ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাক ড্রাইভার রমজানের অভিমত

খালেদা পেটে লাথি মেরেছে, ড্রাইভার পুড়িয়েছে তারে ভোট দিমু না

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

খালেদা পেটে লাথি মেরেছে, ড্রাইভার পুড়িয়েছে তারে ভোট দিমু না

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এবারও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তুলনামূলকভাবে সৎ ও জনপ্রিয় প্রার্থীরা ব্যক্তি ইমেজ দেখে ভোট প্রার্থনা করলেও অধিকাংশ ভোটারের কাছে দলীয় পরিচয়ই আসল। অধিকাংশ ভোটারের প্রার্থীর প্রতীক ও তার ইমেজের চেয়ে দলীয় পরিচয়ই আসল। দলীয় পরিচয়ে প্রার্থীকে চিনলেও অনেক ভোটারের ধারণা নেই তার প্রার্থীর প্রতীক সম্পর্কে। মেয়র প্রার্থীতো বটেই কাউন্সিলর পদেও প্রার্থীদের দলীয় পরিচয়ই মুখ্য। তবে এবার নতুন ভোটার ও নারীদের কাছে দলীয় পরিচয়ের বাইরেও প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ হয়ে উঠতে পারে ভোটের নিয়ামক। নতুন ও নারী প্রার্থীরা প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজকেই প্রাধান্য দিতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। অথচ নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকি। বেশিরভাগ মার্কাই চেনে না সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। বরাবরের মতো তারা খুঁজছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী। অনেক ভোটার আবার বললেন, প্রতিদিন দফায় দফায় প্রার্থীর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি, গণমাধ্যমের অনবরত নির্বাচনী খবর আর টকশোর কারণেই নির্বাচনের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে গেছে। তবে দলের প্রার্থী অবশ্যই জিতবে এ আশাও করছেন তারা। ঢাকা উত্তরের নির্বাচনী হাওয়া সবচেয়ে গরম। এখানে আনিসুল হক, তাবিথ আউয়াল, মাহী বি চৌধুরী, জোনায়েদ সাকি, আব্দুল্লাহ আল ক্বাফীর প্রচারণায় সরগমর। সবাই একই ধরনের ইশতেহার দিয়েছেন। দু’একটি ক্ষেত্র বাদে সবার কাজের প্রতিশ্রুতির ধরনও এক। কিন্তু এ অঞ্চলে কাউন্সিলর প্রার্থীরা যতটা এগিয়েছে মাঠ পর্যায়ে, গণমাধ্যমের পূর্ণ সহায়তা নিয়েও ততটা এগিয়ে যেতে পারেননি মেয়র প্রার্থীরা। তেজগাঁও আওলাদ হোসেন সুপার মার্কেটের সামনে কথা হলো ফল বিক্রেতা আকবর হোসেনের সঙ্গে। বৃদ্ধ এ ফল বিক্রেতার কাছে ভোট দেয়ার কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলছিলেন, ‘বাবা এ বয়সেও কাজ করে খাই। কোনমতে বেঁচে আছি, ভোট দিয়ে হবে কী? তবু দিতে যামু। আমার নাতিডা আমলীগ করে। ও কইলো তাই যামু।’ যাকে ভোট দেবেন তার প্রতীক কী? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মেয়র পদে নাকি টেবিল ঘড়ি। আর কাউন্সিলর হবে মিষ্টি কুমড়া। দুজন নাকি আমলীগের। তারাই নাকি ভাল নাতি কইলো।’ মিরপুরের কাজীপাড়া-সেনপাড়া এলাকার শ্রমিকদের কয়েকজনের কাছে মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রত্যেকেই বললেন, ভাই ভোটটা দলের লোগগোই দিমু। কেউ বললেন, আওয়ামী লীগ আবার কেউ বললেন, বিএনপিকে দেবেন। প্রার্থী কে ভাল তা নিয়ে এখানও মাথাব্যথা নেই তাদের। তবে রমজান নামে এক ট্রাকচালক বললেন, খালেদা কয় মাস আমাগো পেটে লাথি মারছে। আমাগো ড্রাইভারগো পোড়াইয়া মারছে তারে আর ভোট দিমু না। ওই শ্রমিকরা প্রায় প্রত্যেকেই আনিসুল হককে চেনেন। