ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রূপালী ব্যাংকে আমূল পরিবর্তন

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

রূপালী ব্যাংকে আমূল পরিবর্তন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দিন ফিরেছে রূপালী ব্যাংকের। গ্রাহকরা আস্থা ফিরে পেয়েছে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে চলছে ব্যাংকটি। যথাসময়ে পদোন্নতি হচ্ছে। প্রতি বছরই বাড়ছে মুনাফা। শ্রেণীকৃত ঋণ হ্রাস পাচ্ছে। সরকার ও শেয়ারহোল্ডাররা নিয়মিত লভ্যাংশ পাচ্ছে। গ্রাহকসেবার মান বাড়াতে এটিএম, অনলাইনসেবা চালুসহ নতুন শাখা খোলা হচ্ছে প্রতি বছরই। মেধাবী ও দক্ষ লোকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। মোটকথা রূপালী ব্যাংকের আমূল পরিবর্তন এসেছে। এর মূল নেতৃত্বে রয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা, অভিজ্ঞ ব্যাংকার এম ফরিদ উদ্দিন। তাঁকে সামগ্রিক সহযোগিতা করছেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান হবিগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের একটি শাখা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যাংকের কথা উল্লেখ করে বলেন, রূপালী ব্যাংকের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে ইমেজ। রূপালী ব্যাংকের মূল্যায়ন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, এক সময় নিম্নমানের ব্যাংকের উদাহরণ হিসেবে রূপালী ব্যাংককে ধরা হতো। কারণ রূপালী ব্যাংকের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিন অতীতের সকল সমস্যা কাটিয়ে ব্যাংকটিকে টেনে উপরে তুলছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রায় সকল বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এখন এটি সরকারী ও বেসরকারী অন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যে কোন বিষয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারে। এছাড়া এটি বর্তমানে একটি মডেল ব্যাংকের ভূমিকা পালন করছে। যে কোন ব্যাংক এটিকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে বেছে নিতে পারে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রূপালী ব্যাংকটি প্রায় বিক্রি হওয়ার উপক্রম চলছিল। ব্যাংকের সকল ব্যবসা বন্ধ ছিল। প্রায় ৩০ বছর ধরে কোন নতুন শাখা খোলা হয়নি। লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ব্যাংকের প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা পুঞ্জীভূত লোকশান ছিল। ব্যাংকটি দিনের পর দিন লোকসান গুনছিল। কোন প্রোডাক্ট ছিল না। এনমকি নতুন কোন প্রোডাক্টও চালু করতে দেয়া হয়নি। ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী শুধু বিক্রির প্রহর গুনছিলেন। ব্যাংকের এমন এক দুর্যোগ মুহূর্তে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ৯নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা এম ফরিদ উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়ায় তিনি বিভিন্নভাবে ব্যাংকের উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় রূপালী ব্যাংকটি আজ উন্নয়নের শীর্ষে। ব্যাংকটি একটি মডেল ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। রূপালী ব্যাংকের গত তিন বছরের কর্মকা- মূল্যায়ন করলে দেখা যাবে, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে আধুনিকায়ন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, অনলাইন ব্যাংকিং, ইমেজ বৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকটি। ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। কমছে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১০ সালে ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৭৯০.২৭ কোটি টাকা। রিকভারি স্পেশালিস্ট নিয়োগ দেয়া এবং ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার ও গতিশীল করার মাধ্যমে ২০১১ সালে শ্রেণীকৃত ঋণ কমে ৩১০.৭৮ কোটি টাকা হয়। তবে ২০১২ সালে এর পরিমাণ ২ হাজার ২৬২.৭৯ টাকা হলেও ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে শ্রেণীকৃত ঋণ কমে ১০ হাজার ৫৩.৯১ কোটি টাকা হয়। ২০১৪ সালে শ্রেণীকৃত ঋণ হ্রাস পেয়ে ১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। শ্রেণীকৃত ঋণ হ্রাস পাওয়ার হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে। অথচ যেখানে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। ২০১০ সালে ব্যাংকের অর্জিত পরিচালন মুনাফার পরিমাণ ছিল ২৪৪.৬৯ কোটি টাকা। ২০১১ সালে পরিচালন মুনাফা ৪৭.১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬০.৩৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০১০ সালে রূপালী ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদান করে। এতে প্রতিষ্ঠানটি ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আসে। ২০১১ সালে ২০ শতাংশ লভাংশ ঘোষণা করা হয়। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার পরিমাণ বেড়েই চলছে। ২০১১ সালের মুনাফা ছিল ৩৬০.৩৬ টাকা টাকা। ২০১২ সালে ৩৭০.৪৬ কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালে মুনাফার এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০১৪ সালে মুনাফা হয় ২৮৩ কোটি টাকা।
×