ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাই উপযোগী শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

চাই উপযোগী শিক্ষা

কোন পরিবারের সামাজিক বা আর্থিক অবস্থান যাই হোক না কেন, ওই পরিবারের শিশুসন্তানটির শিক্ষা গ্রহণ সব সময়েই অনুমোদন করে অগ্রসর সমাজ। যদিও শিক্ষার্জন একটি ব্যয়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, বিশেষ করে যে সমাজে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক, যেখানে অনেক পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো পরিস্থিতি। এ ধরনের সমাজে বা পরিবারে শিশুটিকে বিদ্যালয়ে পাঠানোর পরিবর্তে কাজে পাঠাতেই স্বস্তি বোধ করে অভিভাবকরা। কারণ তাতে দুটো পয়সা ঘরে আসে। পক্ষান্তরে বিদ্যালয়ে পাঠালে উল্টো ব্যয় বাড়ে। শিক্ষা উপকরণ ক্রয় এবং বরাদ্দকৃত সময়Ñ উভয় বিবেচনায় সন্তানকে লেখাপড়া শেখানো বহু দরিদ্র পরিবারেই বিলাসিতা যেন। তবে এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এগিয়ে এলে এবং সরকার শিক্ষাব্যয়ের পুরোটা বা বড় অংশের দায়িত্ব বহন করলে শিক্ষার্জন সহজ হয়। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ এখন অনেক সহজ হয়ে উঠেছে সরকারী নীতির কারণে। সেইসঙ্গে বিদেশী অনুদানে পরিচালিত বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও শিক্ষা প্রকল্প হাতে নিয়ে এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো ভূমিকা রাখছে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তির চেক প্রদানকালে শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে জানান, কোন শিশুই স্কুলের বাইরে থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ়তা প্রশংসাযোগ্য। দেশের শিক্ষা বিস্তারে তাঁর আন্তরিকতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। শিক্ষার মান বাড়াতে বিগত ছয় বছরে এ খাতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রণীত শিক্ষানীতিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া গণিত, ভাষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাও সংযুক্ত হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিনামূল্যে ১৫৯ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে, যা সত্যিই বিস্ময় জাগানোর মতো। দেশের প্রতিটি শিশুকে স্কুলে নেয়ার পরিকল্পনাটি অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার সামান্যতম অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে উপযুক্ত শিক্ষা নিয়ে। শিশুদের সাক্ষর করানোই মূল লক্ষ্য নয়, বরং তাদের বাস্তবোচিত জ্ঞান বিতরণ এবং কর্মমুখী পাঠদানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষ্যে যথাযথ কারিকুলাম বা পাঠ্যসূচী তৈরিই বড় বিবেচনার বিষয়। শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে, সুর করে পড়া শিখছেÑ এটি সুন্দরতম ব্যবস্থা কোন সংশয় নেই। আমরা মনে করি, দেশের প্রতিটি শিশুকে বিদ্যালয়মুখী করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার সফলতা দেখাকÑ এটা প্রত্যাশিত। পাশাপাশি প্রত্যাশা শিশুরা সুশিক্ষা লাভের ভেতর দিয়ে সুনাগরিক হয়ে উঠুক। বিদ্যা তাদের জীবনে যেন নিরর্থক বা লক্ষ্যবিহীন না হয়। গভীর বিবেচনাবোধ এবং বাস্তবোচিত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা থেকেই এমন পাঠ্যসূচী তৈরি করা হোক, যা শিশুকে কাক্সিক্ষত শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলবে। যা তার বাস্তব জীবনে কাজে আসবে। আমরা কথায় কথায় বলি, ‘শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত।’ আমরা এও বলে থাকি ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।’ অর্থাৎ আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যত। সেই ভবিষ্যত বিনির্মাণ গভীর সুবিবেচনাপ্রসূত হওয়াই উচিত। শিক্ষণীয় বিষয় এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি দুটোই শিশুর জন্য কেমন হবে, কী হবে তার ওপরই নির্ভর করে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার বিষয়টি। সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে আরও গভীর চিন্তা-ভাবনা করে শিশুশিক্ষার উপযুক্ত একটি পথ খুঁজে বের করতে সমর্থ হবেনÑ এই প্রত্যাশা সবার।
×