ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যে বিচারে সময়সীমা নেই

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

যে বিচারে সময়সীমা নেই

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে ৭০ বছর আগে। সেই যুদ্ধকালে ৬০ লাখ ইহুদি হত্যা করা হয়েছে। হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয়া যুদ্ধাপরাধীদের এখনও খুঁজে খুঁজে আইনের মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯৩ বছর বয়সী এক অপরাধীর বিচার শুরু হয়েছে, আরেকজন ৮৯ বছর বয়সীকে সদ্য আটক করা হয়েছে। ইহুদি হত্যাকা-ে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে জার্মানির বিভিন্ন শহরে এখনও পোস্টার ঝুলছে। রাজধানী বার্লিনসহ বিভিন্ন নগরীতে মৃত্যুশিবিরের ভয়াবহ সাদা-কালো ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড লাগানো রয়েছে, যাতে লেখা-‘দেরি হয়েছে, তবে খুব দেরি হয়নি।’ নাৎসি সন্ধানী প্রতিষ্ঠান সিমনভিজেনথাল সেন্টারের ‘হলোকস্ট’-এ জড়িতদের সন্ধান করে বেড়াচ্ছে এখনও। গত প্রায় ৭০ বছর ধরে গ্রেফতার এড়িয়ে থাকা সন্দেহভাজনদের ধরতে সেন্টার ‘অপারেশন লাস্ট চান্স’ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। তাদের ধারণাÑএখনও ৬০ জন অভিযুক্ত বেঁচে আছে। মৃত্যুশিবির বা ভ্রাম্যমাণ মৃত্যু স্কোয়াডে কাজ করতেন এমন অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য তারা পাবেই বলে আশাবাদী। যুদ্ধকালে নৃশংসতার সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারীর জন্য ৩০ হাজার ডলার পুরস্কারও ঘোষণা রয়েছে। বয়সের কারণে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি অনুকম্পা বা করুণা দেখাতে রাজি নয়। এই দীর্ঘ সময়ে একজন নাৎসিকেও অনুতপ্ত হতে তারা দেখেনি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদরদের কেউ তাদের নারকীয় অপকর্মের জন্য ক্ষমা চায়নি বা অনুতপ্ত হয়নি। ১৯৪৪ সালে নাৎসি ক্যাম্প আউসভিৎসের প্রহরী থাকাকালে চেক বংশোদ্ভূত জোহান ব্রিয়ার নামে ৮৯ বছর বয়সী এক যুদ্ধাপরাধীকে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় গ্রেফতার শেষে আদালত জেলে পাঠায়। ১৫৮ জন ইউরোপীয় ইহুদিকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জার্মানি তাকে ফেরত পাঠাতে বলেছে বিচারের জন্য। পাশাপাশি জার্মানির একটি আদালতে মঙ্গলবার শুরু হয়েছে ৯৩ বছর বয়সী নাৎসি যুদ্ধাপরাধী অস্কার গ্র্যোয়েনিং-এর বিচার। মৃত্যুশিবির আউসভিৎসে তিন লাখ মানুষ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় আইনজীবীদের অভিযোগ, আউসভিৎস ক্যাম্পে তিন লাখ মানুষ হত্যায় সহযোগিতা করেছের অস্কার। ১৯৪৪ সালের মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে হাঙ্গেরি থেকে প্রায় সোয়া চার লাখ ইহুদিকে ওই ক্যাম্পে নিয়ে তিন লাখকে গ্যাস চেম্বারে হত্যা করা হয়। অন্যদের দাসশিবিরে পাঠানো হয়। ক্যাম্প থেকে বেঁচে যাওয়া প্রায় ৫০ জন আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন- যাদের কেউ সাক্ষী, কেউ বাদী। ওই ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। বয়স ৯৩ হলেও সাবেক অনেক নাৎসি যুদ্ধাপরাধীর মতো অতীতের পাপ অস্কারের পিছু ছাড়েনি। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কারও কারও বিচার শেষে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। বিচারের বিরোধিতায় দেশী-বিদেশী অনেকেই সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের দল দেশজুড়ে নাশকতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটিয়েও বিচার রুদ্ধ করতে পারেনি। এ ব্যাপারে জনগণের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার মুখে তা ধুলায় মিলিয়ে গেছে। গণহত্যাকারী যে দেশের হোক তার বিচার বিশ্ববাসী চায়, বাংলাদেশও।
×