ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মওদুদের হুঁশিয়ারি

আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জেতানোর চেষ্টা করলে কঠোর আন্দোলন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জেতানোর চেষ্টা করলে কঠোর আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশ ও র‌্যাবের সহযোগিতায় সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে ভোটকেন্দ্র দখল করে একটি নীল নকশার নির্বাচনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করার চেষ্টা করলে যে আন্দোলন চলছে তা আরও জোরদার করা হবে। সেই দুর্বার আন্দোলনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে দুপুরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট এবং দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হুমকি দেয়া হচ্ছে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আমরা পুরোপুরি অনিশ্চয়তার মধ্যদিয়ে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাচ্ছি। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা, নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে সুযোগ দেবে। তা না হলে জনগণ এই নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমা করবে না। মওদুদ বলেন, আশা ছিল সরকার সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং সবপক্ষকেই সমান সুযোগ দেবে। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং নির্বাচন নিয়ন্ত্রণে নিতে ইসিকে ব্যবহার করছে, যার প্রমাণ নাম-ঠিকানাবিহীন প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার অনুমোদন দেয়া। তিনি বলেন, বিএনপিকে বিরাট প্রতিবন্ধকতা এবং প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে এই নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে। মওদুদ বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরশেন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মির্জা আব্বাস ভোটারের কাছে যেতে পারেননি। এমনকি ৩৬ জন কাউন্সিলরও নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারেননি। তাঁরা আত্মগোপনে আছেন। পুলিশের হয়রানির কারণে আমাদের শত শত নেতাকর্মী এ নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ওপর চারবার হামলা হয়েছে। তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। দেশবাসী সেটা দেখেছে। কিন্তু সেখানে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন যে আচরণ করেছে তাতে মর্মাহত হওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সহদফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ। দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে রিপন বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি মনিটরিং সেল কাজ করবে। দলের অন্য নেতাদের নিয়ে গঠিত এ মনিটরিং সেলের দায়িত্বে থাকব আমি নিজেই। এই সেল নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখবে। রিপন বলেন, সরকারের সবুজ সঙ্কেত না থাকায় নির্বাচন কমিশন চাওয়ার পরও সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। বিএনপি গণতন্ত্র এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাসী। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরাই বিজয়ী হবেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে তাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি-না আশঙ্কা রয়েছে। তবে যদি নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে হবে। নির্বাচন কমিশন যদি এখনও চায় তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব। আর যদি তাঁরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে আল্লাহর ওয়াস্তে যেন পদত্যাগ করে চলে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে রিপন বলেন, নির্বাচনের আগে যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় লোকজন বিএনপির প্রার্থীদের এজেন্ট, কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘরে হানা দিয়ে তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তাদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করছে। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নয়। রিপন বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে কিছু ভুঁইফোড় সংগঠন যে ধরনের জরিপ রিপোর্ট বা সার্টিফিকেট দিচ্ছে তা বিএনপি প্রত্যাখ্যান করছে। তাদের এ ধরনের জরিপ কখনই মানবে না বিএনপি। ‘মওসুম’ নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠনকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে নিন্দা প্রকাশ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, বিএনপির সহদফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, শামীমুর রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক সাংসদ হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার প্রমুখ। ১০১ দলীয় আইনজীবীকে পর্যবেক্ষক করতে চায় বিএনপি : সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১০১ জন দলীয় আইনজীবীকে পর্যবেক্ষক করতে চায় বিএনপি। এ ব্যাপারে অনুমোদন দেয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে দাবি জানিয়েছেন বিএনপির প্রতিনিধিরা। সোমবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বৈঠক করে এ দাবি জানান। এ সময় তাঁরা ১০১ জনের নামের তালিকা নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলামের কাছে জমা দেন। বৈঠক শেষে ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সিইসির সঙ্গে সাক্ষাত করে দাবি জানিয়েছি সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে ১০১ জন সদস্যকে পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমোদন দেয়ার জন্য। এরপর সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা নামের তালিকাটি জমা দিয়েছি। পর্যবেক্ষকের নামের তালিকায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের নামও রয়েছে। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে আমরা বিগত জাতীয় সংসদ ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান নেবে কিন্তু কোন ঝামেলা হলে ক্যান্টনমেন্ট থেকে দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তাই আমরা দাবি করেছিলাম ভোটগ্রহণকালে নির্বাচনী এলাকায় সার্বক্ষণিক সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখতে।
×