ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানুষ পুড়িয়ে মারার বিচারের হাত থেকে খালেদার রেহাই নেই ॥ তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

মানুষ পুড়িয়ে মারার বিচারের হাত থেকে খালেদার রেহাই নেই ॥ তথ্যমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যতই সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করুন, মানুষ পুড়িয়ে মারার জন্য বিচারের হাত থেকে তার রেহাই নেই বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তথ্যমন্ত্রী। গত তিন মাসের হরতাল-অবরোধে মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ যানবাহনের ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া হয়তো বলার চেষ্টা করবেন, আমি আগুন সন্ত্রাসী নই, কিন্তু তিনিই সেই আগুন সন্ত্রাসী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন মিথ্যাচার, অপকর্ম ও হত্যাযজ্ঞ আড়াল করার দলিল। তিনি যতই সাফাই দেন না কেন, জনগণের চোখের সামনে মানুষ পোড়ানোর অপরাধ ঢাকা পড়বে না। লিখিত বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বেগম জিয়া বলেছেনÑ ভোটের মাধ্যমে জনগণ নিরব প্রতিশোধ নেবে। কার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ, কিসের প্রতিশোধ? ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত এবং পরবর্তী ২০১৫-এর ৫ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে যে জাদুকরী উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, জনগণ ঘরে ঘরে যে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে, সেই জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে কেন প্রতিশোধ নেবে? বরং শান্তি ও উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করতে বেগম জিয়া ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত যে জঙ্গীবাদী-সন্ত্রাসবাদী-নাশকতা-অন্তর্ঘাত-সহিংসতা-আগুন পুড়িয়ে মানুষ মারার যে রাজনীতি করেছেন, তার প্রতিশোধ নেবে জনগণ। ইতোমধ্যেই বেগম জিয়ার এ অমানবিক-পৈশাচিক রাজনীতির পথ জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে, গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। জনগণের ঘৃণার আর গণপ্রত্যাখানের মুখে বেগম জিয়া পিছু হটেছেন। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি বলছেন, তাকে জনবিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এখন সিটি নির্বাচনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারার অপরাধ আড়াল করার জন্য অপচেষ্টা করছেন। জনগণকে এত বোকা ভাবার কারণ নেই। জনগণ জানে ২০০৮ থকে এখন পর্যন্ত মতার জন্য অন্তত বেগম জিয়া কিভাবে গণতান্ত্রিক রাজনীতি-মানবতা-সভ্যতার বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন। বেগম জিয়া ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে যে দানবীয় আগুন সন্ত্রাস করেছেন তার নমুনা হিসেবে জানাচ্ছি গত ৬ জানুয়ারি থেকে ১৩ এপ্রিল বেগম জিয়ার ডাকা অবরোধ-হরতাল সফল করতে সন্ত্রাসীরা ২৪৭টি পেট্রোল বোমা ও ২৫৬২টি ককটেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ বাহিনী উদ্ধার করেছে ৮৫৩টি পেট্রোল বোমা এবং ৯১৬টি ককটেল। তারা ১৩৮টি গাড়ি ভাংচুর করেছে, ৮২০টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে, ১৮টি রেল নাশকতা করেছে, নৌ-পথে করেছে ৬টি ভয়াবহ নাশকতা। ৭০টি সরকারী স্থাপনায় হামলা করেছে, ১৫টি আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও কমপক্ষে ২০ জন আওয়ামী নেতাকর্মীর বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, রেহাই পায়নি হিন্দু, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও। তাদের ওপর কমপক্ষে ২৩টি হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। আগুন সন্ত্রাসে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে ৩৯৯ জন, নিহত হয়েছে একশরও বেশি মানুষ। এ অমানবিক নাশকতাকালে যে ৫৭৯জন গ্রেপ্তার হয়েছে, তার মধ্যে ৩৬৩ জনই বিএনপির নেতাকর্মী এবং ২০৫ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। তিনি বলেন, বেগম জিয়া, পূর্ণবিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী নামানোর দাবি করেছেন। বেগম জিয়া দুইবার প্রধানমন্ত্রী, দুইবার বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন। চারটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাঁর ক্ষমতার দুই আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। কখনই কি সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামানো হয়েছে। তার আশপাশে এত বড় বড় ব্যারিস্টার-উকিল সাহেবরা আছেন। বেগম জিয়া না জানলেও তারাতো জানেন, নির্বাচনকালে কখনই সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়নি। সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করা হয়, সিভিল প্রশাসনের সাহায্যে। বিচারিক ক্ষমতা কখনই কোন প্রতিষ্ঠান বা বাহিনী বা সংস্থাকে দেয়া যায় না। এটা জানার পরও পূর্ণবিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়নের দাবি, অজ্ঞতা নয়, জ্ঞান পাপ। বেগম জিয়া বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ’। নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। যদি