ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একদিনের জন্যও মির্জা আব্বাস যাননি ভোটারদের কাছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

একদিনের জন্যও মির্জা আব্বাস যাননি ভোটারদের কাছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একদিনের জন্যও ভোটারদের কাছে যাননি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী মির্জা আব্বাস। দুই যুগ আগে মেয়র হয়ে ‘মিস্টার ২০ পার্সেন্ট’খ্যাত হয়ে ওঠা সেই মির্জা আব্বাস আবারও মেয়র হতে চান ভোটারদের কাছে না গিয়েই। কেবল দুই মামলায় শুনানির জন্য হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে এক ফাঁকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করলেন। আর তফসিল ঘোষণার পর থেকে তার পক্ষে ভোট চেয়েছেন তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। একবার মেয়র হয়ে ‘মিস্টার ২০ পার্সেন্ট’ হয়ে উঠলেও ভোটাররা আবারও তাকে ভোট দেবেন এই আশাই করছেন লোকচক্ষুর আড়ালে বসে। দুই যুগ আগে অবিভক্ত ঢাকার মেয়র মনোনীত হয়ে মাত্র দেড় বছরেই ‘মিস্টার ২০%’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ঢাকা সিটির দক্ষিণে এবারের মেয়রপ্রার্থী মির্জা আব্বাস। ওই ২০%-এর ক্যারিশমাতেই সাধারণ রাজনীতিক থেকে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে বনে যান বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। মির্জা আব্বাস সেবার মেয়র মনোনীত হন খালেদা জিয়ার কৃপায়। নির্বাচন ছাড়াই তাকে মেয়রের গদিতে বসিয়ে দেন তৎকালীন এই প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯১ সালের ১৯ মে থেকে শুরু করে ১৯৯৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে সব কাজেই ভাগ বসাতে থাকেন আব্বাস। বিশেষ করে কোন উন্নয়ন কাজ আর ঠিকাদারির দরপত্র পেতে মির্জা আব্বাসের বখরা নিশ্চিত করতে হতো সবার আগে। কার্যত আব্বাসকে এই কমিশন দেয়াই হয়ে উঠেছিল ঠিকাদারির দরপত্র পাওয়ার প্রধান শর্ত। মেয়র মনোনীত হয়ে শুরুতে অল্প অল্প কমিশন নিতে শুরু করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে তার কমিশনের মাত্রা। দ্রুতই এই হার দাঁড়ায় ২০ শতাংশে। স্বভাবতই তার নাম হয়ে যায় ‘মিস্টার টুয়েন্টি পার্সেন্ট’। অবশ্য এমন অভিনব তকমাতেও কখনও বিব্রত হতে দেখা যায়নি মির্জা আব্বাসকে। বরং ক্ষমতার দাপটে বিষয়টি বেশ উপভোগই করছিলেন তিনি। দিন দিন বিত্তবৈভব ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে আর ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করতে থাকেন আব্বাস। ছিলেন সাধারণের চেয়েও সাধারণ একজন মানুষ; আর তিনিই রাতারাতি হয়ে ওঠেন অগাধ সম্পদের মালিক। এমনকি ব্যাংকের মালিকানাও চলে আসে তার পকেটে। এরপর এমন খাই খাই ভাবের কারণেই সিটি নির্বাচনে মোহাম্মদ হানিফের কাছে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। পরে খালেদা জিয়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন মির্জা আব্বাসকে। বর্তমানে তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক। দুই যুগ আগে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে যে হানিফের সঙ্গে হেরে যান তিনি, সেই হানিফেরই ছেলে সাঈদ খোকনই এবার তার নির্বাচনী প্রতিপক্ষ। এবারের নির্বাচনে খোকন তার বাবার সেই ‘ইলিশ মাছ’ প্রতীক নিয়ে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করলেও একদিনের জন্যও যাননি মির্জা আব্বাস। আড়ালেই থাকলেন পুরো সময়। শোনা যায় সরকারের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই তিনি তার ব্যবসাও ঠিক রাখেন আবার বিএনপির রাজনীতিও করেন। আজ নির্বাচন তবু রহস্যজনকভাবে আড়ালেই থেকে গেছেন আব্বাস। নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় দেখা যায়, বর্তমানে বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা রয়েছে। আর অতীতে ছিল ২৪টি। এর মধ্যে বাসে অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণের অভিযোগে ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর পল্টন থানায়, একই বছরের ৬ মার্চ প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় এবং বিস্ফোরক আইনে গত ৪ জানুয়ারি মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টে এ আগাম জামিনের আবেদন করেন তিনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে জামিন আবেদন করা এ তিনটি মামলার মধ্যে গত ১৫ এপ্রিল নাশকতার দুটিতে বিভক্ত আদেশ দেন হাইকোর্ট। আর অপরটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিলে হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চে এর আংশিক শুনানি হয়। সোবার ওই বেঞ্চেই শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে সেই শুনানি পিছিয়ে গেছে। গেল ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে বিএনপির অন্য নেতাদের মতো মির্জা আব্বাসও আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে জামিন আবেদনের পর হঠাৎ করে হাইকোর্টে উপস্থিত হন। কিন্তু জামিনে বিভক্ত আদেশের পর ১৫ এপ্রিল তিনি আইনজীবী সমিতি ভবনের সভাপতির কক্ষে মিডিয়ার কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, আমি তো সরাসরি আপনাদের কাছে আসতে পারি ভাল, না পারলে আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। মির্জা আব্বাস বলেন, আমাকে গ্রেফতার করা হলে, গ্রেফতারের জবাবে মগ প্রতীকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিবাসী যেন আমাকে ভোট দেন, সেটা কামনা করি। ওই দিন থেকেই আবার তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তার হয়ে প্রথম দিন থেকেই ভোট চান তার স্ত্রী। প্রথমদিন থেকেই তিনি ভোটারদের কাছে বলেছেন, ‘আমি আপনাদের আব্বাসের বউ’ আমি আপনাদের আব্বাসের জন্য ভোট চাইতে এসেছি। তাকে ভোট দিয়েন। ঢাকাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি পাবনার মেয়ে। আপনাদের ঢাকার বউ হয়ে এসেছি। আমার সম্মান ও নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা আমার সম্মান রক্ষা করুন। মির্জা আব্বাস ভোট চাইতে মাঠে নামবেন। শীঘ্রই নামবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নামেননি। আর এভাবে ভোটারদের কাছে একদিনের জন্য না এসেও মেয়র হতে চান বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস।
×