ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশীট দিন

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশীট দিন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি জোটের অবরোধ-হরতালে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযোগপত্র দিয়ে বিচার এগিয়ে নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে নাশকতাকারীদের ধরতে যৌথবাহিনীর অভিযান এবং ভ্রাম্যমাণ বিচারকাজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর সাতক্ষীরা ও বগুড়া জেলা উন্নয়ন সমন্বয়ন কমিটির সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ, নড়াইল ও সিরাজগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও এ সময় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা দেয়া। যারা পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, মানুষের ক্ষতি করেছে, মানুষের ওপর আঘাত করেছে, জীবন্ত মানুষগুলোকে যারা এভাবে দগ্ধ করেছে, তাদের শাস্তি পেতেই হবে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে বিএনপি জোটের টানা অবরোধ-হরতালে নাশকতা ও সহিংসতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে যানবাহনে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষ হত্যার অন্তত চারটি ঘটনায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের জীবন নিরাপদ হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই একদিকে যৌথ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে, অন্যদিকে যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলো তদারকি করতে হবে। শুধু মামলা করলেই হবে না, গ্রেফতার করলেই হবে না, মামলাগুলো যাতে দ্রুত অভিযোগপত্র দিয়ে বিচারকাজ সম্পন্ন হয় সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাধারণ নির্বাচন ঘিরে সাতক্ষীরা এবং বগুড়ায় বিএনপি-জামায়াতের তা-বের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় ‘পরিস্থিতি সামাল দেয়ায়’ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান তিনি। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় এক বছর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও গত জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধে ফিরে আসে নাশকতা। সরকার ‘উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়ায়’ গত জানুয়ারি থেকে আবারও নাশকতা চালানো হয়েছে মন্তব্য করে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের সুযোগ না দেয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকতে হবে, যাতে আর সন্ত্রাস ও নাশকতা না হয়; সে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, এটা আমি প্রত্যেকটা জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসনের যারা, সকলকে আমি অনুরোধ করব, মামলাগুলোর যেন দ্রুত চার্জশীট হয়, দ্রুত সম্পন্ন হয়। এটা না হলে কয়েকদিন পর আবার জামিনে বের হয়ে এসে ওই একই কাজ করবে। উন্নয়ন কাজে গতি আনার পাশাপাশি বাজেটে বরাদ্দ প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। গৃহায়ন তহবিল ছাড়াও কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যাতে তরুণরা স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারে, সে জন্য উৎসাহ সৃষ্টি করতে বলেন। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে পণ্য উৎপাদন বাড়ানো, পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং রফতানি বাড়ানোর জন্য প্রক্রিয়াজতকরণের ওপড় গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। খেলাধুলার বিষয়ে আগ্রহের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হবে। এ জন্য স্কুল-কলেজের মাঠের বাইরে আলাদা জায়গা নির্দিষ্ট করার জন্য নির্দেশ দেন তিনি। সাতক্ষীরা ও বগুড়ার স্থানীয় কয়েকটি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী খোঁজখবর নেন। উন্নয়ন সমন্বয়ন কমিটির প্রতিনিধিরা তাদের জেলায় আরও উন্নয়ন প্রকল্প নেয়ার দাবি জানালে তা বিবেচনার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
×