ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আফ্রো-এশীয় সম্মেলন থেকে ফিরে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ;###;বাস পুড়িয়ে এখন তারা কোন্ মুখে বাসে ভোট চাচ্ছে ;###;৯২ দিনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে

৯২ দিনের পুড়িয়ে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ ভোলেনি মানুষ ॥ জনগণ শোধ নেবে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

৯২ দিনের পুড়িয়ে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ ভোলেনি মানুষ  ॥ জনগণ শোধ নেবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ‘খুনী ও জালেম’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, উনি (খালেদা জিয়া) যেভাবে নির্বিচারে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করলেন, তিনি আবার মানুষের কাছে ভোট চান কিভাবে? কোন্ মুখে ভোট চান? লজ্জাও তো লাগে। তাঁর মতো জালেম-খুনীর ডাকে জনগণ সাড়া দেবে না। যাদের ন্যূনতম মনুষ্যত্ব, বিবেক ও মানবিকতা রয়েছে তারা কখনই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে ভোট দেবে না, ডাকে সাড়া দেবে না। অবরোধ-হরতালের নামে উনি যেভাবে দেশের মানুষের সর্বনাশ করেছে, তাঁর ডাকে কখনই মানুষ সাড়া দিতে পারে না, দেবেও না। বরং হত্যার শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ প্রতিশোধ নিলে কার বিরুদ্ধে নেবে, সেটিও বিএনপি নেত্রীর ভেবে দেখা উচিত। রবিবার গণভবনে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এর আগে সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বক্তব্যে ও অভিযোগেরও জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে ২৮ এপ্রিল তিন সিটি নির্বাচনের ফলে সরকারের হস্তক্ষেপে কারচুপির যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি তাও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। সিটি নির্বাচনে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ‘ব্যালট বিপ্লব’ খালেদা জিয়া আশা করলেও দুটি নির্বাচনের ফারাক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত তিন মাসের নাশকতা ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে জনগণ এমনিতেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দেবে না। আর ৯২ দিন ধরে নিজেকে নিজে অবরুদ্ধ রেখে হুকুম দিয়ে বিএনপি নেত্রী যেভাবে মানুষকে হত্যা করিয়েছেন, দেশের সম্পদ বিনষ্ট করেছেন, অবশ্যই এর জন্য তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এ ছাড়া হাতেনাতে ধরা পড়া নাশকতাকারীরা ছাড়াও নেপথ্যের হুকুমদাতা, অর্থের যোগানদাতা ও চক্রান্তকারীদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। কাউকেই আমরা ছেড়ে দেব না। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। অন্যায়কারীরা কেউই রেহাই পাবে না। এদের এমন শাস্তি হতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের নাশকতা করার দুঃসাহস আর দেখাতে না পারে। সাম্প্রতিক ইন্দোনেশিয়া সফর এ নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির আন্দোলন, ২৮ এপ্রিল তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বিভিন্ন অভিযোগের জবাবই প্রাধান্য পায়। সিটি নির্বাচনের দু’দিন আগে রবিবার খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের দু’ঘণ্টার মধ্যেই গণভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন বেগম মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ এম মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. গওহর রিজভী, ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, শেখ হেলাল এমপি, আফজাল হোসেন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী, বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল ও সাইফুজ্জামান শেখর। বাস পুড়িয়ে উনি আবার বাস মার্কায় ভোট চান ॥ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তিন মাসের অবরোধ-হরতালে নাশকতায় শতাধিক মানুষের মুত্যু এবং যানবাহন পোড়ানোর চিত্র তুলে ধরে বলেন, খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে মানুষ যেভাবে পোড়াল, এমন জঘন্য কাজ বিশ্বে কোথাও কি কেউ দেখেছে? বিশ্বে কোথাও এমন জঘন্য নজির নেই। যে মানুষকে উনি পুড়িয়ে মারলেন, সেই মানুষের কাছে উনি ভোট চান কী ভাবে? হরতাল-অবরোধের নামে উনি ১ হাজার ৭৬৫টি গাড়িতে পেট্রোলবোমা মেরে পুড়িয়ে দিয়েছেন, বাসের ড্রাইভার-হেলপারকে হত্যা করেছেন, আবার উনিই (খালেদা জিয়া) বাস মার্কায় ভোট চান! কোন্ মুখে উনি বাস মার্কায় ভোট চান? তিনি বলেন, আসলে বিএনপি নেত্রী দেশের মানুষকে বোকা মনে করেন। উনি মনে করেন জনগণ তাঁকে ভোট দিয়ে আবারও জ্বালাও-পোড়াও ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার সুযোগ দেবেন। খালেদা জিয়া মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে গেছেন ॥ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই একজন সাংবাদিক খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া জানতে চান সরকার প্রধানের কাছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক সম্মেলনের নামে বিএনপি নেত্রী চমৎকারভাবে মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে গেছেন। আর উনি তো মিথ্যা বলায় পারদর্শী। এ প্রসঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের মিথ্যা ফোনালাপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া বিবৃতি প্রদানের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, উনার মিথ্যাচারের কথা কি বলব! দেশের ভেতরে তো মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন, বিদেশীদেরও ছাড় দেননি। মিথ্যা কথা উনি চমৎকারভাবেই বলতে পারেন। এসব করে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উনি ধ্বংস করেছেন। এ প্রসঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও ক্ষতি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি এক নেতার এফবিআই এজেন্টকে ভাড়া করার বিষয় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি করে এতই অর্থ-সম্পদ বানিয়েছে ও বিদেশে পাচার করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন এফবিআই সদস্যকে বিপুল অর্থকে ঘুষ দিয়েছে জয়কে অপহরণ ও ক্ষতি করতে। এ ঘটনায় মার্কিন আদালতই বিএনপির এক নেতার ছেলেকে কারাদ- দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দুর্নীতি-দুঃশাসনের চিত্র ধরে তিনি বলেন, ওই সময় হাওয়া ভবনের পাওনা না বুঝিয়ে দিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারেনি। বিএনপির নেত্রীর দুই পুত্রের অর্থ পাচারের ঘটনা মার্কিন ও সিঙ্গাপুরের আদালতে প্রমাণ হয়েছে। আমরাই প্রথম বিএনপি নেত্রীর পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত এনেছি। ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিশোধ নিলে কী হবে? ॥ সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়ার প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি কিসের প্রতিশোধের কথা বলছেন? মানুষ তাঁকে ভোট দেয়নি বলে প্রতিশোধ? একজন নেত্রী হয়ে উনি এমন কথা বলেন কী ভাবে? তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই তো বিএনপি নেত্রী জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিয়ে যাচ্ছেন। শত শত মানুষকে হত্যা করেও উনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারেননি। তিনি বলেন, অবরোধ-হরতালের নামে বিএনপি নেত্রী ১৫৭ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করলেন, এত মায়ের বুক খালি করলেন, এত বোনকে বিধবা ও সন্তানদের পিতৃহারা করলেন। ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ যদি প্রতিশোধ নেয় তবে কার বিরুদ্ধে নেবে, সেটা অন্তত বিএনপি নেত্রীকে ভেবে দেখা উচিত। তিনি বলেন, ৯২ দিন ধরে বিএনপি নেত্রী মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। নিজে হত্যা করে এখন আবার উল্টো সুরে কথা বলছেন। তিনি বলেন, ৯২ দিনব্যাপী অবরোধ-হরতালের নামে ককটেল ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করার সময় বিএনপি-জামায়াতের ৫৭৯ জন হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে বিএনপির ৩৬৩ ও জামায়াত-শিবিরের ২০৫ জন। দেশের মানুষ ওই সময় হাতেনাতে ধরে গণধোলাই দিয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীকে। উনি ৯২ দিন ধরে দেশে যে দোজখ সৃষ্টি করেছিলেন, তা