ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ পাকিস্তান প্রথম টেস্ট আজ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাদেশ পাকিস্তান প্রথম টেস্ট আজ শুরু

মিথুন আশরাফ, খুলনা থেকে ॥ খুলনায় কোন জয় মানেই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানার উদ্দেশ্যে জয়টি উৎসর্গ করা। এবারও কী সে রকম কিছুই ঘটাতে পারবে বাংলাদেশ? তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শেষ। প্রতি ম্যাচেই জিতেছে বাংলাদেশ। শেষ হয়েছে টি২০ ম্যাচটিও। সেটিতেও জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশই। এবার টেস্ট সিরিজে নামার পালা। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট দিয়ে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে সকাল ১০টায় প্রথম টেস্ট শুরু হবে। আর সেই ম্যাচেও জয়ের দিকেই দৃষ্টি সবার। আত্মবিশ্বাসের জ্বালানিতে পরিপূর্ণ থাকা মুশফিক, তামিম, সাকিবরা এবারও জয় তুলে নেবেন, সেই জয় রানাকে উৎসর্গ করবেন, সেটিই এখন সবার প্রত্যাশা। এ পর্যন্ত খুলনায় ২ টেস্ট খেলা হয়েছে বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হেরেছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে নবেম্বরেই জিতেছে। সেই জয় রানাকে উৎসর্গ করা হয়েছে। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে চার ওয়ানডে খেলে, সব জিতেছে বাংলাদেশ। এমনকি এক টি২০ খেলে, সেটিতেও জয় মিলেছে। রানার বাড়ির আঙ্গিনায় হওয়া স্টেডিয়ামে প্রতি মুহূর্তেই ক্রিকেটাররা রানা থেকে অনুপ্রাণিত পান। সেই অনুপ্রেরণা সবসময় বাংলাদেশকে জয় এনে দেয়। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে তা হলেই তো টেস্টেও বাজিমাত করা হয়ে যায়। অন্তত প্রথম টেস্ট জিততে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা থাকে। নয়ত হবে ড্র। তা যদি মিলে তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা মুহূর্তই মিলে যাবে। যে পাকিস্তান একটা সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্রিকেটে বলতে গেলে ‘একনায়কতন্ত্র’ কায়েম করে ফেলেছিল, সেই পাকিস্তান নাস্তানাবুদ হয়। ওয়ানডে, টি২০’র পর টেস্টেও এখন সিরিজে হার না হলেই হয়। পারবে বাংলাদেশ সেই সাফল্য কুড়িয়ে আনতে? আগের ৮ টেস্ট খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি জয়ও নেই। এবার যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে নবম টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ, তখন জয়ের কথাই বলতে পারছে। এর আগে যা কোনদিন দেখা যায়নি। ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও ১ উইকেটে হারতে হয়েছিল। এরপরও কখনই বলা যায়নি যে পাকিস্তানকে হারাব। এবার টানা ৪ ম্যাচ জেতে এমন আত্মবিশ্বাস কুড়িয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তানকে হারানোর লক্ষ্যই সেট করে ফেলেছে। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম যা বলেছেন তার হিসেব দাঁড়ায় এমন, ‘আমরা জয়ের জন্যই খেলতে নামব। যদি ৫ দিন ভাল করতে পারি, তাহলে জয় ধরা দেবে। আমাদের দলে সেই ম্যাচ উইনার আছে।’ মুশফিক ঠিকই বলেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে নামার আগে বিশ্বকাপ খেলেছে বাংলাদেশ। কী দুর্দান্তই না খেলেছে। প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। আবার বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দেশের মাটিতে সিরিজ খেলে ওয়ানডেতে ৫-০, টেস্টে ৩-০ ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে। সব হিসেব ধরলে এমন হচ্ছে, দেশের মাটিতে টানা ১২ জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। তাই তো পাকিস্তান টেস্ট দলের অধিনায়ক মিসবাহ উল হক বাংলাদেশকে নিয়ে সতর্ক বাণীই দিয়েছেন। বলেছেন, ‘বাংলাদেশ অনেক ভাল দলে গড়ে উঠেছে। এ দলটির ভেতর প্রচুর আত্মবিশ্বাস। যে আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানতে হবে। না হলে বিপদ আসতে পারে। তাদের নিয়ে আমরা সতর্ক।’ একটি বারের জন্যও মিসবাহ বলতে পারেননি বাংলাদেশকে হারিয়ে দেব। কেন বলতে পারেননি? বদলে যাওয়া বাংলাদেশকেই যে দেখছেন মিসবাহ। যে পাকিস্তান দলকে টানা ১৬ বছর হারানো যায়নি, সেই দলকে এক নিমিষে ৮ দিনের মধ্যে ৪ ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ! এমন দলের বিপক্ষে সতর্ক না থেকে উপায় আছে। মিসবাহর অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়েছে, এতটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিয়েছেন; কী করবেন, কী বলবেন, তা যেন বুঝতে পারছেন না। ‘জয় পাব’- এমনটি বলতেই পারছেন না। নেই মুখেও কোন হাসি। যদি হেরে যান, তাহলে সমালোচনা আরও বাড়বে। এমনকি পাকিস্তান যদি ড্র’ও করে তাহলেও ম্যানেজমেন্ট, ক্রিকেটারদের দুয়োধ্বনি শুনতে হবে। কী বিপাকেই আছেন মিসবাহরা। তাই বলে একেবারে হাল ছেড়ে দেবে, এমন দল পাকিস্তান নয়। তাই তো একটু যেন নিচু স্বরে হুঙ্কারও মিসবাহর কণ্ঠে, ‘টেস্টে আমাদের দল অনেক শক্তিশালী। পেছনে কী ঘটেছে, তা নিয়ে একদমই ভাবছি না। আমরা টেস্ট নিয়ে ভাবছি।’ মিসবাহর শক্তি বোঝাই যাচ্ছে ইউনুস, হাফিজের সঙ্গে নিজের ব্যাটিং নিয়ে। কারণ, বোলিংয়ে যে ওয়াহাব রিয়াজ, সাঈদ আজমলরা আছেন; তাদের ছন্দে পাওয়া কঠিন। মিসবাহ যদি হুঙ্কার দিতে পারেন, তাহলে মুশফিক তো উচ্চৈঃস্বরেই তা করবেন। এটাই স্বাভাবিক। এ মুহূর্তে বিপাকে তো পাকিস্তানই। মুশফিক তাই বলেই দিয়েছেন, ‘জয়ের জন্যই খেলব। ভাল খেললে ফল আমাদের পক্ষেই আসবে।’ তামিম, সাকিব, মুশফিক, মুমিনুলদেরই ভাল খেলতে হবে। আর কোচ হাতুরাসিংহে তো সরাসরি, ‘সিরিজ জেতব’ বলেই দিয়েছেন। পাকিস্তান ক্রিকেটাররা যেখানে নিজেদের মনের মতো মেলে ধরতে পারছেন না। গুটিয়ে রাখছেন। সব নিজেদের খুশিমত করতে পারছেন না। হারের শঙ্কার বাধা সবসময়ই তাদের আটকে রাখছে। সেখানে পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ করার পর টি২০’তেও জিতে উড়ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। সবকিছুতেই বিশ্বাস নিয়েই এগিয়ে চলছে। যে বিশ্বাস আজ থেকে ৫ দিন থাকলে পাকিস্তানকে আবারও হারিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশ। জিতলেই তো রানাকে সেই জয় উৎসর্গও করা হয়ে যাবে।
×