স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত খুলনার শিরোমণিতে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরী। গত ৪৮ বছরেও পূর্ণতা পায়নি বিসিকের এই শিল্পনগরী। দীর্ঘদিন যাবত এখানকার রাস্তাসহ অবকাঠামো উন্নয়ন হয় না। এই শিল্পনগরীতে দিন দিন বাড়ছে রগ্ণ শিল্পের সংখ্যা। ৯৬টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে ৩০টি বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, শিল্প প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি, উদ্যোক্তাদের ঋণ পেতে জটিলতা, গ্যাসের অভাবে বিদ্যুত নির্ভরতা প্রভৃতি সমস্যার কারণে বিসিক খুলনার সম্ভাবনাময় এই শিল্পনগরী মুখ থুবড়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের কথা বিবেচনায় রেখে ১৯৬৬ সালে খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে খানজাহান আলী থানাধীন শিরোমণি এলাকায় নির্জন পরিবেশে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। এর জমির পরিমাণ ৪৪ দশমিক ১০ একর। মোট প্লট সংখ্যা ২৪০টি। প্লটগুলো অনেক আগেই উদ্যোক্তাদের কাছে বণ্টন করা হলেও বিভিন্ন সময়ে এখানে কেমিক্যাল, বনজ, লেদার, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্যাকেজিং, খাদ্যজাত শিল্প ইউনিট গড়ে ওঠে ৯৬টি। ফাঁকা প্লট রয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। শিল্প ইউনিটগুলোর মধ্যে ৩০টি রগ্ণ শিল্পে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিরোমণি শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। বিসিক শিল্পনগরীতে ৬ হাজার ফুট রাস্তা রয়েছে, যা চলাচলের অনুপযোগী। ড্রেন-নর্দমার অবস্থাও খুবই খারাপ। বৃষ্টি হলে নোংরা পানি কাদায় রাস্তাঘাট সয়লাব হয়ে যায়। বিভিন্ন কারখানাতেও নোংরা পানি প্রবেশ করে। বিসিক শিল্পনগরীর চারপাশে আরও ৬টি রাস্তা রয়েছে। এসব রাস্তার সিংহভাগই খারাপ। রাস্তা খারাপ হওয়ায় পণ্যবাহী ট্রাকগুলো কারখানার সামনে যেতে বা কারখানা থেকে পণ্য নিয়ে বের হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। রাস্তার বেহাল আবস্থার কারণে অনেক সময় শিরোমণি-সংলগ্ন সড়কে ট্রাক থেকে মালামাল আনলোড করে পরে তা অন্য পন্থায় কারখানায় নিয়ে নেয়া হয়। একইভাবে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ভ্যান কিংবা অন্য মাধ্যমে শিরোমণি-সংলগ্ন সড়কে এনে ট্রাকে বোঝাই করতে হয়। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়সহ যথেষ্ট সময়ের অপচয় হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, খুলনা অঞ্চলে গ্যাসের প্রাপ্যতা না থাকায় এখানকার শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। দফায় দফায় বিদ্যুতের মূূল্যবৃদ্ধি করায় উৎপাদিত পণ্যের খরচও বেড়ে গেছে। তাছাড়া লোডশেডিং, বিদ্যুত বিভ্রাটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সার্ভিস চার্জ দফায় দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। অথচ শিল্প মালিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়নি। এসব কারণে শিল্প উদ্যোক্তারা শিরোমণি বিসিক শিল্পনগরীতে নতুন শিল্প গড়ে তুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আর প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় ইতোপূর্বে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠান এক এক করে রগ্ণ হয়ে পড়ছে। তাছাড়া বিসিকের অনেক জমি নিয়েও জটিলতা রয়েছে। যে কারণে ব্যাংকের ঋণ পাচ্ছে না উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এসব সমস্যা সমাধানে বার বার দাবি জানানো হলেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। বিসিক শিল্পনগরী খুলনার স্টেট অফিসার মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখানকার সকল প্লট অনেক আগেই বরাদ্দ হয়েছে। মোট ২৪০টি প্লটের মধ্যে ৯৬টিতে শিল্প ইউনিট গড়ে উঠেছে। তিনি জানান, ২০১০-১১ অর্থবছরে মাত্র ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য। সে অর্থ দিয়ে কিছু রাস্তা সংস্কার করা হয়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: