ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনুকূল পরিবেশেও বিদেশী বিনিয়োগ কম

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

অনুকূল পরিবেশেও বিদেশী বিনিয়োগ কম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ভাল। কিন্তু তারপরও বিদেশী বিনিয়োগ কম। এজন্য বিনিয়োগ বাড়াতে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, সার ও বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায় থাকার কারণে বিনিয়োগের জন্য এখনই সবচেয়ে ভাল সময় বলে মনে করছেন তাঁরা। যদিও দেশের ভাল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসছে না। কারণ কর্পোরেট পর্যায়ে তাদের অতিরিক্ত কর দিতে হয়। তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর পাশাপাশি কর্পোরেট পর্যায়েও কর হার কমাতে হবে। রবিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত ‘অর্থনীতির বর্তমান হালচাল’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদের সভাপতিতে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্টের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরুপাক্ষ পাল ও ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথোরিটির নির্বাহী পরিচালক মোঃ কায়কোবাদ হোসাইন পৃথক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ড. বিরুপাক্ষ পাল তাঁর প্রবন্ধে বলেন, সুদহার বেশি হওয়ায় কাক্সিক্ষত মাত্রায় বিনিয়োগ হচ্ছে না। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে পারলে বিনিয়োগ দ্রুত বাড়বে। মুদ্রানীতি পূর্ণভাবে কার্যকরণের জন্য সুদহার নিয়ন্ত্রণের পুরো ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে দিতে হবে। এতে সুদহার কমানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ আরও সহজ হবে। একই সঙ্গে তিনি মুদ্রানীতি পূর্ণভাবে কার্যকরণের জন্য সুদহার নিয়ন্ত্রণের পুরো ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণও কমছে। তিনি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে হলে দ্রুত সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমাতে হবে। মুদ্রাস্ফীতিকে ব্লাড প্রেসারের সঙ্গে তুলনা করে বিরুপাক্ষ বলেন, ব্লাড প্রেসার হলে যেমনি মানুষ দিন দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ঠিক তেমনিভাবে মুদ্রাস্ফীতি হলেও দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে। দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে হলে এখনই মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। বিরুপাক্ষ পাল বিনিয়োগ বাড়াতে যোগাযোগ অবকাঠামো ও বিদ্যুত-গ্যাস পরিস্থিতির উন্নয়ন, গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত এবং বিচারিক কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যোগাযোগ অবকাঠামোসহ জ্বালানি খাতের চলমান মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন হলে জিডিপি ৭ শতাংশে উন্নীত হবে এবং দারিদ্র্যসীমা ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদহার বেশি থাকায় মানুষ এখানে বেশি বেশি বিনিয়োগ করছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ কমছে। কর্পোরেট কর হার কমানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দেশের ভাল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসছে না। কারণ কর্পোরেট পর্যায়ে তাদের অতিরিক্ত কর দিতে হয়। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর পাশাপাশি কর্পোরেট পর্যায়েও কর হার কমাতে হবে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে নাজনীন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশ ইমেজ সঙ্কটে পড়ছে। এসব সঙ্কট কাটাতে হলে দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন ও নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। ভারত থেকে অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে চাল আমদানি করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ করে দেশের কৃষকদের উৎপাদিত চাল দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো উচিত। এতে একদিকে কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে; অন্যদিকে অবৈধ উপায়ে আমদানির প্রথাও কমে আসবে। বর্তমানে দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ বজায় রয়েছে উল্লেখ করে বিআইডএসের এই গবেষক বলেন, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, সার ও বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায় রয়েছে। অতএব বিনিয়োগের জন্য এখনই সবচেয়ে ভাল সময়। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, তাত্ত্বিক দিক দিয়ে সব কিছু বিবেচনা করলে হবে না। বাস্তবতার নিরিখে দেখতে হবে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ হলো না সাড়ে ৬ হলো এই পরিসংখ্যান দিয়ে জীবন চলবে না। তবে এই পরিসংখ্যান দিয়ে অর্থনীতিবিদদের জীবন চলতে পারে। দেশের কতিপয় অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা করে তৌফিক-ই-এলাহী বলেন, কিছু কিছু অর্থনীতিবিদ জিডিপি নিয়ে মন্তব্য করলে পেপারে ব্যানার সহকারে ছাপানো হয়। অথচ নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যখন বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে ইতিবাচক বলেন তা ব্যানার সহকারে ছাপানো হয় না। তিনি আরও বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি কত হলো এটা বড় কথা নয় মানুষের জীবন মানের কেমন উন্নতি হয়েছে সেটা দেখতে হবে। ২০০৯ সালে দেশের ৪৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পেত বর্তমানে এর হার ৭০ ভাগ। পর্যায়ক্রমে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পাবে। মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। দেশে নারীদের ক্ষমতায়ন বেড়েছে। দেশ এখন অনেক এগিয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের কারণে। তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক দেশের তুলনায় ভাল অবস্থানে আছি। আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে। সামনে আরও ভাল করতে হবে। সাধারণ মানুষের জীবনের অনেক উন্নতি হয়েছে। নগরীর উন্নতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা শহরের বড় বড় প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বাস্তবায়িত হয়েছে।
×