দেশের মানুষ কখনই ভুলে যাবে না। তিনি বলেন, এখনও অবরোধ আছে কি না, তা কেউ জানে না। একজন নেত্রী অবরোধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে উনি দেশের মানুষের নেতৃত্ব দেবেন কী ভাবে? এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি নেত্রী মানুষ খুন করায় পারদর্শী বলেই প্রতিশোধের কথা বলতে পারেন। তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু ও শিশু রাসেল হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, আর তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, অর্থমমন্ত্রী কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপিসহ অসংখ্য মানুষ হত্যার সঙ্গে জড়িত। খুন-খারাবি করাই উনি ভাল বোঝেন। মানুষ খুন করেন উনি, আবার দায়-দায়িত্ব নাকি সরকারের! এসব কথা বলে খালেদা জিয়া মূলত দেশের মানুষের সঙ্গে তামাশা করেছেন। স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচন এক নয় ॥ খালেদা জিয়া সিটি নির্বাচনকে সরকারের জন্য ‘টেস্ট কেস’ বললেও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের তুলনা না করারই পক্ষপাতী। আর এই বক্তব্যের ক্ষেত্রে খালেদার অবস্থানকেই যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কথায় কিন্তু দ্বিমত আছে। একবার বলল- লোকাল গবর্নমেন্ট ইলেকশন, কাজেই এই ইলেকশনে তিনি পার্টিসিপেট করছেন। এখানে জনগণের মতামত ওভাবে আসবে না। এ কথা কিন্তু তাঁর নিজেরই বলা। কাজেই লোকাল গবর্নমেন্ট ইলেকশনে জনগণ ভোট দেবে, যাকে চায় তাকেই ভোট দেবে। কাজেই এই নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে কোন প্রভাব ঘটবে না। তিনি বলেন, হারজিত নির্বাচনে তো আছেই। জনগণ ভোট দিলে জিতব, না দিলে হারব। এতে আমারেদ কিছু এসে যায় না। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ নাকচ প্রধানমন্ত্রীর ॥ তিন সিটি নির্বাচনে খালেদা জিয়ার কারচুপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীল-নকশার নির্বাচন করে কী ভাবে জিততে হয় তা খালেদা জিয়ার চেয়ে আর কেউ বেশি বুঝে না। উনার স্বামী জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে প্রথমে ‘হ্যাঁ ও না’ ভোট এবং পরে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের মাধ্যমে প্রহসনের নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। ৯১ পরবর্তী খালেদা জিয়ার সময় নির্বাচনগুলো প্রহসন-জালিয়াতির কত মাত্রা ছিল তাও জনগণ ভুলে যায়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন ও ২০০১ সালের পর মাগুরা, মিরপুর ও তেজগাঁও উপনির্বাচনে ভোট ডাকাতির উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করার আগে বিএনপি নেত্রীর উচিত আগে নিজের দিকে তাকানো। আয়নায় নিজের চেহারা দেখার কথা বলব না। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ভোটে টাকা ছড়ানোর খালেদা জিয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) অর্থ নেয়াটা ভাল বোঝেন। ক্ষমতায় থাকতে অর্থ নিয়ে গেছেন। অর্থ নেয়া, বেঈমানী করাটা উনার স্বভাব। বিএনপি চেয়ারপার্সন রাজনৈতিক সমঝোতা চাওয়ার যে কথা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে আমি ফোন করেছিলাম, উনি ছয় ঘণ্টা পর ফোন ধরলেন। ফোন ধরে উনার যে কথা, আমার এই জীবনে এই রকম মুখ ঝামটা, ঝাড়ি আর খাইনি। পরবর্তীতে উনার ছেলে মারা গেল, আমি গেলাম সহানুভূতি জানাতে। আমি গেলাম, আমি নামতে পারলাম না, উনার গেটে তালা। আমাকে ঢুকতে দিল না, ভেতরে অনেক লোকজন ছিল, একটুকু ভদ্রতাও তো দেখায়নি। এত নেতা ওই সময় কার্যালয়ে ছিলেন, কেউ তো ভদ্রতা করে ভেতরে নিয়ে গিয়ে একটু বসাতেও পারতেন। এমন অভদ্র আচরণ করা হলো আমার সঙ্গে। আর সবচেয়ে বড় কথা, খালেদা জিয়ার কথা কে বিশ্বাস করবে? কিছু গণমাধ্যমের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রধানমন্ত্রীর ॥ গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তার আগে কোন প্রাইভেট চ্যানেল ছিল না। আওয়ামী লীগ দিয়েছে। কিন্তু এখন কী করা হচ্ছে? খালেদা জিয়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার চালালেও তা গণমাধ্যমে আসেনি বলে সমালোচনাও করেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারে নেমে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার ছবি সংবাদ মাধ্যমে এলেও বিএনপি চেয়ারপার্সনের নিরাপত্তাকর্মীদের গাড়ির নিচে সাধারণ মানুষের চাপা পড়া এবং খালেদার নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলি চালানোর ঘটনাগুলো না আসার সমালোচনাও করেন শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে তিনটি ছবি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ছবি তো আপনারা দেখাননি। ২০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে থাকা সিএসএফের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে সাধারণ মানুষ আহত হয়। সাধারণ মানুষ, খালেদার আগুনে স্বজনহারা মানুষ যাদের আপনজন আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে তারা যদি খালেদা জিয়াকে কালো পতাকা দেখায় আমরা কী করব। তিনি বলেন, সিএসএফ জনগণকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে। মানুষের ওপর গাড়ি তুলে দেয়। পরে জনগণ একসঙ্গে হয়ে হামলা করেছে সেটাই বড় হয়ে গেল! তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমে আমি যে উন্নয়ন করলাম সেটা গুরুত্ব পেল না। কিন্তু যিনি এত মানুষ খুন করলেন তার ছবি বড় বড় করে ছাপালেন। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্র ব্যবহার করছে কিন্তু গণমাধ্যম তা দেখায়নি। সাধারণ জনগণের ওপর সিএসএফের সদস্যরা গুলিবর্ষণ করল সেটাও দেখানো হলো না। বাসে আগুন দেয়ার সময় তো লাল কালি দিয়ে দেখাননি এটা বিএনপি নেতা, জামায়াত নেতা। কিন্তু কাওরান বাজার ঘটনা সম্পর্কে লিখলেন এটা ছাত্রলীগের, ওটা যুবলীগের। খালেদা জিয়ার অপকর্মগুলো ঢাকতেই এসব করা হচ্ছে কি না জানি না। কাওরান বাজারের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, হরতালের কারণে যাদের ব্যবসা মন্দ হয়েছে, রাস্তায় বের হতে পারেননি। তারাই খালেদা জিয়াকে কালো পতাকা দেখিয়েছেন। এ সময় নির্বাচনের আচরণবিধির কিছু অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী নির্বাচনী আচরণবিধির একটাও মানেননি। ১৯৩টি মোটরসাইকেল ও ৯৬টি গাড়ি নিয়ে উনি নির্বাচনে প্রচার চালালেন টকশো বা গণমাধ্যমে কেউ সে কথাটি তো বললেন না। অবরোধ-হরতালের নামে উনি শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মারলেন, হাজার হাজার গাড়ি ধ্বংস করলেন- সেই কথাও কেন বলেন না? ডবল স্ট্যান্ডার্ড নয়, মাল্টি স্ট্যান্ডার্ড রাজনীতি করেন খালেদা জিয়া ॥ অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ডবল স্ট্যান্ডার্ড নয়, মাল্টি স্ট্যান্ডার্ড রাজনীতি করেন। বললেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করবেন না। এখন আমার অধীনেই উনি সিটি নির্বাচন করছেন। আবার ঢাকা সিটিকে দুইভাবে বিভক্ত করার প্রতিবাদে উনি আন্দোলন এবং দু’দিনব্যাপী হরতাল করে মানুষ মারলেন। এখন আবার বিভক্ত সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেই আবার ভোট চাইছেন! এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকা অনেক বৃহৎ। শুধু দুটি নয়, কমপক্ষে চারটি অংশে বিভক্ত করলে নগরবাসীরা আরও বেশি সুবিধা পেতেন। দেশের সম্ভাব্য ভূমিকম্প নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি কী এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমিকম্প নিয়ে আমাদের সরকারের আগে তেমন কোন প্রস্তুতি ছিল না। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাঁকে প্রশ্ন করতেন, তিনি কি করেছেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরে ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ভূমিকম্প হলে তারা উদ্ধার করবে। আগে ছয় তলার বেশি ওপরে আগুন লাগলে তা নেভানো যেত না। আমরা কয়েক শ’ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনেছি। আমাদের পক্ষ থেকে যতটা করা হয়েছে, অতীতে কোন সরকার তা করেনি। এর আগে লিখিত বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নেপালের ভূমিকম্পের ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ নেপালের জনগণের পাশে আছে। এর পর জাকার্তায় অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশীয় সম্মেলনে অংশ নিয়ে দেশের পক্ষে অর্জিত সাফল্যের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
×