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সম্পর্কে ধারণা নেই। ওই এলাকার বাসাবাড়িতে কাজ করেন নাসরিন। প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছে সে। তিনি বলছিলেন, কাঁটাচামচ ভাইকে (কাউন্সিলর) ভোট দেবেন তিনি। কারণ কী? প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ওই ভাই নাকি ভাল, এলাকার যারা অনেক বছর আছে তারা কইতেছে। তবে মেয়র হিসেবে কাকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে বলেন, আমার পোলা কইছে আম্মা তুমি সৎ প্রার্থীরে ভোট দিবা। আর আওয়ামী লীগ যাতে জিতে। প্রার্থী কে? জানতে চাইলে নাসরিন বলেন, নাম নাকি আনিসুল হক। সে নাকি ভাল মানুষ। প্রথম ভোটটা ভাল মানুষকেই দিতে হবে। এদিকে মোহম্মদপুর ইকবাল রোডের দারোয়ান রহমান মিয়াকে জিজ্ঞেস করলে তিনি অনেক মার্কার নাম বলতে পারলেও কোনটা কার তা বলতে পারেননি। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মিছিল ও প্রচারের হার বেশি হওয়ায় সেগুলো তিনি জানেন। কোন মেয়রকে ভোট দেবেন, জানতে চাইলে রহমান বলেন, মেয়র তো ঘড়ি, অন্যদের মার্কা তো জানি না। বাস, হাতি, ঈগল, টেলিস্কোপের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অত মার্কা জাইনা কি করুম। এদিকে মধ্যবিত্ত চাকুরে মানুষ দিনটাকে একটা সরকারী ছুটির দিন হিসেবেই দেখছেন। তাদের মধ্যে ভোটের উত্তেজনা কম। তেজগাঁও বাসা নিয়ে থাকেন শ্যামল ম-ল। চাকরি করেন একটি ব্যংকে। ভোট সম্পর্কে তিনি বলছেন, ভোট দিতে যাব কি-না এখনও ঠিক নেই। ছুটি আছে বাসায় বসে টিভি দেখবো। ইকবাল চাকরি করেন একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাকে ভোট দেবেন, জানতে চাইলে তিনি কেবল দু-তিনজন মেয়রপ্রার্থীর মার্কা বলতে পারলেন। কিন্তু কাউন্সিলরদের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। দক্ষিণের ভোটার বকশিবাজারের বাসিন্দা নাজমুল হক। নতুন ভোটার হয়েছেন তিনিও। বলছিলেন, আমি অবশ্যই ভোট দেব। নাজমুল রাজনীতি না করলেও রাজনীতি নিয়ে ভাবেন। ভাবেন দেশ নিয়ে। বলছিলেন, প্রথম ভোট দেব। কোন মৌলবাদী জঙ্গিবাদীদের ভোট দিতে পারি না। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাঈদ খোকনকে ভোট দিব। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হক তার সততা, অভিজ্ঞতা ও নগরীর নানা সমস্যা সমাধানে সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য তাকে নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। আনিসুল হক বলেন, এ নির্বাচন কোন জাতীয় নির্বাচন নয়। এটা কোন আদর্শের নির্বাচন নয়। কেননা এ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতার কোন পরিবর্তন ঘটবে না। এ নির্বাচনের মাধ্যমে নগরবাসী নানা সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে মাত্র। তিনি আরও বলেন, অভিজ্ঞতা ছাড়া এত বড় নগরীর বহুমুখী সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। এজন্য একজন সৎ ও অভিজ্ঞ মেয়র নির্বাচিত হওয়া প্রয়োজন। তার সততা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ভোটাররা তাকেই মেয়র নির্বাচিত করবেন।
×