ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কে আসছে সব টেলিফোন এক্সচেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কে আসছে সব টেলিফোন এক্সচেঞ্জ

ফিরোজ মান্না ॥ ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হচ্ছে দেশের সব টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। গত বছরের আগস্টে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। নতুন এই প্রকল্পের মধ্যে থাকবে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও এক্সচেঞ্জগুলোতে নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন। এনজিএনভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পে সরকারের তহবিল থেকে ৪০৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পে চীন সরকার ঋণ দেবে ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের গ্রাম পর্যায়ে ল্যান্ড টেলিফোন সেবা পৌঁছে যাবে। সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (বিটিসিএল) ও চীন সরকার নির্বাচিত মেসার্স চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের (সিএমইসি) মধ্যে এরই মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ফাইবার অপটিক কেবল স্থাপনের পাশাপাশি প্রতিটি এক্সচেঞ্জের পুরনো ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি ও কপার-বেজড টেলিফোন নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। এর আগে রাজধানীর ১ লাখ পুরনো টেলিফোন ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনাসহ ৭১ হাজার নতুন সংযোগ দেয়ার কাজ বাস্তবায়ন করছে বিটিসিএল। সারাদেশে বিটিসিএলের ৯ লাখ ৩০ হাজার ল্যান্ডফোন গ্রাহক রয়েছে। এখনও ৬ লাখ ৮০ হাজার গ্রাহক আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের বাইরেই রয়ে গেছে। এজন্য চীনের অর্থায়নে নেয়া এ প্রকল্পটির মাধ্যমে সাত লাখ গ্রাহককে ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রূপকল্প-২০২১ এর আওতায় ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন পলিসি (আইসিটি) ২০০৯ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই নীতিমালার আওতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে দেশের গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনে ব্যবস্থাকরণ, জাতীয় পর্যায়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করে সব সরকারী প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্তকরণ ও ইন্টারনেট (আইপিপি) টেলিফোন এবং ভিডিও কনফারেন্সিং চালুর জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোকে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিটিসিএলের বিদ্যমান ল্যান্ড টেলিফোন নেটওয়ার্ক পুরনো টেকনোলজি-নির্ভর হওয়ায় তা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভয়েস কল ছাড়াও যুগের চাহিদার অনুসারে ইন্টারনেট, ডাটা ও ভিডিও আদান-প্রদানের সুযোগ নেই। এজন্য দেশব্যাপী বিদ্যমান পুরনো যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে আধুনিক ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি এবং ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সারাদেশেই ল্যান্ডফোনের মাধ্যমে ভয়েস-ডাটা ও ভিডিও সুবিধা পাওয়া যাবে। ঢাকায় কয়েকটি এলাকায় ত্রিমাত্রিক সুবিধা চালু করেছে বিটিসিএল। অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে একটা সংযোগ দিয়েই এই তিনটি সেবা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা শহরের পুরনো ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপন (১৭১ কেএল) প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি এই সেবার উদ্বোধন করা হয়েছে গত বছরের শেষ দিকে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) শেরেবাংলা নগর এক্সচেঞ্জে এক লাখ ৭১ হাজার নামে পরিচিত প্রকল্পের আওতায় ত্রিমাত্রিক সেবা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা শহরের পুরনো ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপন প্রকল্পটি ১৯ জুলাই ২০০৯ সালে হাতে নিয়েছিল বিটিসিএল। ২০১৪ সালে বিটিসিএলর নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এজন্য প্রচলিত কপার কেবলের ব্যবহার সীমিত রেখে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যন্ত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ভবন, এমনকি বাসা পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করা হয়। গ্রাহক পর্যায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টেলিফোন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আমদানিকৃত বৈদেশিক যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং টেস্টিং ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বর্তমানে উত্তরা, গুলশান, শেরেবাংলা নগর, রমনা, মগবাজার, নীলক্ষেত, মিরপুর, বাবুবাজার, চকবাজারসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে এক লাখেরও বেশি টেলিফোন যে কোন সময় চালু করা যাবে। যদিও দুই দফা সময় বাড়ানো হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে তা শেষ করার কথা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। এক বছর বাড়িয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়িয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ করা হয়। বর্তমানে নগরীর কয়েকটি এলাকায় এই সেবা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত নগরীর সব এলাকায় সেবা পৌঁছে দিতে পারেনি বিটিসিএল।
×