ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভোট বর্জনের ঘোষণা বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভোট বর্জনের ঘোষণা বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোট শুরুর চার ঘণ্টার মধ্যেই বিএনপি তিন সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ‘প্রায় সব কেন্দ্র দখল ও কারচুপির’ অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি বলেন, অধিকাংশ কেন্দ্র থেকেই আমাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছে সরকারদলীয় সমর্থকরা। এর পর তারা নিজেরাই নিজেদের ভোট দিয়েছে। এ অবস্থায় আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করলাম, বর্জন করলাম। প্রহসনের এ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বড় পরাজয় হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন প্রত্যাহার করে ভোট কেন্দ্র থেকে সরে আসার ঘোষণাও দেন মওদুদ। সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, এটা কোন নির্বাচন হয়নি। এটাকে নির্বাচন বলা যায় না। তাই ভোটবিহীন এই নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। এতে গণতন্ত্রের নামে প্রহসন করা হয়েছে। সকাল আটটা থেকে ২০ দল সমর্থিত প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি এবং সহযোগিতায় ভোট কেন্দ্রগুলো দখল করে নিয়েছে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের ক্যাডাররা। নারী প্রার্থী ও নারী পোলিং এজেন্টদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। অনেক কেন্দ্রের ভেতরে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। দু’-একটি কেন্দ্রে যেসব এজেন্ট ঢুকেছিল, তাদের সাড়ে আটটার মধ্যে বের করে দেয়া হয়েছে। অনেক এজেন্টকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। শতকরা ৫ ভাগ মানুষও এ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেননি বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা আগেই আশঙ্কা করেছিলাম সরকার ও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করবে না। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমাদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। নির্বাচন তো দূরের কথা, আজকে সরকার নির্বাচনটাকেই অর্থহীন করে দিয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করতে নয়, তারা ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছে। তারা শাসক দলের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্রে চিরকুট দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের দেয়া ওই চিরকুট ছাড়া কাউকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। নগ্নভাবে ভোটারদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা সকল থেকে নিজেরা ব্যালট পেপারে সিল মেরে ভোট বাক্স ভর্তি করেছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, সদস্য মাহফুজউল্লাহ, আবদুল হাই শিকদার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সানাউল্লাাহ মিয়া, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, দলের নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন, শিরিন সুলতানা, শামা ওবায়েদ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে তাবিথ আউয়াল বলেন, ভোট কেন্দ্রে ভোট দেয়ার কোন পরিবেশ ছিল না। তেজগাঁওয়ে আমার সামনে আমার এক পোলিং এজেন্টকে লাঞ্ছিত করা হয়। আমি ভেতরে ঢুকতে চাইলে পুলিশ আমাকে বাধা দেয়। তিনি বলেন, এর আগে আমি একটি ভোট কেন্দ্রে এক প্রিসাইডিং অফিসারের ডেস্কের নিচে একটি ব্যালট বাক্স দেখতে পেয়ে তাকে এটা কিসের জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অতিরিক্ত। কিন্তু তাকে এটার সিরিয়াল নম্বর দেখাতে বললে তিনি কিছুতেই আমাকে দেখাননি। তিনি বলেন, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই জাল ভোট হয়েছে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, আমরা আগেই আশঙ্কা করেছিলাম সরকারদলীয় লোকজন ভোট কারচুপি করবে। সে আশঙ্কাই সত্য হলো। তিনি বলেন, যেভাবে ভোটকেন্দ্রগুলো থেকে আমাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না। এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় চট্টগাম মহানগরীর দেওয়ানহাট উন্নয়ন আন্দোলনের নির্বাচনী কার্যালয়ে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম নির্বাচন বর্জন ও রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ৮০ শতাংশ কেন্দ্র দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ ক্যাডারা। ভোট কেন্দ্রে আমাদের কোন এজেন্টকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় আমার সমর্থকদের ফের হামলা করেছে তারা। তাই নির্বাচন বয়কট করতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, আমি আর রাজনীতি করব না। সমাজসেবা নিয়েই ব্যস্ত থাকব। চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ও মনজুর আলমের নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সকাল থেকে ভোট কেন্দ্র দখল, কারচুপি ও ব্যাপক অনিয়মের প্রতিবাদে আমরা ভোট বর্জন করলাম। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানও উপস্থিত ছিলেন। আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, এই নির্বাচনের মতো এত নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য নির্বাচন আয়োজন হতে দেখিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার আশপাশের চেলাচামুন্ডা ছোট মন্ত্রীর কথা বার্তা শুনে আগেই অনুভব করেছিলাম নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘায়ু করা হবে বলে যে আশঙ্কা ছিল সে আশঙ্কাই প্রমাণিত হলো। এমাজউদ্দীন বলেন, সকালে আমি ঢাকা কলেজে আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভোট দিতে যাই। একজন পুলিশ অফিসারের সহায়তা ভোট কেন্দ্রে ঢুকে ভোট দিতে সক্ষম হই। কিন্তু বের হয়ে কলেজের সামনে আসলে উপস্থিত কয়েকজন ঢাকা কলেজের ছাত্র আমাকে লক্ষ্য করে বলে, আপনি অসম নীতির রাজনীতির নীতি নির্ধারক। মানুষ পুড়িয়ে এখন এসেছেন ভোট দিতে। আপনার ভোট দেয়ার কোন অধিকার নেই। তিনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেন, সিটি নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা অমার্জনীয়।
×