ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবার ভূমিকম্প ॥ শেরপুর গাইবান্ধায় দুই জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

আবার ভূমিকম্প ॥ শেরপুর গাইবান্ধায় দুই জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বারবার ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। শনিবার নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর রবিবার আবারো বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানেও। শনিবার ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পর রবিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১টা ৯ মিনিট ৯ সেকেন্ডে আবারও ভূকিম্পের উৎপত্তি হয়। রিখটার স্কোলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নেপালের কোদারি থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে। এর ফলে বাংলাদেশের সব জেলায়তেই ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে রবিবারের ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের সময় গাইবান্ধর সুন্দরগঞ্জে আতঙ্কিত হয়ে একজন কৃষকের মৃত্যু হয়। তার নাম আব্দুল আউয়াল (৪৫)। উপজেলার চায়িয়া গ্রামের আমেজ উদ্দিনের ছেলে। এছাড়া শেরপুরের সদর উপজেলার বেতমারী গ্রামের হায়দার আলী ওরফে নান্টুর (৭২) মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে পরপর দুদিনের ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবন ধস-ফাটল দেখা দেয়া ছাড়াও অনেকের আহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রিপোর্টাররা। তবে রাজধানীর বিভিন্ন ভবনে ফাটল বা হেলে পড়ার কথা বলা হলেও ফায়ার সার্ভিস বলছে, এগুলোর অভিযোগ সঠিক নয়। ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আতাউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, রবিবারের ভূমিকম্পে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ভবন হেলে পড়ার বা দেবে যাওয়ার ১৩টি অভিযোগ পাওয়া গেলেও তদন্ত করে দেখা গেছে অভিযোগ সঠিক নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূতাত্ত্বি¡ক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের চারদিকে ঘিরে রয়েছে ভূমিকম্প বলয়। যেখান থেকে শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্পর উৎপত্তি হচ্ছে বারবারই। তবে দূরত্বগত অবস্থানের কারণে প্রতিবারই বাংলাদেশ রক্ষা পাচ্ছে। তবে গত শনিবারের ভূমিকম্প সাধারণ মানুষের মনে বড় ধরনের নাড়া দিয়েছে। ফলে তারা বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বড় ধরনের ভূমিকম্পের জন্য দেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের ভূচ্যুতি রয়েছে। যেখান থেকে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ভয়াবহ বিপদ হয়ে যেতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ডাউকি ফল্ট থাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে আরও চারটি ফল্ট সক্রিয় রয়েছে। ভূমিকম্প মোকাবেলায় তারা এখনই সরকারকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত শনিবার ১২টা ১৪ মিনিট ২৭ সেকেন্ড সংঘটিত হয় ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প। যার উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ থেকে ৭৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নেপালের লামজুংয়ে। ওই ভূকিম্পের আঘাতে দেশটিতে ইতোমধ্যে মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। ২ হাজার লোকের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক জেলা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেখা গেছে। অনেক ভবন দেবে গেছে। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে নামার সময় আহত হয়েছেন। কিন্তু এর রেশ কাটতে না কাটতে রবিবার আরেক দফা ভূমিকম্পে দেশের সব জেলায় কম্পনের খবর পাওয়া গেছে। বারবার এভাবে ভূমিকম্পের কারণে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে রবিবার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলে এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.৭। আবাহাওয়া অফিস জানিয়েছে ঢাকা থেকে ৬শ’ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে নেপাল থেকে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীর থেকে সংঘটিত হয় বলে জানান তারা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পর সে এলাকা থেকে পরপর আরও কয়েকটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে। যেগুলো আফটার শক হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা। এ ধরনের আফটার শক বড় ভূমিকম্পের পর অন্তত দু’দিন বিভিন্ন সময়ে ঘটে। আফটার শকের তীব্রতা অপেক্ষাকৃত কম থাকে। প্রথম উৎপত্তিস্থলের আশপাশেই আফটার শকের উৎপত্তি হয়ে থাকে উল্লেখ করেন তারা। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রবিবারের ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই ভবন ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। তবে এদিনের ভূমিকম্পে দেশের কোথাও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। আগের দিনের ভূমিকম্পে কেবল নেপালেই দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি। বাংলাদেশেও মাটির দেয়ালে চাপা পড়ে, আতঙ্কে হুড়োহুড়িতে এবং ভূমিকম্পের সময় নৌকাডুবে চারজনের মৃত্য হয়। এদিকে রবিবার দুপুরে ভূমিকম্পের সময় সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে নিচে নেমে আসেন। সিঁড়ি দিয়ে গাদাগাদি করে নিচে নামতে দেখা যায়। এছাড়াও আতঙ্কে নেমে পড়েন বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। বিভিন্ন ভবন থেকে নিচে নেমে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় ৩০ মিনিট খোলা জায়গায় অপেক্ষা করে দফতরে ফিরতে দেখা যায়। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অফিস ও বাসাবাড়ি থেকে লোকজন আতঙ্কে বেরিয়ে আসে। শেরপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে সদর উপজেলার বেতমারী গ্রামের একজন নিহত ও আরও দুজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতের নাম হায়দার আলী ওরফে নান্টু। সে মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে। কুড়িগ্রাম থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে উলিপুর উপজেলার দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। হুড়োহুড়ি করে নিচে নামার সময় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। যশোর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, যশোরে একটি চারতলা ভবন হেলে পড়েছে। তবে কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। পাবনা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান ভুমিকম্পের ফলে চারতলা একটি ভবন হেলে পড়া ছাড়া সুজানগর পাইলট বয়েজ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবনির্মিত ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। মানিকগঞ্জে ভূমিকম্পের সময় একটি স্কুল ও পোশাক কারখানায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান দ্বিতীয় দফায় ভূমিকম্পের ফলে জেলায় দুটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। সুনামগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, রবিবারের ভূমিকম্পে তিন প্রাথমিক বিদ্যালয় ফাটল ও ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ঈশ্বরদী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে ইপিজেড এলাকায় একশ’ নারী শ্রমিক ও ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। রাজশাহী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই রাস্তায় নেমে আসেন। নওগাঁ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে কাপড়পট্টির বহুতল ভবনের ফাটল দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে আতঙ্কে ভবন থেকে নামার সময় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সাভার থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে দু’শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। আতঙ্কে অনেক শ্রমিক ভূমিকম্পের পর আর কাজে যোগ দেয়নি। নীলফামারী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ইপিজেড এলাকাসহ দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে ৪টি প্রতিষ্ঠানে ৭৯ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদদাতা জানান, দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে প্রশাসনিক ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। বগুড়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ভূমিকম্পের ফলে শহরের জলেশ্বরী তলায় একটি বহুতল ভবন হেলে গেছে। ফরিদপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, পরপর দুদিনের ভূমিকম্পের ফলে সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়া ঝিলটুলি মহল্লায় ১০ তলা বিশিষ্ট লাক্সারি প্যালেস হেলে পড়েছে। মুন্সীগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঠাকুরগাঁও থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে জেলার বিদ্যালয় ও বেতার কেন্দ্রের দেয়ালসহ ছাদে ফাটল দেখা দেয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকেই। নিজস্ব সংবাদদাতা মির্জাপুর থেকে জানান, দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে কুমুদিনী উইমেন্স কলেজের দুটি আবাসিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
×