ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বান্দরবানে নামেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল ॥ কোটি টাকার গাছ বিক্রি

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

বান্দরবানে নামেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল ॥ কোটি টাকার গাছ বিক্রি

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ২৫ এপ্রিল ॥ বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বন বিভাগের কর্মচারীদের যোগসাজশে গাছ পাচার হওয়ার কারণে নামে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থাকলেও বাস্তবে সংরক্ষিত বনের কোন অস্তিত্ব নেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান বনবিভাগের ২টি ডিভিশনের হাজার হাজার একর জমিতে শত কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারীভাবে বনায়ন করা সংরক্ষিত অধিকাংশ বাগানের মূল্যবান গাছ বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে কেটে নিয়ে গেছে চোরাকারবারি চক্র। বনায়নের চিহ্ন না থাকলেও শোভা পাচ্ছে সংরক্ষিত বনের সাইনবোর্ড। বান্দরবান বনবিভাগসহ স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বনবিভাগের ২টি ডিভিশন ১৯৮১ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানছি উপজেলায় হাজার হাজার একর পাহাড়ি জমিতে সেগুন, গামারী, চম্পা, কড়ইসহ নানা প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করে বনায়ন করেছিল। সরকারীভাবে বাগান করতে গিয়ে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে কিন্তু সেখানে এখন গাছ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। আরও জানা গেছে, বান্দরবান বনবিভাগের আওতায় বান্দরবান সদর রেঞ্জ, টংকাবতী রেঞ্জ, বেতছড়া রেঞ্জ, পাইন্দু রেঞ্জ, খেয়াচালং রেঞ্জ, রুমা রেঞ্জ, সেকদু রেঞ্জ, থানচি রেঞ্জসহ মোট ৮টি রেঞ্জ রয়েছে। বেতছড়া, ক্যসালংসহ আরও কয়েকটি রেঞ্জের শত কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা বাগানের কোন অস্তিত্ব নেই। ১৯৮১-৮২ সালের বাগানে গত দশ বছর আগেও মোটামুটি চোখে পড়ার মতো কিছু গাছ ছিল কিন্তু স্থানীয় কাঠ চোরাকারবারি চক্রের সদস্যরা রাত-দিন একইভাবে সরকারী বাগানের গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। বেতছড়া ও ক্যসালং রেঞ্জে কি পরিমাণ জায়গায় বনায়ন করা হয়েছিল সেটিরও কোন সঠিক তথ্য নেই বনবিভাগের কাছে। বান্দরবান বন বিভাগীয় কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, বেহাত হয়ে যাওয়া জমির কোন জরিপ হয়নি, তাই কি পরিমাণ জমি বেদখল হয়েছে তা বলা যাবে না। জমির কাগজপত্র ও জরিপ ছাড়া কার জায়গায় লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে সরকারী বনায়ন করা হয়েছিল, এমন প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি। জেলা শহরের বালাঘাটা এলাকার স্থানীয়রা জানান, বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার বাগমারা, জামছড়ি, আমতাপাড়া, উজিপাড়া, নাচালংপাড়া, থোয়াইংগ্যা পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে চোরাকারবারিরা। আর এসব কাঠ বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে শহরের বালাঘাটা এলাকার চড়ুইপাড়া সড়ক দিয়ে নিয়ে আসা হয়। প্রতিদিন শতাধিক ঠেলা গাড়ি বোঝাই করে এসব চোরাই কাঠ পাচার করা হলেও বন কর্মকর্তাদের কোন তৎপরতা নেই। শহরের বালাঘাটা এলাকার বাসিন্দা সুপ্রিয় চাকমা বলেন, বনের কাঠ পাচার প্রতিরোধ করবে কারা? প্রতিদিন বন কর্মচারীরা টাকা নিয়ে যায় কাঠ পাচারকারীদের কাছ থেকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে সরকারী বাগানের কোটি কোটি টাকার মূল্যবান গাছ কেটে রাতের আঁধারে পাচার করেছে চোরাকারবারিরা। সরকারী বনাঞ্চলের গাছ জেলা শহরসহ আশপাশের স’মিলে মজুদ রেখে কাগজপত্রে বৈধতা দিয়ে জোত পারমিটের আড়ালে গাড়িতে করে পাচার করা হয়েছে। ফার্নিচার ব্যবসায়ীদের কাছেও বিক্রি করা হয় চোরাই কাঠ। আরও জানা গেছে, সংরক্ষিত বন থেকে গাছ পাচারের অভিযোগে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দু’একটি মামলা করা হলেও কোন অপরাধীকে শনাক্ত করে সাজা দেয়া হয়েছে এমন নজির নেই বনবিভাগের, অন্যদিকে চলতি বছরে অবৈধ কাঠ উদ্ধারের ঘটনা নেই বললেই চলে। বান্দরবান বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পাল্পউড) মোল্লা রেজাউল করীম জানান, সরকারী বনাঞ্চলের গাছ অবৈধভাবে পাচারের কোন সুযোগ নেই, বনসম্পদ রক্ষায় সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকেন কর্মচারীরা।
×