ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ বিতরণ কোম্পানিতে জমা আবেদন যাচাই বাছাই শেষে ব্যবস্থা

শিল্প-কারখানায় দ্রুত নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

শিল্প-কারখানায় দ্রুত নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ শিল্প কারখানায় দ্রুতই নতুন গ্যাস সংযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। শিল্পে নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির জন্য দুই হাজার আবেদন জমা পড়েছে। পাঁচটি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কাছে করা আবেদন বিবেচনায় নিয়ে এসব সংযোগ দেয়া হবে। সরকার গঠিত পর্যালোচনা কমিটি আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে কোন্ কোন্ আবেদনকারীকে এখনই গ্যাস দেয়া প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হয়েছে। জানতে চাইলে জ্বালানি সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, আবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। যেসব আবেদনকারীর এখনই গ্যাসের প্রয়োজন, তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংযোগ দেয়া হবে। এখন আমাদের দৈনিক প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। নতুন সংযোগ দিতে হলে প্রত্যেক দিন অন্তত আরও ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হবে। কাজেই ইচ্ছা থাকলেও সকলকে আমরা গ্যাস সংযোগ দিতে পারবো না। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক বৈঠকে শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন শিল্প সংযোগের আবেদনগুলো যাচাই বাছাই করে পর্যালোচনা কমিটি। মাঠ পর্যায়ে শিল্প উদ্যোক্তাদের বিষয়ে খবরও নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের দুটি কপির একটি উপদেষ্টা অন্যটি প্রতিমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। গ্যাস সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে ওই প্রতিবেদনকে সব থেকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বলে জানাগেছে। এখন দেশে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি, কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি, বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি নামে ছয়টি কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল এবং সুন্দরবনে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে তুলনামূলকভাবে আবেদনের পরিমাণ কম। সব থেকে বেশি আবেদন জমা পড়েছে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে। তীব্র গ্যাস সঙ্কট সামাল দিতে ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে সিলেট অঞ্চল ছাড়া সারাদেশে নতুন শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিল্পে সংযোগ দিতে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে। পরবর্তীসময়ে নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালে প্রায় ২০০ শিল্পে সংযোগ দেয়া হয়। যদিও এর আগের তিন বছরে দেয়া হয়েছে মাত্র ৪৫ শিল্প সংযোগ। নির্বাচনের পর নতুন সংযোগ এবং লোডবৃদ্ধির আবেদন নিয়ে আর কাজ করা হয়নি। এখন শিল্পে মালিকদের অনুরোধে আবারও শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে। জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, পর্যালোচনার পর মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে কাদের এখনই গ্যাসের প্রয়োজন রয়েছে। এখন এ বিষয়ে পরবর্তী বৈঠকে গ্যাস সংযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও দ্রুত ওই বৈঠক হবে বলে আশা করেন তিনি। সেক্ষেত্রে মে অথবা জুনে শিল্প উদ্যোক্তারা নতুন গ্যাস সংযোগ পেতে পারেন। গত ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুত-জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিভাগে অফিস করার সময় দ্রুত শিল্পে গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুত বিভাগে এক বৈঠকে দেশের সকল শিল্প কারখানায় বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এখন গ্যাস সংযোগ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশে দৈনিক তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চাহিদার বিপরীতে গত বৃহস্পতিবার উত্তোলন করা হয়েছে দুই হাজার ৫২২ মিলিয়ন ঘনফুট। প্রতি দিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের ঘাটতি সামাল দেয়ার জন্য গ্রীষ্মে সারকারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। সব থেকে বড় বিতরণ কোম্পানি তিতাসে দৈনিক ঘাটতি রয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। নতুন আবেদনের অধিকাংশই তিতাসের আওতাধীন রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় করা হয়েছে। এজন্য তিতাসের জন্য গ্যাসের বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে চাহিদার অর্ধেক গ্যাস ঢাকা থেকে সরবরাহ করা হয়। সেখানকার গ্রাহকদের নতুন সংযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ওই এলাকায় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো গ্যাস ঘাটতিতে প্রায় বন্ধ রাখতে হয়। জ্বালানি বিভাগ বলছে বিবিয়ানা ও তিতাস থেকে কিছু অতিরিক্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা ঘাটতি মেটাচ্ছে নিতান্ত স্বল্প পরিমাণের। তবে সরকার এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রাথমিক চুক্তি করেছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ শেষ হলে ঘাটতি অনেকটাই কমে আসবে। তখন দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।
×