তাই হয়, তাহলে জেনে-শুনে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন কেন? তিনি বলেছেন, নির্বাচনে বিরোধীদলীয় প্রার্থী বিজয়ী হলেই নির্বাচন কমিশন শুদ্ধ হয়ে যায় না। আমাদের প্রশ্ন কি করলে নির্বাচন কমিশন শুদ্ধ হবে। তিনি মামার বাড়ির আবদারের মতো যা বলবেন, নির্বাচন কমিশনকে তাই তাই করতে হবে? নির্বাচন কমিশনকে তার আজ্ঞাবহ হতে হবে? নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের নামে পাল্কি সাজিয়ে তাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে দিলে নির্বাচন কমিশন শুদ্ধ হবে? বেগম জিয়া বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে সিটি নির্বাচনে জনগণ ভোটাধিকার ফিরে পেলো কিভাবে? বেগম জিয়া-বিএনপি-২০ দলতো সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে দাবি করেনি। বরং সরকারই সময়মতো সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম হওয়ার জন্য সরকার নির্বাচন কমিশন দায়ি না। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন প্রতিরোধে সহিংসতার কারণেই ভোটার অংশগ্রহণ কম হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়নি বরং ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশকে অসাংবিধানিক অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশকে সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত করেছে। আর তার কারণেই সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে-বেগম জিয়া সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বেগম জিয়া, শেয়ার বাজার, কুইক রেন্টাল, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কথা বলেছেন। বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, শেখ হাসিনার সরকার, দুর্নীতি আড়াল করা, দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দেয়ার সংস্কৃতি থেকে দেশকে বের করে এনেছেন। কোথায়ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে, আদালতে প্রমাণ হওয়ার আগেই অভিযুক্ত যত বড় ক্ষমতাবান হোক না কেন, তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়, দুদক ও আদালতে হাজিরা দিতে হয়। কেউ-ই ছাড় পায় না। আর বিদেশে সম্পদের পাহাড় কারা গড়েছে কার পুত্রের বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরৎ এসেছেÑ তা দেশবাসী জানেন। নিজ আমলে পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বেগম জিয়ার মুখে দুর্নীতি নিয়ে কথা বলা ‘ভূতের মুখে রাম নাম ছাড়া’ কিছুই না। বেগম জিয়া আবারও হেফাজতের সমাবেশে রাতের অন্ধকারে হামলা করে এতিম ও আলেমদের রক্ত নেয়ার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বারবার বলেছি, হেফাজতের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ‘নিহতদের নাম-ধাম-ঠিকানা-তালিকা দেয়ার জন্য। বেগম জিয়া সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন নাই। বরং ধারাবাহিকভাবে মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন। আমরা জোর দিয়ে বলছি, হেফাজতের সমাবেশে একজন আলেম বা একজন এতিমও নিহত হননি। বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় এতিমখানা-মাদ্রাসা থেকে জোর করে আনা এতিম-শিশু-ছাত্রদের নিরাপদে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেছে। বেগম জিয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, মন্দির ভাঙ্গা, রামুতে দাঙ্গা, নারীর লাঞ্ছনার দায় সরকারের ওপর চাপিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা বলতে চাই, কারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে, কারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, সেটা দেশবাসী জানে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর কারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দেশব্যাপী অত্যাচারের উৎসব করেছিল, ‘পূর্ণিমা’র ঘটনা কী ঘটেছিল ? রামুতে বৌদ্ধ মন্দির ভাঙ্গা-দাঙ্গায় কারা আটক হয়েছিল তাও দেশবাসীর জানা। কারা কথায় কথায় ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উস্কানী দেয়, তাও দেশবাসীর জানা। তথ্যমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জে ১১ হত্যার ঘটনাসহ র‌্যাব বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতের বিচার বহির্ভূত হত্যার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে আবারও বলছি সরকার ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতি’ থেকে দেশকে বের করে এনেছে। অপরাধী যেই হোক কেউই রেহাই পাচ্ছে না। তদন্ত বিচারের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বেগম জিয়ার অপারেশন ক্লিন হার্টে মানুষ হত্যাকে দায়মুক্তি দিয়েছিলেন, তার প্রয়াত স্বামী জেনারেল জিয়া খুনী, চার জাতীয় নেতার খুনীদের দায়মুক্তি দিয়েছিল। তিনি বিডিআর হত্যাকা- নিয়ে কথা বলেছেন। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর কারা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের রাজনীতি করেছিল, কে টেলিভিশনে বক্তব্য দিয়ে বিডিআর-এর ঘটনায় উস্কানী দিয়েছিল দেশবাসী তা জানে। শেখ হাসিনা কি অসীম ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে বিডিআর-এর ঘটনা মোকাবেলা, আরও হত্যা-রক্তপাত বন্ধ করেছিলেন, কিভাবে হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করেছেন, কিভাবে বিডিআর পুনর্গঠন করে বিজিবি করেছেন, তাও দেশবাসী জানে। বেগম জিয়া, একমুখে সরকারকে অবৈধ বলছেন, আরেক মুখে সরকারকে সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীতো নিজেকে ছোট করে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বেগম জিয়া সেই বিনম্র আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। গণতান্ত্রিক শক্তি, দল, মহল, ব্যক্তির মধ্যে সংলাপ হতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক। বেগম জিয়া সংলাপের আহ্বান জানানোর আগে তাকে তো গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফেরৎ আসতে হবে। তিনি তো নিজেই নিজেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে অনেক দূরে সন্ত্রাসবাদী রাজনীতিতে চলে গেছেন। এমনকি তিনি ওয়ানওয়ে টিকেট কেটেছেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফেরার রিটার্ন টিকেট সঙ্গে নেননি। তিনি সন্ত্রাসবাদের মেরুতে অবস্থান নিয়েছেন। জনগণের ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যানের মুখে পলায়নপর ও পরাজিত প্রায় আগুন সন্ত্রাসী নেতা বেগম জিয়া সিটি নির্বাচনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেকে রক্ষার শেষ চেষ্টা করছেন। তিনি দম ফেলার সুযোগ নিচ্ছেন। পুনরায় আগুন ছোবল হানার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, শক্তি সঞ্চয় করছেন। বিষদাঁত না ভাঙ্গলে শুধু খোলস পরিবর্তন করলেই বিষাক্ত সাপ বিষহীন হয়ে যায় না। ঠিক তেমন বেগম জিয়ার গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না কাঁদলেই তিনি সন্ত্রাসবাদী-আগুন সন্ত্রাসী থেকে গণতান্ত্রিক হয়ে যান না। বেগম জিয়া আগুন দিয়ে জনগণকে আক্রমণ করেছেন। জনগণ তার জবাব দেবে। একাত্তর, পঁচাত্তর, একুশে আগস্টের খুনীদের মতোই আগুন সন্ত্রাসীদের ও তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোন দায়মুক্তি নেই। তিনি বলেন, বেগম জিয়া বলেছেন, হত্যা, নাশকতা, সন্ত্রাস ও লাশের রাজনীতি করেন না। এর উত্তরে আমি ও আপনারা হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠতে পারছি না। এর চেয়ে বড় অসত্য আর কী হতে পারে? ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি পূর্বে বেগম জিয়া ও তারপুত্র তারেক প্রকাশ্যেই উস্কানী দিয়েছেন। দেশকে এক অংশ থেকে আরেক অংশ, ঢাকার এক অংশ থেকে আরেক অংশ বিচ্ছিন্ন করার জন্য দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। ৯৩ দিনের অবরোধে আগুন বোমায় কতজনকে পুড়িয়ে লাশ না কঙ্কালে পরিণত করেছেন? বেগম জিয়ার শাসনামলে আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি, শাহ এএমএস কিবরিয়া, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দিনসহ শতশত নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আইভি রহমানসহ কতজন হত্যা করা হয়েছে? আর উনার প্রয়াত স্বামী জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করেই ক্যান্টনমেন্টগুলোকে কসাইখানা বানিয়েছিলেন। কর্নেল তাহেরসহ শতশত অফিসার ও সৈনিককে বিচারের নামে প্রহসন বা বিচার ছাড়াই হত্যা-খুন-গুম করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সিটি নির্বাচনকে তিনি রাষ্ট্র-সরকারের টেস্টকেস হিসেবে নিয়েছেন। কে কার টেস্ট নেয়! কে নেয় কার পরীক্ষা! বাংলাদেশ ভালভাবে চলছে কি চলছে না তার পরীক্ষা যেমন, রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের কাছে দিতে হয় না তেমনি আগুন সন্ত্রাসী বেগম খালেদা জিয়ার কাছেও গণতন্ত্রের টেস্ট-পরীক্ষা দেয়ার কিছু নেই। মূলত বেগম জিয়া এ কথার মাধ্যমে একটা হুমকি দিয়েছেন। তার ইচ্ছা পূরণ না হলে তিনি আবার মানুষ পোড়াবেন, নাশকতা করবেন। রবিবারের সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বেগম জিয়া তার অপরাধ ও দুষ্কর্মের সাফাই গাওয়ার অপচেষ্টা করেছেন। ঠিক যেমন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী রাজাকাররা দায়মুক্তি না পেয়ে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমরা দেখি, কাদের মোল্লা বলেছিল, আমি ‘সেই কাদের মোল্লা’ বা ‘কসাই কাদের’ নই। দেলোয়ার হোসেন সাঈদী বলেছিল, আমি ‘সেই রাজাকার দেলু’ নই। কিন্তু তারা বিচারের হাত থেকে রেহাই পায়নি। বেগম খালেদা জিয়াও যতই সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করুন না কেন, বিচারের হাত থেকে রেহাই নেই। তিনি হয়তো বলার চেষ্টা করবেন, আমি সেই আগুন সন্ত্রাসী খালেদা নই, কিন্তু তিনিই সেই খালেদা জিয়া। যিনি একাত্তরের খুনী-রাজাকারদের দোসর, পঁচাত্তরের ঘাতকদের রাকারী, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টাকারী, আগুন-সন্ত্রাসে শত মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকারী, জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক। নরহত্যার দায় তিনি এড়াতে পারবেন না। যতই সাফাই দেন না কেন, জনগণের চোখের সামনে সংঘটিত মানুষ পোড়ানোর অপরাধ ঢাকা পড়বে না। সুতরাং, বাংলাদেশে আর কোনদিন আগুন সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদীদের জনগণ ক্ষমতায় আনবে না।
×