার তিন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

হামলা ভাংচুর ॥ ঢাকার তিন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হলেও বিক্ষিপ্ত ঘটনায় সাতটি কেন্দ্রে সাময়িকভাবে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে এসব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এছাড়া ঢাকার তিনটি কেন্দ্রে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় এসব কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বংশালের সুরিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার পর ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসেন কেন্দ্রের বাইরে ইসির ওই নির্দেশনা জানান। তিনি বলেন, এ বিদ্যালয়ে তিনটি কেন্দ্র রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ৫৬৫ নম্বর কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। তবে এ স্কুলে বাকি দুইটি কেন্দ্র ৫৬৪ ও ৫৬৬ নম্বর কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলে। সূত্র জানায়, সুরিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেক পর দুই নম্বর কেন্দ্রে (৫৬৫) ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ভাংচুরের পর সেখানে ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়। এ সময় বাইরে কিছু লোককে বিক্ষোভ করতে এবং পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাকবিত-ায় জড়াতে দেখা যায়। মঙ্গলবার ভোট শুরুর আগে সকাল সাড়ে সাতটা থেকেই ভোটাররা ওই কেন্দ্রের বাইরে লাইনে অপেক্ষায় ছিলেন। শুরুতে পরিস্থিতি ভালই ছিল। কিন্তু হঠাৎই সেখানে গ-গোল শুরু হয়। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নিতেশ কুমার সাহা জানান, বাইরে থেকে লোক এসে গোলযোগ শুরু করে। একই স্কুলের পাশের কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার লুৎফুর রহমান জানান, তিনি ভোট নেয়া বন্ধ করেননি। তবে গোলযোগের কারণে সেখানে সাময়িকভাবে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। পরে ধীরে ধীরে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ে। এই কেন্দ্রে গোলযোগের পর কেন্দ্রে বাইরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। খবর পেয়ে বিজিবির একটি গাড়িও সেখানে উপস্থিত হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সুরিটোলা কেন্দ্রে সম্ভবত ভোট ঠিকমতো হয়নি। সেখানে ভোট বন্ধ করা হয়েছে। বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তিনটি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এই তিনটি কেন্দ্র হলো সুরিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেরে বাংলা রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় ও শ্যামপুর আশরাফ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়। সাত কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল ॥ বিশৃঙ্খলার কারণে ঢাকা দক্ষিণের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের পাশে সিটি কর্পোরেশন স্টাফ কোয়ার্টার উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্থগিত তিনটি কেন্দ্রে আবারও ভোটগ্রহণ শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে দ্বিতীয়বারের মতো ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ৭৩৫ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আহমেদ এ জামিল এবং ৭৩৭ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মনিরুজ্জোহা জানান, পরিস্থিতি শান্ত হওয়ায় আবারও ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এর আগে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে দশটায় বহিরাগত লোকজন কেন্দ্রে প্রবেশ করে গোলযোগের চেষ্টা করায় ধলপুরে সিটি কর্পোরেশন আদর্শ বিদ্যালয়ে অবস্থিত ৭৩৫, ৭৩৬ ও ৭৩৭ নম্বর কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসাররা। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। তবে সাড়ে ১২ টার পর পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কমলাপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে জালভোট প্রদান ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়। ঢাকা দক্ষিণের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল সরদারের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আশরাফুজ্জামান ফরিদের (রেডিও প্রতীক) সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে জাল ভোট দিয়েছে ও কয়েকটি ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে। কমলাপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ শরীফ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই কেন্দ্রে বেশ কয়েক লোক ব্যালট পেপারে ছিনিয়ে নিয়ে সিল দেয়ার চেষ্টা করে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ করা হয়। এরপরই ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। তবে প্রায় এক ঘণ্টা পরে এই কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আরেক ভোট কেন্দ্র শাঁখারী বাজারের পোগোজ স্কুলেও ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। সেখানেও ভোটাররা জোরপূর্বক ভোট দেয়ার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে প্রিসাইডিং অফিসার সাময়িকভাবে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া সরকারী বালক/বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা দেড়টার দিকে আওয়ামী লীগের সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বাকবিত-া শুরু হয়। তারপর দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব কয়েক দফা গুলি বর্ষণ করে। এই সময় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট গ্রহণ স্থগিত না করলেও এ সময় মালিবাগ চৌধুরীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। তবে বেলা আড়াইটার দিকে পুনরায় লোকজনকে এই কেন্দ্রে ভোট দিতে দেখা যায়। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে কাফরুল উচ্চ বিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদা বেগম ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমানের পোলিং এজেন্টদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়।
×