ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হারুন হাবীব

নববর্ষে শেখ হাসিনার কিছু উচ্চারণ ও আত্মজিজ্ঞাসা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

নববর্ষে শেখ হাসিনার কিছু  উচ্চারণ ও আত্মজিজ্ঞাসা

বরাবরের মতো এবারও শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধের জাগরণ ঘটিয়ে ব্যাপক বর্ণিল উৎসবে নববর্ষকে বরণ করেছে বাঙালী। ভোরের আলো না ফুটতেই বর্ষবরণের গানে জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। ঢাকার রমনা উদ্যানের অশ্বত্থমূল থেকে শুরু করে নগর-বন্দর-গ্রামগুলোতে বরাবরের মতো এবারও ছিল ব্যাপক আয়োজন। পহেলা বৈশাখের এ আয়োজন জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্যকে সূদৃঢ় করে, আজ ও আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্বুদ্ধ করে। এসব কারণেই বাঙালীর নবজাগৃতির দিন পহেলা বৈশাখ। নববর্ষের প্রভাতে আমরা এক হই, সব আবর্জনা দূর করে একাকার হই। স্বাধিকারসমৃদ্ধ প্রশান্ত জীবনের প্রতিশ্রুতিতে সমৃদ্ধ হই। এ দিনে নতুন প্রজন্ম নতুন উদ্যমে নিজেদের জাগিয়ে তোলে, নতুন আলোর পথযাত্রী হয়। ওরা সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের পথে চলার শক্তি সঞ্চয় করে, মানুষ হওয়ার শপথ নেয়, বাঙালী হওয়ার প্রত্যয়ে জ্বলে ওঠে, মনের অন্ধকারে প্রদীপ জ্বালাতে যোগ্য করে, অনাচারের বিরুদ্ধে লড়তে নিজেদের সমৃদ্ধ করে। কিন্তু এবারের পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনে কলঙ্কলেপন করা হয়েছে। এ কলঙ্ক তারুণ্যের স্বাভাবিক বিচ্যুতি নয়; ভয়ঙ্করভাবে পরিকল্পিত। সিসি টিভির ফুটেজে যা যা দেখা গেছে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যা যা দেখা গেছে, তাতে এ লজ্জার শেষ নেই। এ বন্যতা নিতান্তই পূর্ব পরিকল্পিত এবং পহেলা বৈশাখের উদ্যাপনে ভাটা ধরাতেই ছককাটা হয়েছিল বোঝা যায়। যদি এ যুক্তিও মানি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় মেয়েদের সঙ্গে যে প্রকাশ্য বর্বরতা হয়েছে তা নিছকই বিচ্ছিন্ন ঘটনা, তাহলেও যা ঘটেছে তার উপযুক্ত শাস্তি প্রয়োজন। পুলিশের ব্যর্থতা, গণমানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধহীনতাÑ সবই এখন আলোচনার বিষয়। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ যাই থাকুক না কেন, এই বর্বরতাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রযন্ত্রকে এই অমানুষদের দ্রুততম সময়ে শনাক্ত করার যোগ্যতা দেখাতে হবে, অপরাধীদের যোগ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অনেক ক্ষেত্রেই দৃঢ় মনোভাব দেখিয়েছে। আশা করি, এ ব্যাপারেও সরকার পিছপা হবে না। অন্যথায় নববর্ষের যে মহাআয়োজন আজ শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জ-বন্দরে ছড়িয়েছে, তাতে বড় আঘাত হানার পথ প্রশস্ত হবে। মনে রাখতে হবে, পহেলা বৈশাখের প্রতিপক্ষরা এই স্বতঃস্ফূর্ত লাখো জনস্রোত ঠেকাতে চায়, তারা এ আয়োজন বিপন্ন করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠানে আমার যাওয়া হয় না বললেই চলে। আমি সংবাদ পেশার মানুষ, লেখালেখি নিয়ে সময় কাটে, বাড়তি সময় যায় মুক্তিযুদ্ধ চর্চা নিয়ে। সে যাই হোক, এবারের নববর্ষ উপলক্ষে গণভবন থেকে হঠাৎ আমন্ত্রণ আসে। ২ বৈশাখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন লেখক, কলামিস্ট, সম্পাদক, ‘টক শো’র আলোচকদের সঙ্গে। আমন্ত্রণটা নিঃসন্দেহে আনন্দের। কারণ আমি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই কেবল দেখি না, দেখি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেঁচে যাওয়া দুই কন্যার একজন হিসেবে, যিনি রাষ্ট্রকে মুক্তিযুদ্ধের ছিনতাইকৃত গৌরব ফিরিয়ে দেয়ার এক যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পঁচাত্তরের পর দুই যুগের যে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তার বিপরীতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে আজকের বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনার যে সাহস ও প্রজ্ঞা তার প্রায় সবটাই তাঁর প্রাপ্য। ১৯৯৬ থেকে যতবার শেখ হাসিনাকে দেখবার সুযোগ হয়েছে ততবারই দেখেছি তাঁকে অনানুষ্ঠানিক, বঙ্গবন্ধুর পাওয়া মেজাজ ও অন্তরঙ্গতায় ভরা একজন বাঙালী হিসেবে। সাংবাদিকতার শুরুতে সেদিনকার বিপিআই বার্তা সংস্থার তরুণ রিপোর্টার হিসেবে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেশকিছু নির্বাচনী সফরে যাওয়ার সুযোগ হয় আমার। সংস্থার প্রধান ছিলেন তখন মীজানুর রহমান, যিনি ইত্তেফাকের সময় থেকে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ¯েœহভাজন। ১৯৭৪ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে বঙ্গবন্ধু যেদিন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির উদ্বোধন করলেন সেদিনও সে অনুষ্ঠানে থাকবার সুযোগ হয় আমার সংবাদকর্মী হিসেবে। অতএব, বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী, বিশেষত সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে তাঁর আন্তরিকতার বিষয়টি কম বয়সী সাংবাদিক হয়েও আমার প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে। ২ বৈশাখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে অভ্যাগতদের সঙ্গে প্রাণখোলা কথাবার্তা বলেন। অভ্যাগতদেরও খোলামেলা কথা বলার সুযোগ দেন। প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি তাঁর সরকারের নানা কর্মকা- বিশ্লেষণ করেন। কী পরিস্থিতিতে, কোন্ প্রয়োজনে তাঁর সরকার তৎপর তার ব্যাখ্যা দান করেন। কথাবার্তাগুলো এমনই খোলামেলা ছিল যে, কেউ কেউ ভাবতে শুরু করেছিলেন এতটা খোলামেলা না হলেই ভাল। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনকিছু লুকোনোর চেষ্টা করছেন বা তা করার প্রয়োজন আছেÑ এমনটা আমার একেবারে মনে হয়নি। লক্ষ্য করেছি, তিনি যা ভাবেন, যুক্তিযুক্ত মনে করেন তা নিয়ে কোন রাখঢাক করার প্রয়োজনবোধ করেন না। এতে কখনও যে সমালোচনায় পড়তে হয় না তাও নয়; কিন্তু শেখ হাসিনা যা ভাবেন তাই বলার সাহস রাখেন। পহেলা বৈশাখের সম্মিলনীতে বঙ্গবন্ধুকন্যার মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় শুনেছি আরেকবার। অনেকবারই তিনি উচ্চারণ করেছেন আমরা বিজয়ী জাতি, মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা বিজয়ী হয়েছি। কাজেই যে যত বড় চ্যালেঞ্জ দিক আমরা তার মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাব। বলার অপেক্ষা রাখে না, তাঁর এই উচ্চারণ সাহস যোগাবে বাংলাদেশকে সামনে এগোবার। একই সঙ্গে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বলেন, যত বাধাই আসুক সব বাধা মোকাবেলা করে এ বিচার শেষ করবই আমরা ইনশাআল্লাহ। আমার বিশ্বাস, নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার পরও একটি বড় রাজনৈতিক যুদ্ধের সফল নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা। সে যুদ্ধ কতটা প্রয়োজনীয়, কতটা ভয়ঙ্কর এবং কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। এই যুদ্ধ এমন একটি সময়ে ঘটছে যখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শত্রুরা নানা অঙ্গনে সংগঠিত, এমনকি তারা রাষ্ট্রকে পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার ঔদ্ধত্য দেখায়! বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার সম্পন্ন করে জাতিকে দীর্ঘ লালিত কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের ঐতিহাসিক বিচার প্রক্রিয়াটি শুরু করেছে। এমন একটি সিদ্ধান্ত, বিশেষত চার দশকের ভয়ঙ্কর সব ঘটনাপ্রবাহের পর, খুব সাধারণ কোন সিদ্ধান্ত যে নয়Ñ তা সকলেই জানেন। কারণ, ১৯৭৫ সালে প্রায় সপরিবারে রাষ্ট্রের জনককে হত্যার পর দীর্ঘ দুই যুগ ধরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে বাংলাদেশ রাষ্ট্র শাসিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসবিরোধীদের হাতে। এরা পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রকে একাত্তর পূর্ববর্তীকালে ফিরিয়ে নেয়ার সব চেষ্টা করেছে; রাষ্ট্রকে নতুন করে সাম্প্রদায়িক বানিয়েছে; স্বাধীনতাবিরোধী, এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কাজেই বড় ঝুঁকি নিতে হয়েছে বৈকি শেখ হাসিনাকে। প্রভাবশালী দেশী-বিদেশী মহলের প্রতিরোধ সত্ত্বেও তাঁকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। এই এগিয়ে যাওয়াতে যে সাহস, যে দৃঢ়তা, মানতেই হবে, তা দেখাতে পেরেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রধানমন্ত্রীর উচ্চারণের সঙ্গে সুবিবেচক মানুষ মাত্রই একমত পোষণ করবেন যখন তিনি প্রশ্ন তোলেন : বাংলাদেশের অগণিত নিরীহ মানুষ, যারা পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের দেশীয় অনুচরদের নির্মম বর্বরতার শিকার, তাদের কি কোন মানবাধিকার থাকতে নেই? তাঁর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে অবশ্যই এ প্রশ্ন করতে হবে : কিছু আন্তর্জাতিক মহল যখন গণহত্যাকারী ও ধর্ষণকারীদের মানবাধিকারের কথা বলে, তখন কি তারা বেমালুম ভুলে যায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এসব দেশীয় অনুচরের হাতেই ঘটেছিল বিশ্বের নিকৃষ্টতম গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন? বিশ্বের প্রায় দেশেই বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে দোষীদের ফাঁসিসহ নানা প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদ- কার্যকর হয়। আইনের শাসনের পথকে প্রশস্ত করতে এর বিকল্প কোথায়? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবেও মৃত্যুদ- আছে। কিছু কিছু দেশ অবশ্য মৃত্যুদ- রহিত করে অন্য দ- বহাল করেছে। এ প্রসঙ্গে নিজের মত প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা এভাবে : ফাঁসি কি হচ্ছে না কোথাও? ঈদের দিনে কি সাদ্দামকে ফাঁসি দেয়া হয়নি? আজ যারা ফাঁসির বিরুদ্ধে কথা বলেন, তারা কি সাদ্দামের ফাঁসি দেখে হাততালি দিয়ে খুশি প্রকাশ করেননি? তিনি ব্যাখ্যা করেন : সাদ্দাম যে অপরাধ করেছে, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কিংবা তাদের দোসর আলবদর, রাজাকার ও আলশামসরা কি বাংলাদেশে একই অপরাধ করেনি? এ দেশের মানুষের কি জীবনের মূল্য নেই, ন্যায়বিচার চাওয়ার অধিকার নেই? যারা ঘৃণ্য অপরাধ করেছে তাদের শাস্তি দেয়া হলে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে যাবে কেন? সমকালীন রাজনীতি নিয়েও কথা বলেন তিনি। বলেন, হরতাল-অবরোধে আগুন দিয়ে একের পর এক মানুষ হত্যা করা হলো, সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কেউ মারা গেলে তার সমালোচনা করা হয়। আরও স্পষ্ট করে বলেন, অপরাধীরা যখন মারা যায় তখন তাদের জন্য মায়াকান্না করা হয়। প্রশ্ন তোলেন, একটা মানুষের জন্য যদি ৫০টা মানুষ বাঁচানো যায় তো কোন্টা সঠিক বিবেচিত হবে? পুলিশের অধিকার আছে নিরপরাধ মানুষের জানমাল বাঁচানো। মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, বাসে-রেলে আগুন দেয়া হচ্ছে, রেললাইন তুলে ফেলছে, আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে, কিছু করা যাবে না! কিছু করলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে। এ হতে পারে না। কোন সরকার, ক্ষমতাসীন দল বা জোটের কার্যক্রম সমালোচনা বা সীমাবদ্ধতার উর্ধে নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারও সমালোচনার উর্ধে নয়। আমরা সকলেই জানি, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশে সরকার বিরোধীদের স্বাধীন কার্যক্রম জরুরী। এ ছাড়া আধুনিক রাষ্ট্র হয় না। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত ও ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সমন্বয়ে যে মোর্চা তারা রাষ্ট্রের মৌলিক ইতিহাস ও চেতনার পরীক্ষিত প্রতিপক্ষ, প্রতিপক্ষ অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের। কাজেই যে বাংলাদেশ লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত, যে বাংলাদেশের স্থপতিকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার প্রাপ্তিকে ছিনতাই করা হয়, যে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয় পাকিস্তানী রাজনীতিধারায়, সেই বাংলাদেশের হৃত গৌরব উদ্ধারে বঙ্গবন্ধুকন্যার সাহসী নেতৃত্ব ইতিহাসের নতুন আশীর্বাদ বৈকি! লেখাটার শেষ টানব গণভবনে সেদিনের নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডাঃ আলীম চৌধুরীর কন্যা ডাঃ নুজহাত চৌধুরী এবং শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সারের কন্যা শমী কায়সারের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র ৪৪ বছর পরও আজ কঠিন সময়ের মুখোমুখি। দুর্ভাগ্য এতটাই যে, বাংলাদেশবিরোধীরা নতুন করে ‘১৫ আগস্ট’-এর স্বপ্ন দেখে! রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে তারা একটি বড় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে জাতির ঘাড়ে, যা দীর্ঘস্থায়ী। কাজেই একটি বা দুটি ‘ব্যাটল’-এ জয়ী হয়ে আত্মতুষ্টি পাওয়ার সুযোগ কোথায়? সে কারণেই বলি, রাজনৈতিক যুদ্ধের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যুদ্ধকে এগিয়ে নিতে হবে। বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের চর্চাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিপক্ষের কিছু আক্রমণে জেতা গেলেও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জেতার জন্য প্রয়োজন আদর্শিক যোদ্ধা তৈরি করা। ভুলে গেলে চলবে না যে, অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তার শত্রুরা প্রাথমিকভাবে পরাজিত হলেও তারা দীর্ঘস্থায়ী এক যুদ্ধে নেমেছে। কাজেই আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার বড় দুঃখ হয় যখন দেখিÑ আদর্শিক রাজনীতির ক্রমান্বয় পতন ঘটছে; রাজনীতি কেবলই সেøাগানসর্বস্ব হয়ে উঠছে, যা হয়ত সাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষমÑ কিন্তু বৃহৎ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য নয়। লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট যয১৯৭১@মসধরষ.পড়স
×