ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী দর ২১, বিক্রি হচ্ছে ১ টাকায়

বোরোর বাম্পার ফলন তবুও ॥ কৃষকের মুখে হাসি নেই

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

বোরোর বাম্পার ফলন তবুও ॥ কৃষকের মুখে হাসি নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৮ এপ্রিল ॥ কলাপাড়ায় এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে, কিন্তু কৃষকের মুখে হাসি নেই। উৎপাদন খরচের চেয়েও ধানের দাম কম থাকায় কৃষক চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ফের বোরোর আবাদে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বোনা আউশের আবাদে। সরকারীভাবে কলাপাড়ায় ১৫০ মেট্রিক টন বোরো ধান ২১ টাকা কেজি দরে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু কৃষকরা এর থেকেও কোন সুবিধা পাচ্ছেন না। সরকারের উদাসীনতাকে তারা দায়ী করেছেন। কলাপাড়ায় সরকারীভাবে বোরো কেনার কার্যক্রম শুরু হয়নি। এ সুযোগকে পুঁজি করে দালাল-ফড়িয়া মধ্যস্বত্বভোগী চক্র এখন পানির দামে ধান কিনছে। এ বছর ৪৬ কেজিতে এক মণ হিসাবে ধানের দাম দালালরা নির্ধারণ করেছে মাত্র চার শ’ টাকা। যেখানে গত বছর এ ধান বিক্রি করেছে ছয়শ’ টাকা মণ দরে। চারশ’ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। তা আবার নগদ নয়, বাকিতে। কৃষকের দেয়া তথ্যানুসারে, এক বিঘা অর্থাৎ ৩৩ শতক জমিতে বোরোর আবাদ করতে সবকিছু নিয়ে প্রায় সাত হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। যেখানে ১৬-১৯ মণ ফলন পেয়েছেন। যা বিক্রি করলে লাভ নেই। ফলে কৃষক পড়েছেন দুরবস্থায়। নীলগঞ্জ আইপিএম ক্লাব সভাপতি কৃষক সুলতান গাজী জানান, নিজেদের অর্থায়ন ও উন্নয়ন সংস্থা আভাসের সহযোগিতায় লবণ পানির প্রবেশ মুখে কালভার্ট ও খালে বাঁধ দিয়ে মিঠা পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বোরো চাষ করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি দাম কমে যাওয়ায়। একই দাবি কৃষক মাসুম চৌধুরীর। কৃষকের দেয়া তথ্যানুসারে এ বছর শুধু নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দুইশ’ একর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। কিন্তু বাজারমূল্যেও ন্যায্যতা না থাকায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন অধিকাংশ চাষী। নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, নওগাঁর ধামইরহাটে চলতি বোরো মৌসুমে ১৮ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। সঠিক সময়ে সার কীটনাশক প্রয়োগ ও ধান চাষের অনুকূল পরিবেশ থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। কৃষকরা ধান মাড়াইয়ের কাজে মহাব্যস্ত সময় পার করছে। তবে বাজারে ধানের দাম কম থাকায় অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। জানা গেছে, নওগাঁর আদি বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত ধামইরহাট উপজেলায় এবার ১৮ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বোরো ধান চাষ করেছে। ১৭ হাজার ২শ’ ৩৫ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের এবং এক হাজার তিনশ’ ৭০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করা হয়। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৩শ’ ৫৭টি বিদ্যুত চালিত গভীর নলকূপের মাধ্যমে সাত হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে পানি সেচ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট জমি বিদ্যুতচালিত এসটিডব্লিউ ১৭৭টি ও ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করে কৃষকরা। জিরাশাইল, ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, পারিজা প্রভৃতি জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। মালাহার গ্রামের কৃষক বদিউল আলম বলেন, প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হওয়ার এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতি ৪০ কেজি ধান ৫শ’ থেকে ৫শ’ ৩০ টাকা দরে কেনা বেচা চলছে। কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ধানের ন্যায্য মূল্য না পেলে তাদেরকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাছাড়া ধানের উৎপাদন খরচ আগের থেকে বেড়ে গেছে। সরকারীভাবে মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে সরকারী খাদ্য গুদামে ধান ক্রয় করলে তারা উপকৃত হবেন বলে দাবি করেন কৃষকরা। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, ধান চাষের অনুকূল পরিবেশ এবং অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ধান গাছের তেমন কোন রোগ বালাই নেই বললেই চলে। রাজশাহীতে শ্রমিক সঙ্কট স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে হাওয়ায় দোলানো বোরোর সোনালি শীষে মনে প্রশান্তি দেখা দিলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর শ্রমিক সঙ্কটের মুখে অশান্তিতে রয়েছেন রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক। মাঠের পর মাঠ জুড়ে পাকা ধান নিয়ে ছোটাছুটি ও হতাশায় ভুগছেন তারা। শুধু শ্রমিক সঙ্কটের কারণে সময়মতো সোনার ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। কৃষকরা জানান, প্রতিবছর এইসময়ে বোরো ধান কাটতে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা দলবেঁধে আসে। তবে এবার ধানের দাম কম হওয়ায় শ্রমিকরা ধান না কেটে অন্য কাজ করছেন। শ্রমিকরা বলছেন, ধান কাটা কাজের চেয়ে অন্য কাজে লাভ বেশি। তানোর উপজেলা ধানতৈড় গ্রামের কৃষক আশরাফুল আলম জানান, এ বছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন, সেই ধান পেকে মাঠে পড়ে আছে। শুধু শ্রমিক না পাওয়ায় ঘরে তুলতে পারছেন না। মাঠে পড়ে থাকা পাঁকা ধান নিয়ে শিলাবৃষ্টির শঙ্কায় ভুগছেন তিনি। একই উপজেলার দেবীপুর গ্রামের কৃষক এনতাজুর রহমান বলেন, তিনি এ বছর ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। সেই ধান পেকে মাঠে পড়ে রয়েছে। দ্রুত ঘরে তোলা দরকার। কিন্তু শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা থেকে তানোরে ধান কাটতে আসা কয়েকজন শ্রমিক বলেন, বিগত বছরে আমাদের এলাকা থেকে দলে দলে শ্রমিকরা বরেন্দ্র অঞ্চলে আসত বোরো ধান কাটতে। তবে এখন কেউ আসতে চাচ্ছে না। ধান কাটার চেয়ে অন্য কাজে বেশি লাভ হওয়ায় এ বছর শ্রমিকরা আসতে চাচ্ছে না।
×